অভিন্ন কর্মসূচিতে বিএনপির ‘সঙ্গে নামবে’ জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া

সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অভিন্ন কর্মসূচিতে নামতে একমত হওয়ার কথা জানিয়েছেন বিএনপি ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2018, 06:16 PM
Updated : 7 Oct 2018, 06:31 PM

রোববার রাতে গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বাসায় দুই পক্ষের শীর্ষনেতাদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠকে বিকল্প ধারা সভাপতি ও যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী কিংবা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন ছিলেন না।

উপস্থিত ছিলেন যুক্তফ্রন্টের সদস্য সচিব ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জোট শরিক জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিকল্প ধারার মহাসচিব এম এ মান্নান।

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমীনের সঙ্গে গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী ও মোস্তফা মহসিন মন্টু ছিলেন দেড় ঘণ্টার এই বৈঠকে।

তারা ছাড়াও বৈঠকে ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মো. মনসুর ও আ স ম আবদুর রবের স্ত্রী তানিয়া রব।

বিএনপি নেতাদের মধ্যে মোশাররফ ছাড়াও ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর বি চৌধুরীর বাড়িতে বিএনপির প্রতিনিধিকে নিয়ে বৈঠকে দলটিকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ছাড়ার শর্ত দেওয়া হয়েছিল বিকল্প ধারার পক্ষ থেকে। এরপর বিএনপি স্পষ্ট কিছু না জানালেও জামায়াতকে নিয়েই নিজেদের ২০ দলীয় জোটের বৈঠক করেছিল।

তারপরই রোববারের বৈঠক থেকে তারা সবাই একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে অভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হল।

বৈঠক শেষে রব সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা বিএনপির সাথে ঐক্য করেছি। আগামী দিনে যে কোনো কর্মসূচি আমরা যুগপৎভাবে একসঙ্গে পালন করব। সেটা ঢাকা হোক, কিংবা ঢাকার বাইরে হোক।

“নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে আমরা যে ৫ দফা দিয়েছি, তার সাথে আজকের বৈঠকে সবাই ঐকমত্যে পৌঁছেছি। আমরা আগামীতে আন্দোলনের কর্মসূচি ঠিক করব একসাথে বসেই।”

সাংবাদিকদের প্রশ্নে সরাসরি উত্তর না দিয়ে রব বলেন, “স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে বাইরে রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দেশের সকল অসাম্প্রদায়িক শক্তি, গণতন্ত্রমনা, প্রগতিশীল সকল শক্তির সমন্বয়ে আমরা দেশে একটি  বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আজকের বৈঠকে তা আরও স্পষ্ট হল।”

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার পক্ষ থেকে বি চৌধুরী ও কামাল হোসেন ৫ দফা দেওয়ার পর বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া হয় সাত দফা।

তাদের বেশিরভাগ দাবিই একই রকম; শুধু বিএনপির দাবির মধ্যে তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি আলাদাভাবে রয়েছে।

রব বলেন, “মূল মামলায় জামিনের পরও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কেন জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছে, আমরা জানি না।

“আমরা নির্বাচনের আগে অবশ্যই সকল রাজবন্দিদের মুক্তি চাই, কোটা আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন  ও গায়েবি মামলায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।”

এর আগের বৈঠকগুলো জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া কিংবা যুক্তফ্রন্ট নেতাদের বাড়িতে হলেও এই প্রথম বিএনপির কোনো নেতার বাড়িতে সভা করলেন তারা।

বৈঠকের পর বিএনপি নেতা মওদুদ সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ সুষ্ঠু নির্বাচনের ৫ দফা দাবির বিষয়ে একমত হয়েছি। আগামীতে এই দাবিতে সরকারকে বাধ্য করতে আমরা এক সঙ্গে আন্দোলনের কর্মসূচি দেব।”

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া কিংবা বিএনপির সব দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, সংবিধানের কোনো পরিবর্তন না ঘটিয়েই একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে।

অর্থাৎ নির্বাচনের সময় শেখ হাসিনাই ক্ষমতায় থাকবেন; তবে তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না বলে দাবি করছে বিএনপিসহ এই দলগুলোর নেতারা।