নির্বাচনের ‘ক্ষেত্র তৈরিতে’ খালেদার মুক্তি চায় বিএনপি

একাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্র তৈরির ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার মুক্তির শর্ত দিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Sept 2018, 01:59 PM
Updated : 19 Sept 2018, 02:14 PM

বিএনপির দাবির প্রতি ক্ষমতাসীনরা গা না করার মধ্যে বুধবার এক মতবিনিময় সভায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমাদের খুব পরিষ্কার কথা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। নির্বাচনের ক্ষেত্র তৈরি করুন।”

দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির পাশাপাশি সংসদ ভেঙে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠন, ইসি পুনর্গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে।

তাদের এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নির্বাচন সংবিধান অনুসারেই হবে, এক্ষেত্রে বিএনপি ভোটে না এলে তাদের কিছু করার নেই।

ফখরুল বলেন, “যে নির্বাচনে আমার কথা বলার সুযোগ থাকবে না, ক্যাম্পেইন করার সুযোগ থাকবে না, ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকবে না, সেই নির্বাচন কি নির্বাচন হবে? হবে না।”

নিজেদের দাবিগুলো পুনরায় জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করুন, সংসদ ভেঙে পদত্যাগ করুন। একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার তৈরি করুন। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করুন।

“আমরা বলেছি, নির্বাচনে সময়ে অবশ্যই সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করতে হবে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে। আর ইভিএম চলবে না। কেনো চলবে না? ইভিএমে ১ কে ১০ বানানো যায়, ১০০ ও বানানো যায়।”

ফখরুল বলেন, বিএনপি নির্বাচনের মধ্য দিয়েই ক্ষমতার পরিবর্তন চায়, অন্য কোনোভাবে নয়।

আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

২১ আগস্ট মামলা প্রসঙ্গে

জাতীয় প্রেস ক্লাবের এই আলোচনা অনুষ্ঠানে ২১ অগাস্ট মামলা নিয়েও কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।

২১ অগাস্ট হত্যামামলার রায় হবে ১০ অক্টোবর। শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার এই মামলায় খালেদা জিয়ার ছেলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও আসামি।

বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকার সময় ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে শেখ হাসিনার সমাবেশে হামলায় ২৪ জন নিহত হন। জোট সরকার আমলে এই হামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়েছিল বলে পরে তদন্তে উঠে আসে।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী ফখরুল বলেন, “এই ঘটনা যখন ঘটে, তখন আমরা সাথে সাথে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। জোট সরকার সাথে ঘটনা তদন্ত করবার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই ও ইন্টারপোলকে নিয়ে এসেছিল। তারা তদন্ত রিপোর্ট দিয়ে যেতে পারেননি।

“কেন? প্রধান ভিকটিম দাবি করা হচ্ছে আজকের প্রধানমন্ত্রী ও তার দল সেদিন সহযোগিতা করেন নাই। যে গাড়িতে তিনি গিয়েছিলেন, বুলেটের ছোঁয়া লেগেছিল, তা পরীক্ষার জন্য দেওয়া হয়নি।”

এই মামলার সাক্ষীর তালিকায় নাম থাকলেও সাক্ষ্য দিতে তার আদালতে হাজির না হওয়ার কথাও বলেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “তারেক রহমান সাহেবকে আসামি করেছেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের আসামি করেছেন। আজকে তিনজন পুলিশের আইজি তারা কারাগারে, সেনাবাহিনীর তিনজন অত্যন্ত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কারাগারে।

“তারেক রহমান সাহেবকে কখন জড়ানো হল? এই মামলার রুজু করার পরেই তদন্ত হয়েছে। পরপর তিনজন তদন্ত কর্মকর্তা বদলি হয়েছে। এর মধ্যে ফখরুল-মঈনুদ্দিনের শাসনকাল গেছে দুই বছর। তারাও কিন্তু তারেক সাহেবর নাম দেয়নি, আবদুস সালাম পিন্টুর নাম দেয়নি। এই নামগুলো পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগের সরকার আসার পরে ঢোকানো হয়েছে।”

জঙ্গিনেতা মুফতি আব্দুল হান্নানকে ২৪৩ দিন রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে তার কাছ থেকে জোর করে তারেক রহমানকে জড়িয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে বলে দাবি করেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “আল্লাহ  এই অন্যায় ও মিথ্যাচারকে সহ্য করবেন না। আজকে আপনাদের মতো করে যা খুশি তা করতে পারেন। কিন্তু উপরওয়ালা একজন আছেন, তিনি বিচার করবেন, সঠিক ন্যায়বিচার হবে। সেই বিচারের জন্য অপেক্ষা করুন।”

বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদ জানিয়ে ফখরুল বলেন, “স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে ওয়ার্ডের নেতা-কর্মী এসব মামলার আসামি। আসামির সংখ্যা শুনলে অবাক হবেন, দুই লক্ষ ৩৩ হাজার!”

নির্বাচনে হারে ভয়ে আওয়ামী লীগ সরকার খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে দাবি করেন ফখরুল।

২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের উদ্যোগে ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহসভাপতি মুফতি আবদুর রব ইউসুফী।

সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা নুর হোসাইন কাশেমীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মনজুরুল ইসলাম পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, ইসলামী ঐক্যজোটের এম এ রকীব, খেলাফত মজলিশের আহমেদ আবদুল কাদের, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার খোন্দকার লুৎফর রহমান,  ডেমোক্রেটিক লীগের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক।