আদালতের পর্যবেক্ষণ নিয়ে ফখরুলের প্রশ্ন

একুশে অগাস্ট গ্রেনেড মামলার রায়ে আদালতের দেওয়া পর্যবেক্ষণ ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক বক্তব্যের সঙ্গে ‘হুবহু মিলে গেছে’ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাদের কাছে ওই পর্যবেক্ষণ ‘গ্রহণযোগ্য নয়’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2018, 10:30 AM
Updated : 12 Oct 2018, 10:30 AM

তবে বিচারক তার পর্যবেক্ষণে বিরোধী দলের প্রতি ক্ষমতাসীনদের প্রত্যাশিত আচরণ সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা ‘মান্য করতে’ সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার ঢাকার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, “আদালতের পর্যবেক্ষণের যে খবর প্রচারিত হয়েছে, তাতে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক বক্তব্যের হুবহু প্রতিফলন দেখে দেশের জনগণের মত আমরাও বিস্মিত হয়েছি।”

তিনি বলেন- “রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় হামলা হয়েছে- আদালতের এমন পর্যবেক্ষণ যুক্তিগ্রাহ্য কিংবা গ্রহণযোগ্য নয়।”

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন; আহত হন কয়েকশ নেতাকর্মী। সেদিন অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও আজকের প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বুধবার ওই মামলার রায়ে ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।

আর খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

এছাড়া এ মামলার আসামি ১১ পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যারা আলামত নষ্ট করা, মিথ্যা তথ্য দেওয়ার মত অপরাধে জড়িত ছিলেন।

বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন তার পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায়’ ওই হামলা ছিল একটি দলকে ‘নেতৃত্বশূন্য করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা’।

এ মামলার রায়ে তারেক রহমানের সাজা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা মনে করি, মুফতি হান্নানের বেআইনি দ্বিতীয় জবানবন্দি বাদ দিলে জনাব তারেক রহমান ও অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিকে এ মামলায় অভিযুক্ত করা যেতে না।

“যৌক্তিক কারণে এই কথা বলা যায় যে মুফতি হান্নানকে দিয়ে জোর করে জবানবন্দিতে স্বাক্ষর নেওয়ার বিষয়টি যাতে তিনি প্রকাশ্য আদালতে বলতে না পারেন, সেজন্যই অন্য একটি মামলায় দ্রুততার সাথে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। আদালতের পর্যবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টির উল্লেখ না থাকাও বিস্ময়কর ও সন্দেহমূলক।”

হুজি নেতা মুফতি হান্নান জবানবন্দি প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “তারপরও ওই জবানবন্দির ভিত্তিতে তারেক রহমান এবং অন্যান্য নেতাকে অভিযুক্ত করে শাস্তি দেয়া কতটা মানবিক ও যুক্তিযুক্ত কিংবা আইনসঙ্গত হয়েছে তা উচ্চ আদালত বিবেচনা করবে বলে আমরা আশা করি।”

তিনি বলেন, ২১ অগাস্ট হামলার সময় বিএনপি সরকারে ছিল বলে তার দায় যদি রাষ্ট্রযন্ত্রকে দেওয়া হয়, তাহলে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, হলি আর্টিজান হামলাসহ সব জঙ্গি হামলার দায় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের ওপরই বর্তায়।

এ মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেছেন, “গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ক্ষমতায় যে দলই থাকবেন, বিরোধী দলের প্রতি তাদের উদার নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকতে হবে। বিরোধী দলীয় নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক ফায়দা অর্জন করা মোটেই গণতান্ত্রিক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ নয়।”

এ বিষয়টি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “রায়ের পর্যবেক্ষণে বিরোধী দলের প্রতি সরকার ও সরকারি দলের প্রত্যাশিত আচরণ সম্পর্কে যেসব বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে, তা বর্তমান সরকারি দলের আচরণের ঠিক বিপরীত। আমরা আশা করব, সরকার আদালতের এসব পর্যবেক্ষণ মান্য করবে।”

নয়া পল্টনে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন উপস্থিত ছিলেন।