ফখরুলের কাছে অনেক প্রশ্ন কাদেরের

একুশের অগাস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার রায়কে ‘ফরমায়েশি’ বলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে অনেকগুলো প্রশ্ন রেখে তার জবাব চেয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2018, 11:27 AM
Updated : 11 Oct 2018, 12:01 PM

বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত মামলাটির রায়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যাবজ্জীবন সাজা হওয়ায় তা প্রত্যাখ্যান করে ফখরুল বলেছিলেন, এই রায় সরকারের ‘ফরমায়েশে’ হয়েছে।

একদিন পর বৃহস্পতিবার তার কথার প্রসঙ্গ টেনে কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “১৪ বছর পর রায় হয়েছে। ফখরুল সাহেব যা ইচ্ছে তাই বলছেন। সাংবাদিক বন্ধুরা আপনারাই বলুন, এই রায় কি ফরমায়েশি রায়? বাংলাদেশে বিবেক আছে, এমন একজন মানুষ কি বলবে এই রায় ফরমায়েশি?

“একটা ভবঘুরে ছেলেকে রাস্তা থেকে ধরে এনে জজ মিয়া নাটক সাজানো হল। ইতিহাস কি বলে এটা ফরমায়েশি রায়?

“২৪ জনের প্রাণ চলে গেছে। এটা ফরমায়েশি রায়?

“প্রধান টার্গেট শেখ হাসিনা একটা কানের শ্রবণ শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। এটা কি ফরমায়েশি রায়?

“মুফতি হান্নান নিজেই বলেছে, তারেক রহমানের নির্দেশ নিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। এটা কি ফরমায়েশি রায়?

“খুনি তাজউদ্দিনকে নিরাপদে বিদেশে পাঠানো হল। এটা কি ফরমায়েশি রায়?

“তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী (খালেদা জিয়া) নিজে, তিনি কি দায় এড়াতে পারেন? এটা কি ফরমায়েশি রায়?

“যে গ্রেনেডগুলো অবিস্ফোরিত ছিল, সেগুলো কেন ধ্বংস করা হল? কে ক্ষমতায় ছিল? এটা কি ফরমায়েশি রায়?”

“ক্ষমতায় আপনারা, আলামত নষ্ট হল কেমন করে। হামলাকারীরা প্রকাশ্যে দিবালোকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেল কেমন করে? বলুন? জবাব দেন,” তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী ফখরুলের উদ্দেশে বলেন কাদের।

এই হামলা নিয়ে তখন বিচারপতি জয়নাল অবেদীনের তদন্ত প্রতিবেদন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত এবং কয়েকশ আহত হন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করেই হয়েছিল ওই হামলা।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ওই হামলার পর তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়েছিল।

রায়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। খালেদার জিয়ার ছেলে তারেকসহ ১৯ জনের হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

রায়ে আদালত বলেছে, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের উপর এই হামলা চালানো হয়েছিল।

ওই হামলায় আহত কাদের বলেন, “আমি এখনও নামাজের সেজদা দিতে পারি না। অনেকে আছে যারা হুইল চেয়ার ছাড়া চলতে পারে না।”

একুশে অগাস্টের খুনি হিসেবে দণ্ডিতদের দলের সঙ্গে কামাল হোসেন ও  এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর জোট বাঁধার বিষয়টি তুলে তাদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন করেন কাদের।

“যারা কথায় কথায় নৈতিকতার কথা বলেন, খুনিদের সঙ্গে জাতীয় ঐক্য করবেন! এই জাতীয় ঐক্যে জনগণ কোনো দিনও বিশ্বাস করবে না, সমর্থন করবে না।”

ঢাকার রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সড়ক পরিবহন অধিদপ্তরের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের।

বিএনপির ভূমিকায় জাতি হতাশ: হানিফ

একুশে অগাস্ট হামলার রায় প্রত্যাখ্যানে ‘জাতি হতাশ হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ।

বৃহস্প‌তিবার গুলশানে লেইক ‌শোর হো‌টে‌লে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “শুরু থেকেই বিএনপি মিথ্যাচার করে আসছে। গ্রেনেড হামলার পর পার্লামেন্টে একটা নিন্দা প্রস্তাব পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়নি, এমনকি খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ভ্যানেটি ব্যাগে করে নাকি আমাদের নেত্রী গ্রেনেড নিয়ে গেছেন। এ রকম নিষ্ঠুর রসিকতা করেছে বিএনপি।

“১৪ বছর পরে এই মামলার রায় হয়েছে। এই রায়ের পরে মির্জা ফখরুল সাহেব যে এই রায়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন, এতে আমরা হতাশ হয়েছি। জাতি আশা করেছিল, মির্জা ফখরুল সাহেব ও বিএনপি নেতারা ভুল স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে সুস্থ রাজনৈতিক ধারায় ফিরে আসবে। কিন্তু এই রায় প্রত্যাখ্যানের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছে, তারা এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল।”

তারেক রহমানের সমালোচনা করে হানিফ বলেন, “বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান নিজেই ১৯ বার ক্যু এর নাম করে দেখে দেখে মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁসি দিয়েছিল। জিয়াউর রহমানের পরে আজকে যারা বিএনপির দায়িত্বে আছে এর মধ্যে তারেক রহমান বহুবার সন্ত্রাসী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছে।”

নাগরিক সমাজের প্রতি হানিফ বলেন, “আমাদের সিভিল সোসাইটির যারা আছেন, আমাদের শিক্ষক, সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, অনেকেই নিজেকে নিরপেক্ষ প্রমাণের জন্য ওই শক্তির পক্ষ নিয়ে কথা বলেছিলেন।

“এই রায়ের মধ্য দিয়ে বিএনপি একটা সন্ত্রাসী দল, হত্যা-খুনের দল হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এই দলটিকে আর বৈধতা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”

অশিকুর রহমানের পরিচালনায় এই আ‌লোচনা সভায় বক্তব্য রা‌খেন অধিকারকর্মী খু‌শি ক‌বির, সু‌চিন্তা ফাউ‌ন্ডেশ‌নের চেয়ারম্যান এ আরাফাত, একাত্তর টি‌ভির সিইও মোজাম্মেল বাবু, ঢাকা বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ের শিক্ষক সে‌লিম মাহমুদ।