সিনহার লেখায় প্রমাণ হল, বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রিত: নজরুল

বিচার বিভাগের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছে বিএনপি; পদত্যাগী প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার লেখাকে এখন সেই অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে দেখাচ্ছেন দলটির নেতারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2018, 11:52 AM
Updated : 20 Sept 2018, 11:54 AM

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর সরকারের সমালোচনার মুখে থাকা বিচারপতি সিনহা গত বছরের শেষ ভাগে ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে  দিয়ে ছিলেন।

বিদেশে থেকেই এক বইয়ে তিনি লিখেছেন, তাকে হুমকির মুখে পদত্যাগে বাধ্য করে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে।

তার বইয়ের বিস্ফোরক বক্তব্য নিয়ে আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা অনুষ্ঠানেও এ প্রসঙ্গে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

তিনি বলেন, “উনি অনেক কথা লিখেছেন। সেই সব কথা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রমাণ করে না। প্রমাণ করে যে, প্রশাসন অর্থাৎ সরকার ও তার অন্যান্য বিভাগ বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করছে।”

দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমানের মামলা নিয়ে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে আসছেন, বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না।

তার জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন, বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবেই কাজ করছে, তার উপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।

বিচারপতি সিনহার অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তিনি সাবেক হওয়ার অন্তর্জ্বালায় বই লিখে মনগড়া কথা বলছেন।

নজরুল বলেন, “আইন অনুযায়ী বিচার বিভাগ প্রশাসনের অধীনে নয়। কিন্তু বাস্তবে অবস্থা কী? নিম্ন আদালতের এক বিচারক তারেক রহমান সাহেবকে খালাস দিয়েছিলেন, তিনি দেশে থাকতে পারেননি। সর্বোচ্চ আদালতে প্রধান বিচারপতিসহ সব বিচারপতিরা একমত হয়ে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করলেন। সেই রায়ে কিছু মন্তব্য করার জন্য প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ এবং দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে।

“তার অর্থ কী? বিরোধী রাজনৈতিক দল থাকতে পারবে না, স্বাধীন মিডিয়া থাকতে পারবে না, স্বাধীন বিচার বিভাগ থাকতে পারবে না। তাহলে গণতন্ত্র থাকবে কী করে?”

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিচারপতি সিনহার বইয়ের প্রসঙ্গ তুলে খালেদা ও তারেকের ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, “এস কে সিনহার বক্তব্যে আরও পরিষ্কার হল, বন্দুকের নলের মুখে বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে নিয়েই সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজানো মামলায় রায় দিয়ে কারাবন্দি করে এক নম্বর মিশন কার্যকর করার পর এখন দুই নম্বর মিশন কার্যকর করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২১ অগাস্টের মামলায় রায় দিতে যাচ্ছে।”

“রায় প্রকাশের আগেই সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা বলছেন, এই রায় প্রকাশিত হওয়ার পর বিএনপি বিপাকে পড়বে। তার মানে সরকার জানে কী রায় হতে যাচ্ছে অথবা সরকারই ২১ অগাস্ট মামলার রায় লিখে দিচ্ছে। এই মামলা নিয়ে ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখা হবে কি না, তা নিয়ে এখন জনমনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।”

প্রেস ক্লাবের আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্যে নজরুল সরকারকে ‘নিয়মতান্ত্রিক পথে’ আসার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “জনগণ চায়, বেগম খালেদা জিয়া বেরিয়ে আসুন। তার নেতৃত্বে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটা সুষ্ঠু নিবার্চন হোক।

“সরকার এই দাবি না মানলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন হবে। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার যদি নিয়মতান্ত্রিক পথে না হাঁটে, যদি জনগণের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন অব্যাহত রাখে; তাহলে নিশ্চয়ই অতীতে যারা স্বৈরশাসক ছিল, তাদের বিরুদ্ধে যেমন গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, এই সরকারের বিরুদ্ধেও হবে।”