এই সরকারের আইন মানি না: ফখরুল

সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান সরকারের কোনো আইন তারা ‘মানেন না’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2018, 11:44 AM
Updated : 8 Oct 2018, 01:29 PM

আলোচিত-সমালোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলে সোমবার স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ; এর মধ্য দিয়ে আইনটি কার্যকর হল।

শুরু থেকে আইনটির সমালোচনা করে আসা বিএনপির মহাসচিব দুপুরে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বলেন, “আজকের এই আইন (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) আমরা মানি না। আমরা এই সরকারের কোনো আইন মানি না।

“কারণ যে সংসদে আইন পাস হয়, সেই সংসদের কোনো বৈধতা নেই। এই সংসদ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না, অবৈধ একটা সংসদ।”

বিএনপির বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। ভোট বর্জনকারী বিএনপির নেতারা এই সরকারকে ‘অবৈধ’ বলে আসছেন।

বর্তমান সরকার নানা ‘কালো আইন’ করে ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইছে দাবি করে ফখরুল বলেন, “এই আইন আরও কালো। এই আইনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এই সরকারকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন।”

দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে বিএনপি মহাসচিব সরকারের উদ্দেশে বলেন, “এখনও সময় আছে, অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করুন। তিনিই পারেন আপনাদের এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দিতে। এছাড়া কোনো উপায় নেই আপনাদের।”

শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের জন্য আলোচনায় আসতেও সরকারকে আহ্বান জানান তিনি।

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সুরক্ষায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের কথা সরকার বললেও এই আইনের কয়েকটি ধারার সমালোচনা করে সাংবাদিক ও অধিকারকর্মীরা বলছেন, এতে মত প্রকাশের অধিকার খর্ব হবে। আলোচিত এই আইন নিয়ে গুলশানে লেইক শোর হোটেলে সোমবার বিএনপি একটি মতবিনিময় সভা করে, তাতে স্বাগত বক্তব্য দেন ফখরুল।

সভায় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, চীন, ইউরোপীয় ইউনয়ন, আফগানিস্তান, প্যালেস্টাইন, রাশিয়া, তুরস্ক, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পাদক পরিষদকে আশ্বস্ত করার পরও আইনটি করার ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারকে ‘প্রতারক’ আখ্যায়িত করেন ফখরুল।  

“কয়েকদিন আগেই এডিটরদের সঙ্গে বসে কথা দিলেন যে, আইনের যে ধারাগুলো আছে আপত্তি বিষয়ক, তা আমরা আলোচনা করে পুনঃবিবেচনা করার চেষ্টা করব। উনি (প্রধানমন্ত্রী) তো বিদেশ থেকে এসে বলে ফেললেন- না না, যেটা আছে ঠিক আছে, যারা মিথ্যা কথা বলে তাদের জন্য।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে যেভাবে ঢালাওভাবে ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে, এটা পরিষ্কার যে এখানে সরকার একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এটাই মূল কথা। এর চেয়ে কালো আইন কী হতে পারে?  

“আমি মনে করি, এটা বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের নিরাপত্তার জন্য এই আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে। এই আইন করা হয়েছেই মুখ বন্ধ করার জন্য। আমি বলতে চাই, এর পরিণতি শুভ হবে না।”

সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, “দেশে কথা বলাটা বিপদ। কথা বললে সত্য প্রকাশ হয়ে যাবে। সরকার চায় না মানুষ কথা বলুক। পৃথিবীর সব দেশে রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করা হয়। কিন্তু আমাদের সরকার এটাও চায় না, কারণ তাদের এত গন্ধ যে কথা বললে আরও গন্ধ ছড়াবে।”

সাপ্তাহিক হলিডের সম্পাদক সৈয়দ কামালউদ্দিন বলেন, “এই আইনটি করা হয়েছেন সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য। যাতে সরকারি দলের প্রতিপক্ষদের আরও বেশি করে ঘায়েল করা যায়, হয়রানি করা হয়। আমি মনে করি এই আইন স্বাধীন সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে চরম প্রতিবন্ধকতা ‍সৃষ্টি করেছে।”

ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, “যখন সরকার ৫৭ ধারায়  নির্যাতন-অত্যাচার করে যখন দেখল কাঙ্ক্ষিত নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, তখনই এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি করা হল।

“এর মাধ্যমে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকেই শুধু নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি, গোটা দেশের মানুষের মৌলিক অধিকারকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়েছে।”

এই আইনের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সমাজের আন্দোলনের কথা তুলে ধরে তাতে সবার সহযোগিতা চান রুহুল গাজী।

ফখরুল বলেন, “জনগণকে জিম্মি করে, বন্দি করে, তাদের বুকের মধ্যে বন্দুক-পিস্তল রেখে দিয়ে দেশ শাসন কিছুদিনের জন্য করা যায়, সবসময়ের জন্য করা যায় না।

“হতাশ হবেন না। আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাব। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত, জনগণের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত, দেশনেত্রী মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত।”

জাতীয় ঐক্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ শুরু করেছি। আজকে প্রতিটি কর্নার থেকে আওয়াজ আসছে-সবাই রুখে দাঁড়ান, এই যে জগদ্দল পাথর সরান।”

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় এই মতবিনিময় সভায় নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, বাংলাদেশের খবরের উপদেষ্টা সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহউদ্দিন, ইনকিলাবের রেজাউর রহমান সোহাগ, মেহেদি হাসান পলাশ, ইনডিপেন্ডেট টেলিভিশনের আশীষ সৈকত, আমার দেশের সৈয়দ আবদাল আহমেদ, জাহেদ চৌধুরী, কলামনিস্ট হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ, রেডিও টুডের ইমামুল হক শামীম, শীর্ষ নিউজের একরামুল হক, দৈনিক সমকালের লোটন একরাম, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গনি চৌধুরী, শহীদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের ইলিয়াস খান, এসএ টিভির ইলিয়াস হোসেন, ল‘ রিপোর্টার্স ফোরামের সাঈদ আহমেদ খান বক্তব্য রাখেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন আহমেদও বক্তব্য রাখেন সভায়।

বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ, রুহুল আলম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনও।

বিএনপি নেতা আবদুল মান্নান, আহমেদ আজম খান, আমানউল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, খায়রুল কবির খোকন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শামা ওবায়েদ, কামরুজ্জামান রতন, ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, নাজিমউদ্দিন আলম, জেবা খান, আবদুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আমিরুজ্জামান শিমুল, শামসুজ্জামান সুরুজ, শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার সভায় উপস্থিত ছিলেন।