কামাল হোসেন চুক্তির শর্ত ভেঙেছেন: বি চৌধুরী

গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া গঠনের চুক্তির শর্ত ভেঙেছেন বলে অভিযোগ করেছেন আরেক এই প্রক্রিয়ার আরেক উদ্যোক্তা বিকল্প ধারার প্রধান এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2018, 04:01 PM
Updated : 13 Oct 2018, 05:48 PM

শনিবার সন্ধ্যায় বারিধারার বাসায় সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমি কঠোরভাবে বলতে চাই, ড. কামাল হোসেন চুক্তির শর্ত ভেঙেছেন।”

বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা আসার আধা ঘণ্টার মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বি চৌধুরী।

স্বাধীনতাবিরোধীদের ঐক্য প্রক্রিয়াতে যুক্ত না করা ও জাতীয় সংসদে কোনো দলকে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে না দেওয়ার যে দুটি শর্তে রাজি হয়েছিলেন তারা দুজনে, এখন বিএনপিকে ডেকে এনে কামাল হোসেন সে শর্ত মানতে চাইছেন না বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাকালীন এই মহাসচিব বলেন, “আমরা যখন বিএনপি করেছি, তখন তা ছিল মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দল। এখন যে বিএনপি আছে, সেটাকে আমি বলি বর্তমান বিএনপি। তারা স্বাধীনতার স্বপক্ষের দল থেকে সরে এসেছে। আমি স্পষ্টভাবে বলেছি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ঐতিহ্যের যারা বিরোধিতা করবে, তাদের সঙ্গে ঐক্য হতে পারে না।

“কিন্তু এখন সেটা যদি কামাল হোসেন না শোনেন, তার দায়দায়িত্ব আমি নিতে পারব না।”

শনিবার জাতীয় ঐক্যের এক রূপরেখা প্রণয়ণের আগে এ বিষয়ে কামাল হোসেন বা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার কোনো নেতা তার সাথে আলোচনা করেননি বলেও জানান তিনি।

বিকালে ‘দাওয়াত নিয়ে’ কামাল হোসেনের বাড়িতে গিয়েও সাক্ষাৎ না পাওয়ার অভিযোগ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, “আলোচনার জন্য আমাকে দাওয়াত দেওয়া হল। আমি  দাওয়াত কবুল করে বললাম যাব। বলতে লজ্জা লাগে। আমি অভিযোগ দিচ্ছি না। এটা ভদ্রতার ব্যাপার।ড. কামাল হোসেন আমাকে একটা কল দিতে পারতেন...

“এতে হয় কি! কিন্তু এতে হয় কি, আপনার আমার মধ্যে যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিল, তাতে একটুখানি সন্দেহ হয়। ব্যাপারটা কি ? এটা কি পরিকল্পিত? এটা কি সুপরিকল্পিত... কুপরিকল্পিত না অন্য কিছু? সন্দেহ জাগবে না? ”

বি চৌধুরীরা যখন ফিরে আসছিলেন, ড. কামাল হোসেন তার মতিঝিলের চেম্বারে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুলদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন।

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিএনপির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বি চৌধুরী জানান, গত এক বছর আগে থেকেই এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ রয়েছে। সরকার পতনের লক্ষ্যে তাদের দাবি দাওয়ার সঙ্গে বিএনপির দাবি দাওয়ার সঙ্গতি নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে তাদের কথা রয়েছে।

‘হতাশ’ বি চৌধুরী বলেন, “আমি এখনও জাতীয় ঐক্য চাই।  আমি আশা ধরে রেখেছি।”

তার শর্ত যদি বিএনপি মানতে রাজি না হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “নতুন করে ভাবতে হবে।”

এসময় তার ছেলে মাহি বি চৌধুরী বলেন, “স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে পরোক্ষভাবে যে ঐক্যের প্রচেষ্টা চলছে, তার সাথে বিকল্পধারার কোনো সম্পর্ক নাই।”

দেশে গণতন্ত্রের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীন দল ও তাদের মিত্র শক্তিগুলোর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য দেখতে চান বলে জানান বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

নিজের এই ‘শেষ ইচ্ছার’ কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন,  “আজকে যে স্বেচ্ছাচারী সরকারি দলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি, তাতে নাকি ১৪টি দল আছে। অথচ ১৪টি দলের মধ্যে একটি দলের নেতাকর্মী ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধেই যত অভিযোগ। এখানে একবার মেজরিটি পেলে দ্য এবসোলিউটলি কিল দ্য ডেমোক্রেসি।

“ব্যালেন্স অব পলিটিক্স থাকতে হলে, দেখতে হবে কোনো দল যেন ১৫০ এর বেশি আসন না পায়। তারপর মিত্রদের থাকবে আরো ৩০টির মতো আসন। তাহলে মিত্রদের চাপে তারা স্বেচ্ছাচারিতা করতে পারত না। দেশটা অন্যরকমভাবে শাসন করা যেত।”

“সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা চিরকালের মতো দূর করতে হলে একটা ভারসাম্যের রাজনীতি আনতে হবে। এটা আমার শেষ বয়সের শেষ স্বপ্ন,” বলেন বিকল্পধারা চেয়ারম্যান।