অপরাধী মন বলে খালেদার ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা: হাসিনা

খালেদা জিয়ার ‘অপরাধী মন’ আর ‘পলায়নপর মনোবৃত্তি’ বলেই আদালত সম্পর্কে ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা বলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Sept 2018, 06:37 PM
Updated : 6 Sept 2018, 06:37 PM

বৃহস্পতিবার গণভবনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের শুরুতেই জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলার যুক্তিতর্ক শুনানিতে বিশেষ এজলাসে খালেদা জিয়ার বক্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান প্রধানমন্ত্রী।

বিশেষ এজলাসে খালেদা জিয়া বুধবার বিচারকের উদ্দেশে বলেছিলেন, “আপনার যতদিন ইচ্ছা সাজা দিন,আমি এ অবস্থায় বারবার আসতে পারব না।”

শেখ হাসিনা বলেন, “ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা। নিজেকে নিরাপরাধ মনে করলে অবশ্যই কোর্টে আসবেন। তিনি কেন কোর্টে যাবেন না? অপরাধী বলেই বলেছেন।”

কারাগারের ভেতরে আদালত বসানোয় বিএনপির বিরোধিতার মধ্যে বুধবার খালেদা জিয়ার কোনো আইনজীবী শুনানিতে উপস্থিত হননি।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “এই আইনজীবীরা জানেন, তাকে ডিফেন্ড করে লাভ হবে না। তাই বিভিন্ন ছুতোয় গেল না।

“এই মামলায় খালেদা জিয়াকে নির্দোষ প্রমাণ করার মতো কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। তারা জানে ওনাকে ডিফেন্ড করে লাভ নেই। তাকে বয়কট করেছে। সে তো সত্যিই এতিমের টাকা আত্মসাত করেছে।”

কারাগারে ঢাকার জজ আদালতের বিশেষ এজলাস স্থাপনে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বিএনপি নেতারা একে ‘ক্যামরা ট্রায়াল’ আখায়িত করে বলেছেন, এটা ‘সংবিধান পরিপন্থি’।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখানে অসাংবিধানিক কী হল? প্রজ্ঞাপন দিয়ে কোর্ট যেখানে খুশি হতে পারে।”

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে জাতীয় সংসদ ভবনে বিশেষ আদালত বসানোর কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “সেখানে আমি গেছি, খালেদা জিয়া গেছে, অনেকেই গেছে।”

খালেদার স্বামী জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণের পর কারাগারে আদালত বসিয়ে কর্নেল আবু তাহেরকে বিচারের নামে ফাঁসিতে ঝোলানোর কথাও বলেন শেখ হাসিনা।

“এটা তো ক্যামেরা ট্রায়াল না। পুরো দরজা তো খোলাই ছিল। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই জেল গেটে আদালত বসানো হয়েছে।”

শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়ার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপি নেতারা সরকারের প্রতি অভিযোগ উত্থাপন করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন।

“তার অপকর্মের অনেক তথ্য চলে এসেছে। গত ছয় মাসে তিনি হাজিরা দেন নাই। কারণ, অপরাধী মন, পলায়নপর মনোবৃত্তি।”

বিএনপি নেতারা এই মামলা নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করলেও কারাগারে খালেদা জিয়াকে দেওয়া বিভিন্ন সুবিধা সম্পর্কে কোনো কথা না বলার বিষয়টি তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জবাব চাই, জবাব দিতে না পারলে ওই কাজের বুয়া নিয়ে চলে আসব।”

কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে তার গৃহকর্মী ফাতেমাও রয়েছেন; এই ধরনের সুবিধা নজিরবিহীন বলে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন।

বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “খালেদা জিয়ার জন্য একজন নিরীহ মানুষ কেন স্বেচ্ছায় কারাবরণ করবে? এত আইন দেখায়, এটার জবাব দিক।”

কারাগারে খালেদা জিয়ার খাটের জন্য বিশেষ গদির ব্যবস্থা করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “অর্থপেডিক দামী গদি সাপ্লাই দিচ্ছি। এটা তো বলে না, ওই গদি দিয়েন না, মাম পানি দিয়েন না।”

শেখ হাসিনা বলেন, “তার আইনজীবীদের প্রমাণ করতে হবে, খালেদা জিয়া নির্দোষ। খালেদা জিয়া ও তার আইনজীবীরা অ্যাভয়েড করতে চায়।

“এই মামলা কী ঝুলে থাকবে?অপরাধী সাজা পাবে, এখানে রাজনীতি নেই।”

কারাগারে বুধবার দেওয়া খালেদা জিয়ার বক্তব্য গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করায় উষ্মা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সাজাপ্রাপ্ত আসামির কথার কতো মূল্য দিল সাংবাদিকরা। অপরাধীদের উৎসাহ দেওয়া কী মিডিয়ার কাজ? অপরাধীরা এত মূল্য পেলে তো অপরাধই বাড়বে।”

বিকল্পধারা সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন গণফোরামের জোট বাঁধা নিয়েও কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

তিনি বলেন, “আমি সাধুবাদ জানাই যে একটা জোট হচ্ছে। দেখলাম বেশ বড়সড় হোমড়া চোমড়া সবাই আছে, খুবই ভালো। এটা ভাবা উচিত যে, আওয়ামী লীগের একটা অল্টারনেটিভ থাকুক।

“শিক্ষিত, উচ্চ শিক্ষিত, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন, উন্নত ডাক্তার, কবিরাজ সবাই এক জায়গায় হোক। তারা সুন্দর ভাবে করুক, সেটাই আমরা চাই। তারা অন্তত, জামাত-শিবির, যুদ্ধাপরাধীদের নেবে না। তারা নিজেরা দাঁড়াক এবং ইলেকশন করুক।”