বিএসএমএমইউতেই যাচ্ছেন খালেদা

হাই কোর্টের নির্দেশের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালেই নেওয়া হচ্ছে খালেদা জিয়াকে এবং এতে তার আইনজীবীদের আপত্তি নেই।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Oct 2018, 07:27 PM
Updated : 4 Oct 2018, 07:27 PM

বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম আইনজীবী ও দলের যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন বৃহস্পতিবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আদালতের আদেশ বিশেষ বার্তা প্রেরকের মাধ্যমে রাতেই কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। আশা করছি, শুক্রবারই উনাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্য়ালয় হাসপাতালে নেওয়া হবে।”

৭৩ বছর বয়সী খালেদাকে এর আগে বিএসএমএমইউতে সরকার নিতে চাইলেও তিনি রাজি হননি। তার দল বিএনপিও তাতে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল।

এখন সিদ্ধান্ত বদলের কারণ এবং খালেদা এতে রাজি হয়েছেন কি না- জানতে চাইলে খোকন বলেন, “ম্যাডামের অবস্থা খুবই খারাপ। আদালত দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আদেশ দিয়েছেন।”

দুর্নীতি মামলার সাজায় কারাগারে থাকা খালেদার পক্ষে তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিশেষ বোর্ড গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন হয়েছিল।

তাতে বৃহস্পতিবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ দ্রুত ঢাকার বিএসএমএমইউতে খালেদাকে ভর্তি এবং তার চিকিৎসায় গঠিত পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড পুনর্গঠনের নির্দেশও দেয়।

খালেদার চিকিৎসায় গত সেপ্টেম্বরে সরকার যে মেডিকেল গঠন করে দিয়েছিল, তার তিন সদস্যকে বাদ দিয়ে নতুন তিনজনকে সেখানে দায়িত্ব দিতে বলেছে আদালত।

হাই কোর্টের আদেশ অনুযায়ী, বিএসএমএমইউর ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল জলিল চৌধুরী এবং ফিজিকাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বদরুন্নেসা আহমেদ বোর্ডে থাকবেন।

আর কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক হারিসুল হক, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক আবু জাফর চৌধুরী এবং চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারেক রেজা আলীর বদলে নতুন তিনজনকে বোর্ডের সদস্য হিসেবে মনোনীত করে দেবে সরকার।

তবে এই তিনজনের কেউ কেন্দ্রীয় বা জেলা পর্যায়ে সরকারসমর্থক স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) বা বিএনপি সমর্থক ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) বর্তমান বা প্রাক্তন সদস্য কিংবা সমর্থক হতে পারবেন না।

হাই কোর্ট বলেছে, এই বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়া তার পছন্দমত ফিজিওথেরাপিস্ট, গাইনোলজিস্ট ও টেকনিশিয়ান নিতে পারবেন। বোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনতে পারবেন।

গত ৭ এপ্রিল বিএসএমএমইউতে খালেদা জিয়া (ফাইল ছবি)

খালেদা জিয়াকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি এবং ভর্তি করা মাত্র তার চিকিৎসা শুরুর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন এ জে মোহাম্মদ আলী, মওদুদ আহমদ, জয়নুল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, কায়সার কামাল, এ কে এম এহসানুর রহমান ও মুজিবুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।

গত ফেব্রুয়ারিতে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের দণ্ড ঘোষণার পর থেকে খালেদা বন্দি। পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারের একমাত্র বন্দি হিসেবে রয়েছেন তিনি।

কারাগারে যাওয়ার পর এপ্রিল মাসে একবার তাকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিএসএমএমইউতে নেওয়া হয়েছিল। এরপর তাকে আর দেখা যায়নি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলটির একটি প্রতিনিধি দল গত ৯ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে দেখা করে তাদের নেত্রীর স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে এসেছিল।

এরপর সরকার ওই মেডিকেল বোর্ড গঠন করে দেয়। ওই বোর্ডের সদস্যরা কারাগারে গিয়ে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নতুন করে ‘গুরুতর কিছু’ পায়নি বলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন সে সময় সাংবাদিকদের জানান।

ওই মেডিকেল বোর্ড নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসা বিএনপি নেতারা সে সময় অভিযোগ তোলেন, সরকারের ‘পছন্দ অনুযায়ী’ প্রতিবেদন তৈরির পরিকল্পনা থেকে ‘অনুগত ও পছন্দের লোকদের’ দিয়ে ওই মেডিকেল বোর্ড করা হয়েছে।