‘কিছু হলে উত্তর পাড়ার দিকে তাকিয়ে বসে থাকে’

কামাল হোসেনের গণফোরামের সঙ্গে বি চৌধুরীর যুক্তফ্রন্টের ঐক্যবদ্ধ হওয়াকে স্বাগত জানালেও তাদের ‘অগণতান্ত্রিক পথে’ ক্ষমতায় যাওয়ার ‘ইচ্ছা’ নিয়ে টিপ্পনীও কেটেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

সুমন মাহবুব জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2018, 03:17 PM
Updated : 2 Sept 2018, 06:58 PM

তিনি বলেছেন, “কামাল হোসেন সাহেবদের আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলন করে যদি সফল হন আর উত্তর পাড়া থেকে যদি কেউ আসে, তাহলে ওনারা সাফল্য অর্জন করবে।”

বিমসটেক সম্মেলন থেকে ফিরে রোববার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন শেখ হাসিনা।

বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে দলটির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, তারা না এলেও নির্বাচন যথাসময়ে হবে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সময় মতো হওয়া নিয়ে গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেনের সংশয় প্রকাশের প্রতিক্রিয়ায় শেখ হাসিনা বলেন, “ড. কামাল হোসেন যে কথাটা বলেছেন.. তাকে আমার প্রশ্নটা হচ্ছে, তিনি আদৌ নির্বাচন চান কি না? ড. কামাল গং, তারা আদৌ নির্বাচন চায় কি না? এখানেই আমার প্রশ্ন।

“বাংলাদেশে তো একটা শ্রেণি বসেই থাকে; তার মনে করে যে কোনো অসাংবিধানিক, অনির্বাচিত, এরকম কিছু যদি ক্ষমতা দখল করতে পারে, তাহলে তারা একটা পতাকা পেতে পারে, তাদের গুরুত্ব বাড়ে। গণতন্ত্রটা হচ্ছে ওনাদের বলার জন্য। আর প্র্যাকটিসটা হচ্ছে অগণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য।”

“আদৌ ইলেকশন হবে না; তার মানে ওনারা বসে আছেন.. আমাদের তো কোনো কিছু হলে উত্তরপাড়ার দিকে তাকিয়ে বসে থাকে। এটাই তো বাস্তবতা,” বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।   

কোটা সংস্কার এবং নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের কথা উল্লেখ না করে তিনি বলেন, “একটু আন্দোলন দেখলেই সেটার ঘাড়ে চড়ে সবাই বসতে চায়। আমি প্রথমে দেখি, ছেড়ে দিই। যেই দেখি কেউ ঘাড়ে চড়ে, আস্তে সরিয়ে দিই। তখন আবার পড়ে যায়। তো কী করব?

“আমি আন্দোলনে বিশ্বাস করি। কেউ কিছু চাইলে আমি বলি, আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলন ছাড়া দেব না।”

আওয়ামী লীগ ছেড়ে আসা কামাল হোসেন এবং বিএনপি ছেড়ে আসা বি চৌধুরী গত সপ্তাহে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার ঘোষণা দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “তারা যে ঐক্যটা করেছে আমি সাধুবাদ জানাই। এই ঐক্যটা থাক।

“বাংলাদেশে তো পার্টি দুইটা। একটা, আওয়ামী লীগ, আরেকটা অ্যান্টি আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগবিরোধীদের তো একটা জায়গা লাগবে যাওয়ার।”

বিএনপি ভোটে না এলে যুক্তফ্রন্টের অংশগ্রহণ নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলে আশা করছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

তিনি বলেন, “আমরা আশা করি, তারা এক সাথে হয়ে নির্বাচনটা করুক। একটা বিকল্প থাকতে হবে তো। অন্তত একটা ভালো জোট হোক। আমরা নির্বাচনটা কনটেস্টেড করি।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবে শনিবার এক অনুষ্ঠানে এক সঙ্গে কামাল হোসেন, বি চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান মান্না ও আ স ম রব

যুক্তফ্রন্ট নেতাদের রাজনৈতিক ব্যবচ্ছেদ

সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা নতুন এই জোটের নেতাদের রাজনৈতিক জীবনের ব্যবচ্ছেদ করেন।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল হোসেনের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “ড. কামাল হোসেন যদি খুব গরম বক্তৃতা দেন, এখন থেকে সব কাজ বন্ধ। তাহলে, ধরে নেবেন, ওনার প্লেট রেডি। আ, বাক্সটা গাড়িতে থাকে। আমাদের সাথে তো ছিলেন। আমরা দেখেছি।”

