খালেদাকে বিএসএমএমইউতে স্থানান্তরের তোড়জোড়

কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তরের তোড়জোড় চলছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2018, 06:00 AM
Updated : 6 Oct 2018, 10:19 AM

শনিবারই বিএনপি চেয়ারপারসনকে হাসপাতালটিতে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএসএমএমইউর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন।

তিনি সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনাকে আজকেই আনা হবে বলে কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে। আমরাও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।”

পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের বাইরে কোনো তৎপরতা সকালে চোখে না পড়লেও দুপুর থেকে প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে।

কারা কর্মকর্তারা বলেছেন, বিকালে খালেদাকে হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে তাদের।

চকবাজার থানার ওসি শামীমুর রহমান তালুকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেলা ৩টার সময় তাকে হাসপপাতালে নেওয়া হবে।”

দুপুর থেকে কারা ফটকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। ফটকের সামনে আনা হয় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। র‌্যাবের গাড়িকেও দেখা যায় ঘন ঘন টহল দিতে।

কারাগার সংলগ্ন মাক্কুশা মাজারের সামনে, বকশীবাজার মোড়ে পুলিশের অবস্থান রয়েছে। ওই এলাকায় গাড়ি চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

ডিএমপির চকবাজার জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুপুর ১২টা থেকে আমার ডিউটি এখানে।”

খালেদা বিএসএমএমইউতে যেতে রাজি কি না- জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “এখন পর্যন্ত পজিটিভ।”

পরিত্যক্ত এই কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে রয়েছেন ৭৩ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। জিয়া এতিমখানা দুর্নীতির মামলায় গত ফেব্রুয়ারিতে রায়ের পর থেকে তিনি বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন।

কারাগারে যাওয়ার পর গত এপ্রিল মাসে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য একবার তাকে বিএসএমএমইউতে নেওয়া হয়েছিল।

এরপর তার অসুস্থতার কথা জানিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থানান্তরের দাবি উঠলেও সরকারের পক্ষ থেকে বিএসএমএমইউতে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।

তবে বিএনপি যেমন এই প্রস্তাবে রাজি হচ্ছিল না, তেমনি খালেদা জিয়াও সেখানে যেতে অসম্মতি দেখিয়েছিলেন বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানায়।

গত বৃহস্পতিবার হাই কোর্ট বিএসএমএমইউতে ভর্তির আদেশ দিলে তাতে রাজি হওয়ার আভাস আসে খালেদার অন্যতম আইনজীবী ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনের কথায়।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ম্যাডামের অবস্থা খুবই খারাপ। আদালত দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আদেশ দিয়েছেন।”

খালেদার চিকিৎসা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। বিএনপির দাবি, তাদের নেত্রীকে সুচিকিৎসা দিতে চাইছে না সরকার। অন্যদিকে সরকারের ভাষ্য, তার চিকিৎসা নিয়ে ‘রাজনীতি’ করছে বিএনপি।  

খালেদার পক্ষে তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিশেষ বোর্ড গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন হয়েছিল।

গত ৭ এপ্রিল বিএসএমএমইউতে খালেদা জিয়া (ফাইল ছবি)

তাতে বৃহস্পতিবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ দ্রুত ঢাকার বিএসএমএমইউতে খালেদাকে ভর্তি এবং তার চিকিৎসায় গঠিত পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড পুনর্গঠনের নির্দেশও দেয়।

খালেদার চিকিৎসায় গত সেপ্টেম্বরে সরকার যে মেডিকেল গঠন করে দিয়েছিল, তার তিন সদস্যকে বাদ দিয়ে নতুন তিনজনকে সেখানে দায়িত্ব দিতে বলেছে আদালত।

হাই কোর্টের আদেশ অনুযায়ী, বিএসএমএমইউর ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল জলিল চৌধুরী এবং ফিজিকাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বদরুন্নেসা আহমেদ বোর্ডে থাকবেন।

আর কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক হারিসুল হক, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক আবু জাফর চৌধুরী এবং চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারেক রেজা আলীর বদলে নতুন তিনজনকে বোর্ডের সদস্য হিসেবে মনোনীত করে দেবে সরকার।

তবে এই তিনজনের কেউ কেন্দ্রীয় বা জেলা পর্যায়ে সরকারসমর্থক স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) বা বিএনপি সমর্থক ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) বর্তমান বা প্রাক্তন সদস্য কিংবা সমর্থক হতে পারবেন না।

হাই কোর্ট বলেছে, এই বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়া তার পছন্দমত ফিজিওথেরাপিস্ট, গাইনোলজিস্ট ও টেকনিশিয়ান নিতে পারবেন। বোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনতে পারবেন।