‘ভৌতিক মামলাকে’ নির্বাচনের পথে বাধা মনে করেন ফখরুল

দমনপীড়ন বন্ধ করে ‘সোজা পথে’ না আসলে ক্ষমতাসীনদের একদিন মানুষের অধিকার হরণের অপরাধে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2018, 11:23 AM
Updated : 21 Sept 2018, 11:23 AM

শুক্রবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ‘হাজার হাজার ভৌতিক মামলা’ দায়েরের সমালোচনা বলেছেন, এটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

ফখরুল বলেন, “আমরা আবারো আহ্বান জানাচ্ছি, এই অত্যাচার-নির্যাতন-নির্মমতা, পাশবিকতা-অমানবিকতা পরিহার করে সোজা পথে আসুন। একাত্তর সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে গণতন্ত্রের জন্য যে আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল তা বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কথা বলে একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য, সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য একটা পথ বের করার উদ্যোগ গ্রহণ করুন।

“অন্যথায় জাতি আপনাদের ক্ষমা করবে না, এদেশের মানুষ আপনাদের ক্ষমা করবে না। আপনাদের এই অপরাধের জন্যে- সংবিধানকে লঙ্ঘন করা, মানুষের অধিকার হরণ করার অপরাধে আপনাদের অবশ্যই একদিন না একদিন কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।”

সরকারের দমন-পীড়নের ব্যাপকতা বুঝাতে তিনি সারাদেশে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।

“গত ১ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ভৌতিক মামলার সংখ্যা ৩ হাজার ৭৩৬, মোট এজহারভুক্ত আসামির সংখ্যা ৩ লাখ ১৩ হাজার ১৩০, অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা দুই লাখ ৩৩ হাজার ৭৩০ এবং এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে ৩ হাজার ৬৯০।  

“আমরা মনে করি এটাই (ভৌতিক মামলা) সবচেয়ে বড় একটা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য। যে দলটি সবচেয়ে বড় বিরোধী দল, যে দলটির প্রতিটি এলাকায় শাখা-প্রশাখা রয়েছে, যে দলটি গণতন্ত্রকে পুণঃপ্রতিষ্ঠা করার ইতিহাস রয়েছে, সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাস রয়েছে, যে দলটি তিন বার রাষ্ট্র পরিচালনা ও দুই বার বিরোধীদলের দায়িত্ব পালনের ইতিহাস রয়েছে আজকে সেই দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে গোটা নির্বাচনকে অনিশ্চিত করে ফেলেছে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “কোনো দেশে নির্বাচনের তিন মাস আগে এভাবে গণগ্রেপ্তার, গণমামলা চলতে থাকে- একটা দেশ দেখান আপনারা আমাদেরকে। সবচাইতে স্বৈরতান্ত্রিক যে দেশ সেখানেও এভাবে মামলা রজ্জু করা হয় না, জনগণ যাতে নির্বাচন না আসে তার ব্যবস্থা করা হয় না।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়ার স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা সাহিদা রফিক (চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা তাজমেরী এস ইসলাম, একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আলমগীর হোসেন প্রমুখের বিরুদ্ধে ‘ভৌতিক মামলার’ কথা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

“সমাজের মধ্যে যারা গুরুত্বপূর্ণ, চাকরি-বাকরি করেন, ব্যবসা-বাণিজ্য করেন, যাদের কখনো মিছিলে মিটিংয়ে কোথাও দেখা যায় না, এসব মানুষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনলেও অবাক হতে হয়। তারা নাকি ককটেল-টকটেল ফাটিয়েছেন, পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছেন।”

তিনি প্রম্ণ রেখে বলেন, “১ সেপ্টেম্বর থেকে সারা বাংলাদেশে আপনারা কোনো বিস্ফোরনের আওয়াজ শুনছেন, কোনো ককেটেলের আওয়াজ শুনেছেন? কোথাও কোনো পত্রিকায় এসেছে যে, কোথাও ককটেল ফুটেছে? সদাশয় সরকারের অত্যন্ত যোগ্য পুলিশবাহিনী তারা এই ধরনের মামলা রজ্জু করে নাম-ঠিকানা, চৌদ্দ গোষ্ঠিসহ স্ত্রীর নামে পর্যন্ত। কত বড় সুদূরপ্রসারি চক্রান্ত, যাতে এই নির্বাচনে বিরোধীদল অংশ গ্রহণ করতে না পারে, জনগণ অংশগ্রহণ করতে না পারে।”

সম্প্রতি সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেরও সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “এই আইনে বলা হচ্ছে যে, যদি কেউ বিনা অনুমতিতে কোনো সরকারি অফিসে বা বেসরকারি অফিসে যান এবং কোনো তথ্য সংগ্রহ করে সেটার সাজা হচ্ছে ১৪ বছর জেল ও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা।

“এই হচ্ছে গণতন্ত্র, সাংবাদিকদের প্রেস ফ্রিডম। কী বলব? আমরা কোথায় যাব কার কাছে যাব?”

‘নিরপেক্ষ তদারকি সরকার’ গঠনের দাবিতে বৃহস্পতিবার বাম গণতান্ত্রিক জোটের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিপেটার নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব।

সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, রফিকুল ইসলাম মিয়া, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুল কাইয়ুম, অধ্যাপিকা সাহিদা রফিক, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।