আদালতে যাচ্ছেন না খালেদা, ইঙ্গিত আইনজীবীর

আগের দুই দিনের মতো খালেদা জিয়া বৃহস্পতিবারও কারাগারের আদালতে উপস্থিত হচ্ছেন না বলে ইঙ্গিত মিলেছে তার আইনজীবীর কথায়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Sept 2018, 03:39 PM
Updated : 19 Sept 2018, 03:55 PM

পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের পরিত্যক্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার শুনানির প্রথম দিন উপস্থিত হয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

এরপর ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর শুনানিতে উপস্থিত হননি ওই কারাগারে থাকা খালেদা জিয়া।

বৃহস্পতিবার শুনানির দিন তিনি হাজির হচ্ছেন না কি না- জানতে চাইলে তার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, খালেদা জিয়া এখন ‘দারুণ অসুস্থ’।

এদিনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে দেখা করে আসেন বিএনপি নেতা মাসুদ তালুকদার।

তিনি বলেন, “উনি দারুণ অসুস্থ। উনি বলেছেন, ‘আমার চিকিৎসা এখন খুব জরুরি, আমি সুস্থ হলেই আদালতে যাব। আদালতে গিয়ে আমি শুনতে চাই, আদালতের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে চাই’।”

সেক্ষেত্রে তিনি আদালতে উপস্থিত হচ্ছেন কি না- জানতে চাইলে সরাসরি উত্তর এড়িয়ে বলেন, “আপনি নিজে চিন্তা করে নেন।”

এই বিচারের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ৫ সেপ্টেম্বর শুনানিতে উপস্থিত হয়ে বিচারককে বলেছিলেন, “আপনার যতদিন ইচ্ছা সাজা দিন, আমি এ অবস্থায় বারবার আসতে পারব না। এই আদালতে ন্যায়বিচারও হবে না।”

পরবর্তী দুদিনের শুনানিতে তিনি উপস্থিত না হওয়ায় তার অনুপস্থিতেই জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচার চলবে কি না- সেই সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য বৃহস্পতিবার দিন নির্ধারণ করেন বিচারক ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান।

ওই দিন খালেদার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তার আইনজীবীদের এক আবেদনের বিষয়ে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।

সে অনুযায়ী বুধবার বিকালে দুই আইনজীবী মাসুদ তালুকদার ও সানাউল্লাহ মিয়া বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করতে যান।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আইনজীবীরা সোয়া ৪টা থেকে প্রায় পৌনে ৫টা পর্যন্ত ছিলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে আদালতে নেওয়ার বিষয়ে তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। তার আদালতে না যাওয়ার বিষয়ে তাদের কাছে এ মুহুর্তে কোনো তথ্য নেই।

কারাগারে যাওয়ার পর গত এপ্রিল মাসে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিএসএমএমইউতে নেওয়া হলে প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছিল খালেদা জিয়াকে; এরপর তাকে আর এভাবে দেখা যায়নি

জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের দণ্ড নিয়ে ওই কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসাবে রয়েছেন ৭৩ বছর বয়সী খালেদা।

এদিকে খালেদার চিকিৎসার জন্য সরকার গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন সম্পর্কে তাকে কিছু জানানো হয়নি বলে অভিযোগ করেন আইনজীবী মাসুদ।

কারাগার থেকে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট সম্পর্কে কারা কর্তৃপক্ষ ওনাকে কিছু বলেনি। এমনকি ওনাকে জিজ্ঞেসও করেনি, শারীরিক কী অবস্থা।”

দুর্নীতির এই মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে আসা বিএনপি কারাগারে আদালত বসানোর প্রতিবাদ জানাচ্ছে। দলীয় নেত্রীকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়ার দাবিও রয়েছে তাদের।

মুক্তি দাবিতে শিক্ষকদের কর্মসূচি

খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিশেষায়িত হাসপাতালে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।

বুধবার দুপুরে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এই মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান,অধ্যাপক সদরুল আমিন, ড. আকতার হোসেন খান, ড. সিরাজুল ইসলাম, ড. সুকোমল বড়ুয়া, ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান ও ড. মহিউদ্দিন।

ওবায়দুল ইসলাম বলেন, “দেশ আজ গভীর সঙ্কটে নিপতিত। বাক স্বাধীনতা নেই। হামলা মামলা ও দুঃশাসনের রাজনীতি চলছে, যেখানে গণতন্ত্র নেই। তারই উদাহরণ দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় কারাগারে বন্দি।”

সদরুল আমিন বলেন, “সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাবন্দী করেছে। আমি তার অবিলম্বে মুক্তি ও তার পছন্দমাফিক হাসপাতালে সুচিকিৎসা দেয়ার দাবি জানাই।”

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, ড. আবদুর রশিদ, ড. আশরাফুল ইসলাম চৌধুরী, ড. মুজাহিদুল ইসলাম, আতাউর রহমান বিশ্বাস, ড. মাসুদ আলম, আলমগীর হোসেন সম্রাট, ইস্রাফিল প্রামাণিক রতন, আল আমিন, শামছুল আলম, এবিএম শহীদুল ইসলাম, নূরুল আমিন, এহসানুল মাহবুব যোবায়ের, মিজানুর রহমানসহ শতাধিক শিক্ষক।