কুমিল্লার মামলায় খালেদার জামিন আবেদনের শুনানি ফের রোববার

কুমিল্লায় পেট্রোল বোমা মেরে আট বাসযাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি করতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে শেষবারের মত সময় দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2018, 02:08 PM
Updated : 11 Oct 2018, 02:09 PM

এ মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি করবেন জনিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশিরুল্লাহ দ্বিতীয় দফা সময় চাইলে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার বিষয়টি শুনানির জন্য রাখে।

বিচারক আদেশে বলে, “শেষবারের মত সময় দিলাম। ওই দিন অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানি না করলে আদেশ দিয়ে দেব।”

খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী কায়সার কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বুধবার আবেদনের পক্ষে শুনানি শেষ করেছি আমরা। এজে মোহাম্মদ অলী সাহেব শুনানি করেছেন। গতকালই রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি হতে পারত।

“কিন্তু ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাহেব বললেন যে, মাননীয় অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানি করবেন। আদালত আজ শুনানির জন্য রেখেছিলেন। কিন্তু আজও অ্যাটর্নি জেনারেলের পক্ষ থেকে সময় চাওয়া হয়েছে। আমরা এর বিরোধিতা করলে আদালত শেষবারের মত সময় দিয়ে রোববার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি রেখেছে।” 

খালেদা জিয়াকে হয়রানি করতেই অ্যাটর্নি জেনারেল ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ কালক্ষেপণ করছেন এবং শুনানি করবেন বলে বারবার সময় নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন কায়সার কামাল।

বিএনপির টানা অবরোধ-হরতালের মধ্যে ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের জগমোহনপুর এলাকায় একটি নৈশকোচে পেট্রোল বোমা হামলায় আট যাত্রীর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা করে পুলিশ।

পরে পুলিশের আবেদনে বিস্ফোরক আইনের মামলাটি বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় রূপান্তর করা হয়।

এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজার রায়ের পর গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। ওই মামলায় তিনি জামিন পেলেও আরও কয়েকটি মামলার কারণে তার মুক্তি হচ্ছে না।

কড়া নিরাপত্তার মধ্যে শনিবার বিকালে পুরান ঢাকার কারাগার থেকে শাহবাগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে আনা হয় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

এ কারণে বিশেষ ক্ষমতা আইনের এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জামিনের আবেদন করা হয়েছিল কুমিল্লার আদালতে।

গত ১ জুলাই কুমিল্লার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক কে এম শামছুল আলম খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখালেও জামিনের বিষয়ে কোনো আদেশ না দিয়ে আবেদনটি ৮ অগাস্ট শুনানির জন্য রেখে দেন।

এরপর গত ১১ জুলাই হাই কোর্টে ফৌজদারি আপিলের পাশাপাশি হাই কোর্টে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। হাই কোর্ট কুমিল্লার আদালতের জামিন আবেদনটি ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেয়।

গত ২৫ জুলাই কুমিল্লার আদালত খালেদার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করলে ২৯ জুলাই ফের হাই কোর্টে তার জামিন আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে ৬ অগাস্ট খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জামিন দেয় বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

রাষ্ট্রপক্ষ ওই জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে গেলে চেম্বার বিচারপতি কোনো আদেশ না দিয়ে বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।

এর ধারাবাহিকতায় গত ১২ আগস্ট আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে নো অর্ডার দিলেও জামিন প্রশ্নে হাই কোর্টের দেওয়া রুল চার সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলে।

পরে হাই কোর্ট রুল নিষ্পত্তি করে বিচারিক আদালতে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনটি সাত দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়। কুমিল্লার বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ গোলাম মাহাবুব খান গত ১৩ সেপ্টেম্বর জামিন নাকচ করলে ২ অক্টোবর খালেদার আইনজীবীরা হাই কোর্টে আবেদন করেন।