অন্তর্জ্বালা থেকে বিচারপতি সিনহার মনগড়া কথা: কাদের

সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার নতুন বইয়ে সরকারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছেন সেসব ‘মনগড়া কথা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2018, 07:07 AM
Updated : 21 Sept 2018, 10:59 AM

বিচারপতি সিনহা কেন আগে এসব বলেননি, দেশে ফিরে তিনি কেন জনগণের মুখোমুখি হচ্ছে না- সে প্রশ্নও তুলেছেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা।

বৃহস্পতিবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, “তিনি (বিচারপতি সিনহা) সাবেক হয়ে গেছেন। সাবেক হওয়ার অন্তর্জ্বালা আছে। কী পরিস্থিতিতে সাবেক হয়েছেন তা সবাই জানে। বই লিখে মনগড়া কথা বলবেন বিদেশে বসে, সেটা নিয়ে কথা বলার কোনো প্রয়োজন আছে?”

‘এ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ শিরোনামে আত্মজীবনীমূলক ওই বইয়ে বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি দাবি করেছেন, তিনি দেশ ছেড়েছেন ‘হুমকির মুখে’; একই কারণে বিদেশ থেকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।   

“২০১৭ সালে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পক্ষে ঐতিহাসিক এক রায় দেওয়ার পর বর্তমান সরকার আমাকে পদত্যাগ করতে এবং নির্বাসনে যেতে বাধ্য করে।” 

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে তিনি ছুটিতে যান। সরকারের পক্ষ থেকে অসুস্থতার কথা বলা হলেও ১৩ অক্টেবর তিনি রীতিমত বোমা ফাটিয়ে বিদেশে চলে যান।

বিচারপতি সিনহা বলে যান, তিনি অসুস্থ নন, ক্ষমতাসীনদের সমালোচনায় তিনি ‘বিব্রত’। তার ছুটির মেয়াদ শেষে ১১ নভেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিচারপতি সিনহা পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন।

পদত্যাগ করার পর বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ ওঠার কথা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়। বলা হয়, ওইসব অভিযোগের কারণে আপিল বিভাগের অন্য বিচারকরা আর প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বসে মামলা নিষ্পত্তিতে রাজি নন। সেসব অভিযোগ নিয়ে দুদক পরে অনুসন্ধানও শুরু করে।

বিচারকদের নিয়ন্ত্রণে সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে যে ক্ষমতা দিয়েছে, শৃঙ্খলা বিধির নামে বিচারপতি সিনহা তা কেড়ে নিতে চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ করে আসছেন সরকারের মন্ত্রী আর আওয়ামী লীগের নেতারা।

সেই সময়ের কথা তুলে ধরে বিচারপতি সিনহা তার বইয়ে লিখেছেন, “পার্লামেন্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী, তার দলের লোকজন এবং সরকারের মন্ত্রীরা আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। আইনমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ আনতে থাকেন।”

ওই সময় তাকে বাসভবনে আটকে রাখা হয় এবং আইনজীবী ও বিচারপতিদেরকে তার সঙ্গে দেখা করতে বাধা দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেছেন এস কে সিনহা।

বইয়ে তিনি লিখেছেন, ‘বাধ্য হয়ে’ দেশ ছাড়ার সময় তিনি ভেবেছিলেন, আদালতে তার অনুপস্থিতি আর অবকাশের মধ্যে পরিস্থিতি থিতিয়ে আসবে; ‘সুবিবেচনার’ উদয় হবে।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিবার ও স্বজনরা ‘হুমকির’ মুখে পড়লে বিদেশ থেকেই পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেওয়ার কথা লিখেছেন বিচারপতি সিনহা।

তার অভিযোগ অস্বীকার করে সরকারের সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, “এখন বইতে যা লিখেছেন, তখন তা বলার সৎ সাহস একজন বিচারপতির কেন ছিল না? এখন বিদায় নিয়ে কেন পুরানো কথা নতুন করে বলছেন, যা খুশি তাই বলছেন।”

ক্ষমতা হারালে অনেক রকম ‘অন্তর্জালা’ তৈরি হয় মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “তিনি যদি সত্যই বলতেন, তাহলে যখন প্রধান বিচারপতি ছিলেন তখন বললেন না কেন? সত্য কথা দেশের জনগণের মাঝে এসে বললেন না কেন? এখন বিদেশে বসে আপন মনে ভুতুড়ে কথা ছাপছেন। এটা আমাদের ও দেশের মানুষের বিশ্বাস করতে হবে?”

নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতির মাঠে নতুন নতুন জোট গড়ে ওঠার বিষয়টি কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, “দলে দলে জনে জনে যে ঐক্যের কথা আসছে, এসব কি জনমনে কোনো প্রভাব ফেলবে? শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা কি কমে যাবে?”

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আমাদের আস্থা আছে, বাংলাদেশের জনমত শেখ হাসিনার পক্ষে রয়েছে।  নেতায় নেতায় ঐক্য হলে জনতার মধ্যে কোনো প্রভাব পড়বে না। দেশের বর্তমান চিত্র অনুযায়ী এই মুহূর্তে জনমনে এর কোনো প্রতিফলন হবে না।… এটাই আমাদের অভিজ্ঞতা।” 

পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের আগে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়  দলের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন সেখানে উপস্থিত ছিলেন।