কামাল-বি চৌধুরীর পাশে বিএনপি

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে সরকারের মনোযোগ পেতে ব্যর্থ বিএনপির নেতারা কামাল হোসেন ও একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে আন্দোলনে আশা দেখছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2018, 05:05 PM
Updated : 22 Sept 2018, 05:32 PM

একাদশ সংসদ নির্বাচনের তোড়জোড়ের মধ্যে কামাল হোসেন ও বি চৌধুরী নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ পাঁচটি দাবি তুলে তার সমর্থনে শনিবার নাগরিক সমাবেশ করেন।

ঢাকার গুলিস্তানে ওই সমাবেশে জোট শরিক বেশ কয়েকটি দলের নেতাদের নিয়ে যোগ দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।

সমাবেশ মঞ্চে বি চৌধুরী ও কামাল হোসেনের পাশেই বসেন ফখরুল, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মওদুদ আহমদ।  

ফখরুল বলেন, “চরম দুর্দিনে যখন জাতি একটা মুক্তির পথ খুঁজছে, তখন ড. কামাল হোসেন পথ দেখিয়ে জনগণকে সামনে নিয়ে আসছেন, সেজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ এক মঞ্চে উপস্থিত হয়েছে, তাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই।”

হাতে হাত রেখে এক যোগে আন্দোলনের কথা জানালেন বিএনপি ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা

দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি সংসদ ভেঙে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পাশাপাশি তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও জানিয়ে আসছে। কিন্তু তাদের কোনো দাবিতে সরকার গা করছে না।

দাবি পূরণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে বাধ্য করতে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের নির্দেশনা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন কারাগার থেকে বার্তা পাঠিয়েছেন বলে জানান ফখরুল।

তিনি বলেন, কারাগারে  যাওয়ার আগে খালেদা জিয়া বলে গিয়েছিলেন, ‘দেশকে বাঁচাতে হলে জাতীয় ঐক্য ছাড়া কোনো বিকল্প নাই’।

“দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে একটা স্যাঁতস্যাঁতে পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। তার সুচিকিৎসা হচ্ছে না। তার যে মৌলিক অধিকারগুলো রয়েছে, তা থেকে তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

“তারপরও তিনি সেই কারাগার থেকে আমাদেরকে খবর পাঠিয়েছেন, যে কোনো মূল্যে জাতীয় ঐক্য তৈরি করে এই দুঃশাসনকে সরাতে হবে। তিনি বলেছেন, ‘আমার কী হবে না হবে, সেটা ভাবার দরকার নেই’।”

দেশের মানুষ এখন সরকারের পতন দেখতে চায় দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই সভার মধ্য দিয়ে আমরা একধাপ এগিয়ে গেছি ঐক্যের পথে। আমরা আশা করব, তাদের (বি চৌধুরী ও কামাল) নেতৃত্বে অতিদ্রুত আমরা সেই ঐক্যকে অর্জন করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ বলেন, “আজকে জাতীয় ঐক্য অত্যন্ত প্রয়োজন। আসুন দলমত নির্বিশেষে সকল জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাই এবং দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ বলেন, “এই স্বৈরাচারী সরকারকে অপসারণ করা  সম্ভবপর হবে না জাতীয় ঐক্য ছাড়া। সেই প্রক্রিয়ায় আজকে নেতৃবৃন্দ এখানে এসেছেন। আজকের দিন বাংলাদেশে রাজনীতির জন্য একটি নতুন মাইলফলক, একটি নতুন যাত্রা শুরু হলো।

“আশা করি, এই  ঐক্য প্রক্রিয়া আরও সুসংহত হবে। আজকে ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের কাছে আমরা যেটা আশা করব, এই ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে আপনারা যৌথভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেন, আমরা আপনাদের সাথে আছি এবং থাকব।”

সমাবেশে ইসলামী ঐক্যজোট নেতার পাশে মাহমুদুর রহমান মান্না

এই সমাবেশে বি চৌধুরী নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের সদস্য সচিব ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না নিজেদের ঘোষিত ৫ দফা দাবির সঙ্গে বিএনপির দাবির সমরূপতা তুলে ধরে তাদের সঙ্গে নিয়েই আন্দোলনের কথা বলেন।