দশম সংসদ নির্বাচনে ১৫৩ জনের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সমালোচনাকারী কামাল হোসেনকে তার নিজেরও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হওয়ার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। 

“জাতির পিতার ছেড়ে দেওয়া সিটে উনি পেপার সাবমিট করলেন, আর কেউ করল না, উনি আনকনটেস্টেড জিতে আসলেন। এই আনকনটেস্টেড এমপি তো নিজেকে সংবিধান প্রণেতা বলেন! এখন তো দেখি সেই সংবিধানও মানতে চান না।”

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বিরোধী দল যারা ছিল, তারা প্রত্যাহার করে নিল। আমাদের পার্টি ডিসিপ্লিনড পার্টি, একজন করে নমিনেশন দিয়েছি, একজনই থেকেছে। আনকনটেস্টেডভাবে হওয়া, এটা তো সাংবিধানিকভাবেই আছে।”

যুক্তফ্রন্টের অন্যতম দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) আ স ম আবদুর রবের বিষয়ে শেখ হাসিনা হাসতে হাসতে বলেন, “রব সাহেব এক সময় ছাত্রলীগ করত। তারপর ছাত্রলীগ ছেড়ে চলে গেলো। আমরা ঠাট্টা করে বলতাম, অসময়ে নীরব, সুসময়ে সরব, আ স ম আবদুর রব।”

“উনি এখন সরব হচ্ছেন; খুব ভালো কথা।”

মুক্তিযুদ্ধের আগে ডাকসুর ভিপি রব পরে জাসদে যোগ দেন। এরশাদের শাসনামলে তার  সঙ্গে সখ্য গড়ার পর আবার শেখ হাসিনার ১৯৯৬ সালের সরকারে মন্ত্রী হন তিনি। এখন তিনি সরকারের কড়া সমালোচক।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় কাদের সিদ্দিকী

কামাল হোসেন ও বি চৌধুরীদের রাজনৈতিক মিত্র কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকীকে নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “তিনিও আমাদের সাথে ছিলেন। ৯৬ সালের পার্লামেন্টে হঠাৎ কে কী তার মাথায় ঢুকাল জানি না। তিনি রিজাইন করে স্বতন্ত্র ইলেকশন করে আসবেন, আওয়ামী লীগের এমপিরা তারে ভোট দেবে, বিএনপির এমপিরা তারে ভোট দেবেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন।

“এই মাকাল ফলটা তাকে কে দেখাল আমরা জানি না। তিনি নৌকাহারা ইলেকশনে জিতে আসতে পারলেন না।”

জাসদ থেকে আওয়ামী লীগ হয়ে এখন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “তিনিও আমাদের পার্টি করতে এসেছিলেন। উনি এখানে খুব একটা স্বস্তি ফিল করে নাই।

“তাকে বললাম আপনার লেখার হাত অনেক ভালো, আপনি তো সবসময় আমাদের বিরুদ্ধে লিখেন, এবার একটু আমাদের পক্ষে লেখেন। দেখা গেছে উনি পক্ষে লিখতেই পারেন না। পক্ষে লিখতে বললেই মান্না জুড়ে দেয় কান্না।”

সাবেক রাষ্ট্রপতি বি চৌধুরীর বাবার আওয়ামী লীগ করার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর তাকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘আপনার ডাক্তার’ নামে স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক একটি অনুষ্ঠান করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, যে অনুষ্ঠানটি জনপ্রিয় হয়।

এরপর বিএনপিতে যোগ দিয়ে মহাসচিব হওয়ার পর খালেদা জিয়ার আমলে রাষ্ট্রপতি হলেও টিকতে পারেননি বি চৌধুরী।

শেখ হাসিনা বলেন, “খালেদা জিয়াও ওনাকে সম্মান দেননি। ওনাকে বঙ্গভবন থেকে বের করে রেললাইনের ওপর দিয়ে দৌড় দেওয়াল।”

“বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিকল্পধারা করেছিলেন। সেই বিকল্প এখন স্বকল্প হয়ে গেছে,” যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যানকে নিয়ে  বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।