‘গায়েবি’ মামলার আসামিদের তালিকা দিল বিএনপি

বিএনপি গত এক মাসে ‘কাল্পনিক’ মামলার আসামিদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে মৃত, অসুস্থ ও হজে যাওয়া ব্যক্তিদের নাম রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Oct 2018, 07:40 AM
Updated : 18 Oct 2018, 11:17 AM

রোববার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই তালিকা প্রকাশ করে বলেন, “মৃত, অসুস্থ, বিদেশে অবস্থানরত ও হজে থাকা বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলার, আসামিদের একটি তালিকা আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।

“এই যে অসুস্থ, মৃত ব্যক্তিদের লাশ, তারা কবর থেকে উঠে এসে বা হাসপাতালের বেড থেকে উঠে এসে পুলিশকে ঢিল মেরেছে তার একটি তালিকা আমরা দিচ্ছি। এই তালিকা দেখে হাসি তামাশার খোরাক উৎপাদনকারী পুলিশের কর্মকাণ্ড স্পষ্ট হয়ে উঠবে।”

বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া আসামির তালিকায় দীর্ঘদিন গুরুতর অসুস্থ স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের নাম রয়েছে।

বিএনপি সরকারের এক সময়ের তথ্য ও পরিবেশমন্ত্রী তরিকুল দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতা ও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। বর্তমানে তিনি অ্যাপেলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

তাকে পল্টন, খিলগাঁও এবং মতিঝিল থানার একাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে। 

তালিকায় সিঙ্গাপুর ও ভারতে চিকিৎসার জন্য অবস্থানরত নেতাদের মধ্যে গাজীপুরের কাজী স্যায়েদুল আলম বাবুল, অ্যাডভোকেট মুনির হোসেন, শ্রীপুরের সিরাজ কাইয়া, বগুড়ার আবদুল খালেক, কুষ্টিয়ার অধ্যাপক হারুনুর রশীদ, দৌলতপুরের রেজাউল করীম,  মীরপুরের ইব্রাহিম মালিথার নামও রয়েছে ‘গায়েবি’ মামলার আসামি হিসেবে।

এছাড়া ২০১৬ সালের মে মাসে মারা যাওয়া ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর মো. আজিজুল্লাহ, ২০১৮ সালের ৩১ অগাস্ট মারা যাওয়া কামরাঙ্গীচরের সহসভাপতি নুরুল ইসলাম, ২০১৬ সালের জুলাইতে মারা যাওয়া মহানগর নেতা মিন্টু কুমার দাস, ২০১৪ সালে মারা যাওয়া কাফরুল থানার সাবেক সভাপতি আলী আজগর মাতব্বর, ১৯৯৮ সালের ৩১ জানুয়ারি মারা যাওয়া দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের দাইয়ান মুন্সি, ২০১৭ সালে ডিসেম্বর মারা যাওয়া কুষ্টিয়ার হরিনারায়ণপুর ওয়ার্ড সভাপতি আরব আলী, ২০১৬ সালে মারা যাওয়া কুষ্টিয়ার কুমারখালীর নেতা কাশেম শেখ, ২০০৪ সালে মারা যাওয়া ঝিনাইদহের নেতা শাহ জামাল, ২০১০ সালে মারা যাওয়া হবিগঞ্জের নেতা শামসুল হক, কামাল মিয়া প্রমুখও ‘গায়েবি’ মামলার আসামি হয়েছেন।

আসামির তালিকায় হজ পালনে সৌদি আরব থাকা নেতাকর্মীদের নামও রয়েছে। এদের মধ্যে আছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের খতিবুর  রহমান, ফেনীর ছাগলনাইয়ার আজাদ হোসেন, বগুড়ার শাহজাহানপুরের খায়রুল বাশার, গাজীপুরের ভিপি ইব্রাহিম।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ১ অক্টোবর গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা যুবদল কর্মী মো. জাবেদের বিরুদ্ধে পাঁচদিন পর ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সদর থানায় তিনটি  মামলা হয়েছে।

বিদেশে চাকরি করা কয়েকজনকেও আসামি করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জাননো হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকার কাফরুলের সাব্বির আহমেদ জনি দেওয়ান ও বগুড়ার ধনুটের রুবেল হোসেন যারা মালয়েশিয়ায় এবং গাবতলীর সাইফুল ইসলাম, যিনি সৌদি আরবে কর্মরত।

রিজভী জানান, ১ সেপ্টেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত সারাদেশ থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চার হাজার ১৮২টি মামলা দায়ের হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে চার হাজার ৯৭৬ জনকে।

‘গায়েবি’ এসব মামলায় জ্ঞাত ৮৮ হাজার ৭৭১ জনকে এবং অজ্ঞাত ২ লাখ ৭৭ হাজার ৮০৭ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

গত বৃহস্পতিবার হাই কোর্ট প্রাঙ্গন থেকে সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মহানগর পূর্ব ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম নয়নকে তুলে নেওয়ার পর থেকে তার কোনো সন্ধান না পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে তাকে জনসমক্ষে হাজির করার দাবি জানান রিজভী।

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, বেলাল আহমেদ, শামসুজ্জামান সুরুজ, মুস্তাফিজুল করীম মজুমদার, শাহজাহান সম্রাট, জাহেদুল কবির জাহিদ, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।