কোটা বাতিলে সরকারের ‘দ্বিচারিতা’ দেখছে বিএনপি

১ম ও ২য় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল নিয়ে সরকারের দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলে তার বাস্তবায়ন হবে কিনা সেবিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Oct 2018, 07:50 AM
Updated : 4 Oct 2018, 10:55 AM

বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ সংশয় প্রকাশ করেন।

রিজভী বলেন, “আন্দোলনকারী তরুণ ছাত্র-ছাত্রীরা কখনো কোটা বাতিল চায়নি; তারপরেও সিদ্ধান্ত হয়েছে কোটা তুলে নেওয়ার। আবার এদিকে ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান-নাতি-নাতনীদেরকেও নামিয়ে দেওয়া হয়েছে, উপজাতীয়দের নামিয়ে দেওয়া হয়েছে- এটা দ্বিচারিতা।

“আল্টিমেটলি এই যে কোটা সংস্কারের আন্দোলন তারা বাস্তবায়িত হতে দেবে না।”

কোটা বহাল রাখার দাবিতে শাহবাগে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান-সন্ততিদের বিক্ষোভের প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, “প্রধানমন্ত্রীই বলেছেন আন্দোলন করো। এখন মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান-সন্ততিদের বসিয়েছেন। সরকার প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েই তাদের বসিয়েছেন। তাহলে আপনি বুঝতে পারছেন কত দুরভিসন্ধিমূলকভাবে এই কাজটি করছে। এজন্যই বলেছি দ্বিচারিতা।

“সরকার এটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে এবং উদ্দেশ্য এটাকে বিভ্রান্ত করা। এটা যাতে বাস্তবায়িত না হয় সরকারই এই কাজগুলো করছে।”

প্রধানমন্ত্রীকে ‘দ্বিচারিতা’ পথ থেকে সরে আসার আহবানও জানিয়েছেন তিনি।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “উনি কেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যাপারে এত উৎসাহী? কেন পুলিশকে লাগামছাড়া লাইসেন্স দিয়েছেন পত্রিকায় অফিসে ঢুকে কাগজপত্র সিজ করার এবং গ্রেপ্তার করার- কেন এত উৎসাহী। অন্য গণতান্ত্রিক দেশে এই ধরনের কোনো দৃষ্টান্ত নেই।”

রিজভী বলেন, “কেউ মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করলে তার জন্য প্রচলিত আইনই আছে। প্রধানমন্ত্রী কালকে নিজেও বিসিসির একটি ঘটনার উল্লেখ করেন। মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করার জন্য তারা সবাই রিজাইন দিয়েছে, সেখানে প্রচালিত আইনই আছে। যিনি মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করেন তিনি ক্ষমা চান, প্রয়োজনে রিজাইন করেন। কিন্তু শেখ হাসিনার দেশে নিয়ম তো তা থাকবে না। এখানে সত্য প্রকাশ করলেই তাকে বিপদে পড়তে হবে।”

তিনি বলেন, “ভোট দেওয়ার অধিকার- এটা হচ্ছে ভোটারদের; এটা সত্য জিনিস। এই অধিকার এখন ভোটারদের নেই। সাংবাদিকদের সেটা প্রকাশ করার কোনো অধিকার থাকবে না। সেই অধিকার বন্ধ করার জন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। অর্থাৎ এই সরকারের দুর্নীতি, মেগা দুর্নীতি যাতে প্রকাশ করা না হয় সেজন্য এই আইন করা হয়েছে।

“হল-মার্কের যে অনুসন্ধানী রিপোর্ট বলুন, ব্যাংকের অর্থ লোপাটের নিউজ বলুন এইগুলো কি মিথ্যা ছিল? মিথ্যা ছিল না। সেগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে বলে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) খুব ব্যথিত। আরো যেসব মহাদুর্নীতি আছে যার সাথে মহা শক্তিশালীরা জড়িত তা যাতে প্রকাশ না পায় সেজন্যই সরকারের এই আইন। জনগণের কণ্ঠস্বরকে বন্ধ করার জন্য উনি কফিনের শেষ পেরেকটি ঠোকার কাজটি করেছেন। ”

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন থেকে বুধবার সারাদেশে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশের কর্মসূচিতে ঠাকুরগাঁও, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, মুন্সিগঞ্জ, ফেনী ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশি হামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা জানান রিজভী।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, আবদুল বারী ড্য্যানি, জেডএম মূতর্জা চৌধুরী তুলা এসময় সেখানে ছিলেন।