যুক্তরাষ্ট্রে তদবির চালাতে বিএনপির ‘লবিস্ট’ নিয়োগের খবর

বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনে তদবির চালাতে বিএনপি ওয়াশিংটনে একটি ‘লবিং ফার্ম’ ভাড়া করেছে বলে খবর দিয়েছে রাজনীতি বিষয়ক ম্যাগাজিন পলিটিকো। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Sept 2018, 03:25 PM
Updated : 13 Sept 2018, 07:18 PM

যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের বরাত দিয়ে গত মঙ্গলবার ওই ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আব্দুল সাত্তার নামে বিএনপির একজন’ গত অগাস্টে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজিস’ এবং ‘রাস্কি পার্টনার্স’ এর সঙ্গে চুক্তি করেন, যাতে তারা বাংলাদেশের নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির পক্ষে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে তদবির করে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এ খবরের সত্যতা অস্বীকার করে বিষয়টিকে ‘একটা মহলের অপপ্রচার’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

এদিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলছেন, বিএনপি অস্বীকার করলেও ‘লবিস্ট’ নিয়োগের প্রমাণ আছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, এ ধরনের ফার্মের আয়-ব্যয়ের বিবরণী জাস্টিস ডিপার্টমেন্টে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই বিবরণীর ভিত্তিতেই এ প্রতিবেদন প্রকাশ করার কথা জানিয়েছে পলিটিকো।     

যুক্তরাষ্ট্রের এই সাময়িকী হোয়াইট হাউজ, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস, প্রশাসনসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় অর্থের বিনিময়ে তদবিরকারীদের যোগ্যতা, সক্ষমতা এবং কাজের গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে নিয়মিতভাবে তা প্রকাশ করে।

পলিটিকো লিখেছে, ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজিস বিএনপির পক্ষে বিভিন্ন বার্তা তৈরি করে তা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দেবে।

এছাড়া মার্কিন কংগ্রেস; আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা; স্বাস্থ্য, শ্রম, মানবাধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন ও নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা; যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক পলিসি ইন্সটিটিউট; সাবেক কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রদূত; বেসরকারি খাতের প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং প্রবাসীদের কাছে বিএনপির বার্তা পৌঁছে দিতে তারা কাজ করবে। 

জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

চুক্তি অনুযায়ী এ কাজের জন্য অগাস্ট মাসে ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজিসকে দেওয়া হয়েছে ২০ হাজার ডলার। আর সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে প্রতি মাসে দিতে হবে ৩৫ হাজার ডলার করে।

এর মধ্যে ব্লু স্টারের সহযোগী রাস্কি পার্টনার্স অগাস্টে ১০ হাজার ডলার এবং বছরের বাকি চার মাস ১৫ হাজার ডলার করে পাবে। 

ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কারেন ট্রামোন্টানো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ ছিলেন। ওই ফার্মের চিফ অপারেটিভ অফিসার জন পডেস্টা একসময় ক্লিনটনের একজন জ্যেষ্ঠ পরামর্শক ছিলেন।

পলিটিকো লিখেছে, “বিএনপির প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের ক্ষমতায়। বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুমের ঘটনার অনুসন্ধান করে গতবছর হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তাদের অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আটকে রাখা ও হত্যার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও জড়িত, যদিও সরকারের তরফ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে।”  

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী দল বিএনপি এখন সংসদেরও বাইরে। এর মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত ফেব্রুয়ারিতে দুর্নীতি মামলার সাজায় কারাগারে যাওয়ায় ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন অবস্থায় পড়েছে দলটি।

বিএনপি নেতারা বলে আসছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে তারা দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেবেন না।

অন্যদিকে প্রায় দশ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নির্বাচন কারও জন্য থেমে থাকবে না। এবারও নির্বাচনে না এলে বিএনপি নিবন্ধন হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে।   

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে থাকায় ‘লবিং ফার্ম’ নিয়োগের বিষয়ে তার ভাষ্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন দলটির অন্যতম মুখপাত্র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবি রিজভী। 

তবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বিষয়টি অস্বীকার করে ভাষ্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপি। ন্যূনতম নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে যে দলটি ক্ষমতার ম্যান্ডেট পাবে, সেই দল বিদেশিদের আনুকূল্যের জন্য লবিস্ট নিয়োগ করবে কেন? আমরা কখনো বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দিয়ে রাজনীতি করি না। আমাদের শক্তি এদেশের জনগণ।”

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিএনপি যে ‘লবিস্ট’ নিয়োগ করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটেই তার প্রমাণ রয়েছে।

“বিএনপি সত্য স্বীকার করার সৎসাহস কোনোকালে রাখে না।”

তিনি বলেন, “নিকট অতীতেও যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বাঁচানোর জন্য একই পদ্ধতিতে একিনগাম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসকে টবি ক্যাডম্যানের মাধ্যমে নিয়োগ দিয়েছিল বিএনপি। সেই চুক্তিতে নয়া পল্টনের দলীয় ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছিল। চুক্তিটি এখনও ইউএস জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়।”

শাহরিয়ার বলেন, “জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের তথ্য অস্বীকার করার পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাছে বিএনপির কোনো কথা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।”

জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক আয়োজনেও বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছিল- এই প্রমাণ থাকার দাবি করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “কিন্তু তিনি সাক্ষাৎ দেননি।”

পলিটিকোর প্রতিবেদনে ব্লু স্টারের সঙ্গে চুক্তিতে বিএনপির প্রতিনিধি হিসেবে যে আব্দুল সাত্তারের নাম লেখা হয়েছে তিনি যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কেউ নন বলে জানিয়েছেন আমাদের নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি।

তবে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির একজন নেতা তাকে বলেছেন, সাত্তার থাকেন লন্ডনে। দুই মামলার সাজা মাথায় নিয়ে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের সঙ্গেও সাত্তারের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম সাত্তার নামের ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি, ফলে পলিটিকোর প্রতিবেদনের বিষয়ে তার বক্তব্যও জানা সম্ভব হয়নি।