তিনি বলেন, “এখানে বিএনপির নেতারা আছে। আমি দেখেছি শেষ পর্যন্ত তারা ১৫ দফা দাবির কথা বলেছেন, যেটা আমাদের দাবির সাথে প্রায় মিলে যায়। তাই এই ঐক্য তো হয়েই গেছে। লাখো-কোটি জনতা এই ঐক্য চায়। কারও ক্ষমতা নাই এই ঐক্য, এই ঐক্যের শক্তি, এই বিজয়কে রুখতে পারে।”

যৌথ আন্দোলনের প্রসঙ্গে মান্না বলেন, “আমরা কর্মসূচি দিয়েছি। উনাদের (বিএনপি) কর্মসূচি আমরা দেখিছি। আমরা যৌথভাবে সারাদেশের মানুষের সামনে আসব। দেশের মানুষের কাছে আমাদের একটাই বক্তব্য ভোটের অধিকার, মৌলিক অধিকার, নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবার জন্য আমরা এক হয়েছি।“

বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, “আজকে যে দাবিগুলো এসেছে প্রায় সমস্ত দাবি একই। প্রধান দাবি হচ্ছে, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং নির্বাচনকালীন একটা নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে, নির্বাচনের সময়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং ইভিএম কোনোমতেই এই নির্বাচনে প্রয়োগ করা যাবে না।

“আমি আজকে জাতীয় নেতৃবৃন্দের কাছে এই আহ্বান জানাব, আসুন আমরা ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই দাবিগুলো আদায় করার জন্য আন্দোলন শুরু করি।”

এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার আশাও প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।

ফখরুলের বক্তব্যের সময় জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশ থেকে ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ স্লোগানও ওঠে।

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ঘোষণাপত্রে খালেদা জিয়ার বন্দিত্বের বিষয়টিও আসে।

এতে বলা হয়, ন্যায় বিচারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে অগ্রাহ্য, ব্যাহত ও অকার্যকর করে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আইনগত ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশের প্রধান অতিথি যুক্তফ্রন্ট ও বিকল্পধারা সভাপতি বি চৌধুরী বিএনপি চেয়ারপারসনের নাম উল্লেখ না করে রাজবন্দিদের মুক্তি দাবি করেন।

আ স ম রবকে মাঝে রেখে কথা বলছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও খন্দকার মোশাররফ হোসেন

সমাবেশে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি ও যুক্তফ্রন্টের নেতা আ স ম আবদুর রব বলেন, “সরকারকে বলছি, কোনো রাজবন্দিকে কারাগারে রাখতে পারবেন না। সবাইকে মুক্তি দিতে হবে।”

সমাবেশে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক ইসলামী ঐক্য জোটের নেতা নুর হোসেইন কাসেমী ও বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বক্তব্য রাখেন।

ফখরুলসহ তারা সবাই জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের সঙ্গে হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে একসঙ্গে কাজ করার প্রকাশ ঘটান।

বিএনপির জোট শরিক দলের নেতাদের মধ্যে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, আহসান হাবিব লিংকন, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, খেলাফত মজলিশের মজিবুর রহমান, আহমেদ আবদুল কাদের, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার খোন্দকার লুৎফর রহমান, আসাদুর রহমান খান, জমিয়তের উলামায়ে ইসলামের আবদুর রব ইউসুফী।

বিএনপি সমর্থক পেশাজীবী নেতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মইনুল হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে মঞ্চে বিএনপি ও তাদের জোট শরিক দলের নেতারা

জাতীয় ঐক্যের সমাবেশে বিএনপি ও তাদের জোট শরিকদের অংশগ্রহণের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এটা সাম্প্রদায়িক ঐক্য হয়েছে।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এর আগে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ৫ দফা বিএনপি-জামায়াতের দাবির ‘ফটোকপি’।

ফখরুল সরকারের দমন-পীড়নের সমালোচনা করে বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে ৭৮ হাজার মামলা দেওয়া হয়েছে ইতোপূর্বে। গত ১৮ দিনে আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা হচ্ছে ৩ হাজার ৭৭৬, ৭৯ হাজার মানুষের বিরুদ্ধে, অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে তিন লক্ষ মানুষকে।

“আজকে যদি এই সরকারকে সরিয়ে দিতে পারি, জনগণের সরকার যদি প্রতিষ্ঠা করতে না পারি, জনগণের ঐক্যের সরকার যদি প্রতিষ্ঠা করতে না পারি, তাহলে এই দেশের যে স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতাও থাকবে না। জনগণ তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।”