দেশের বাস্তব অবস্থা জানাতে গেছেন মহাসচিব: মওদুদ

বিএনপি মহাসচিবের যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে সরকারের নেতা-মন্ত্রীদের সমালোচনার জবাব দিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2018, 12:25 PM
Updated : 14 Sept 2018, 12:25 PM

শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেছেন, নালিশ করতে নয়, বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থা তুলে ধরতেই জাতিসংঘে গেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম ‘গণগ্রেপ্তার ও বিচার বিভাগের উপর সরকারের হস্তক্ষেপ বন্ধ এবং নির্দলীয় সরকারের গঠন’ শীর্ষক এই আলোচনার আয়োজন করে।

গত বুধবার বিএনপির মহাসচিব ফখরুল নিউ ইয়র্কে গিয়ে পরদিন জাতিসংঘের রাজনীতি বিষয়ক সহকারী মহাসচিব মিরোস্লাভ জেনকার সঙ্গে বৈঠক করেন।

মির্জা ফখরুলের এই সফর নিয়ে কয়েকদিন ধরেই সমলোচনায় মুখর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে নেতা-মন্ত্রীরা। তারা বলছেন, দেশের মানুষের আস্থা হারিয়ে নালিশ জানাতেই বিদেশিদের দ্বারস্থ হচ্ছে বিএনপি।

মওদুদ বলেন, “আমাদের দলের মহাসচিব জাতিসংঘে নিজের থেকে যাননি। জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের নিমন্ত্রণে গেছেন, দাওয়াতে গেছেন। তারপরও  এখানে তারা বলে বসলেন ওখানে নালিশ করতে গেছেন।

“আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের মহাসচিব নালিশ করতে যান নাই, বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থা তুলে ধরার জন্য গেছেন। দেশে এখন কী অবস্থা বিরাজ করছে এবং বিরোধীদলের ওপরে যে অত্যাচার-নিপীড়ন হচ্ছে, সাধারণ মানুষের ওপরে যে অত্যাচার-নির্যাতন হচ্ছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, সেই বাস্তব অবস্থা তুলে ধরার জন্য গেছেন।”

নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষমতাসীনদের বক্তব্য ‘প্রতারণামূলক’ বলে মন্তব্য করেন মওদুদ।

সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার তো ছিল ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে এই আইন করা হয়েছিল। আপনারা এটা পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিল করে দিয়েছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলে যে ব্যবস্থা ছিল সেটাকে আপনারা বিলুপ্ত করে দিয়েছেন।”

“এখন জনগণকে ধোঁকা দেবার জন্য, বিভ্রান্ত করবার জন্য বলছেন যে, নির্বাচনকালীন একটি সরকার হবে। সেই সরকারে কারা থাকবে? যারা এখন আছে তারাই তো থাকবে। তাহলে তফাৎটা কী হল? নির্বাচনকালীন বললে কি নির্বাচনকালীন হবে?  বলে আমরা রুটিন কাজ করব। সংবিধানের কোথায় লেখা আছে যে আপনারা রুটিন কাজ করবেন? এগুলো সব মিথ্যা কথা, এগুলো সবই বিভ্রান্তিমূলক।”

সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেছেন মওদুদ আহমদ।

“এই ঐক্য অনেকটাই হয়ে গেছে। আজকে ড. কামাল হোসেন বলেন, বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমানসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ আছেন, এমনকি বাম দলীয় জোট আছে সকলে একই কথা বলছেন। জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টি হয়ে গেছে। এখন এই ঐক্যকে আরো সংগঠিত করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”

জিয়া এতিমখানা মামলার বিচারকাজ চালাতে কারাগারের ভেতরে আদালত বসানো ‘সংবিধান পরিপন্থি’ বলে দাবি করেন তিনি।

“কারাগারের ভেতরের ট্রায়াল ক্যামেরা ট্রায়াল। এটা সংবিধানের একেবারেই পরিপন্থি। ফোজদারি কার্যবিধিতেও আছে, প্রকাশ্য আদালতে বিচার হতে হবে। সুতরাং সরকার যেকোনো জায়গা আদালত প্রতিষ্ঠার যে ক্ষমতার কথা বলছে তা অবশ্যই সংবিধানের অধীনে হতে হবে।”

আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন, লেবার পার্টির একাংশের সহসভাপতি সামসুদ্দিন পারভেজ, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

দেশে তুঘলকি শাসন: রিজভী

দেশে যেভাবে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে তাকে ‘তুঘলকি’ শাসন বরেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

নয়া পল্টনের কার্যালয়ে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রাপ্ত তথ্য মতে কেনো কারণ ছাড়াই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে এই পর্যন্ত ঢাকাসহ সারাদেশে গায়েবী মামলা দায়ের করা হয়েছে তিন হাজারের অধিক।

“আসামি করা হয়েছে নামে-বেনামে প্রায় তিন লাখ নেতাকর্মীকে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাড়ে তিন হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে। গত চব্বিশ ঘন্টায় আরো ৯০ জনের গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গেছে।

“দিনরাতে পুলিশি মামলা-হামলার বন্যা বইছে। দেশে এখন  তুঘলকি শাসন চলছে।”

সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, কেন্দ্রীয় নেতা মুনির হোসেন, সাইফুল ইসলাম পটু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।