ইভিএম কেনায় ‘লুটপাট’ দেখছে বিএনপি

জাতীয় নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের যে সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন নিয়েছে, তা ‘প্রত্যাখ্যান’ করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2018, 11:31 AM
Updated : 31 August 2018, 12:27 PM

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেছেন, দেড় লাখ ইভিএম কিনতে ইসির নেওয়া প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবের পেছনেও দুর্নীতি রয়েছে বলে তারা মনে করছেন।

শুক্রবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “এই মেশিন কিনে লুটপাট হবে। এটি ক্রয়ের ব্যাপারে দুর্নীতি জড়িত আছে, কমিশনের একটা ব্যাপার আছে।”

এতদিন স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে স্বল্প পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করা হলেও সংসদ নির্বাচনে কখনও যন্ত্রে ভোট হয়নি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইভিএম চালুর বিষয়ে আগ্রহী হলেও বিএনপি ‘ডিজিটাল জালিয়াতির’ সন্দেহ প্রকাশ করে এর বিরোধিতা করে আসছে।

বিএনপির আপত্তির মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পথ খুলতে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের সভায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের সিদ্ধান্ত  হয়।

তবে কমিশনের ৫ সদস্যের একজন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার তাতে আপত্তি জানিয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে সভা বর্জন করেন।

মওদুদ বলেন, ইভিএমে ‘ম্যানুপলেশনের’ আশঙ্কা থেকেই যায়। যেখানে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা হ্যাকারের হাতে চলে যায়, সেখানে যন্ত্রের মাধ্যমে ভোট নিলে তা মানুষের ‘আস্থা বা গ্রহণযোগ্যতা’ পাবে না।

“কারা এই মেশিনের নিয়ন্ত্রণ করবে? কার কাছে পাসওয়ার্ড থাকবে? যে নির্বাচন কমিশনের ওপরে আমাদের কোনো আস্থা নাই, সেই কমিশনের হাতে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। এই ইভিএম চালু করার সিদ্ধান্ত আমরা প্রত্যাখান করছি।”

সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির এই নেতা বলছেন, “বিএনপি দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে তারা। কালকে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, সেটা প্রমাণ করা সম্ভবপর হবে। আমরা বলছি যে, ইভিএম মানি না।”

ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনের ওই সিদ্ধান্তের পেছনে সরকারের হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মওদুদ।

তিনি বলেন, “জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে আর মাত্র তিন মাস বাকি। তার আগেই মেশিন দিয়ে ভোটের এই ধরনের ব্যবস্থার পেছনে একটি বিরাট ষড়যন্ত্র আছে বলে আমি মনে করি। এই ষড়যন্ত্রের সাথে সরকার ওতপ্রোতভাবে জড়িত।”

নির্বাচন কমিশন কেন ইভিএম চালুর জন্য হঠাৎ তাড়াহুড়া শুরু করল, সেই প্রশ্নও তোলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা। 

“এই যন্ত্রগুলো আনা হবে, জনগণের টাকা দিয়ে এটা এনে এই অর্থ নষ্ট হবে। এই মেশিন কোনো দিন ব্যবহার হবে না। যেই টাকা ব্যয় হবে সেটা নিজেরা লুণ্ঠন করে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে এটাকে একটা বাণিজ্য হিসেবে তারা দেখবে।”

জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের জন্য আরপিও সংশোধনের তোড়জোড় শুরুর মধ্যেই নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা দেড় লাখ ইভিএম কিনতে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করেছেন। এসব ইভিএম কেনা হবে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে।

হাজার কোটি টাকা ‘লুটপাটের’ জন্য তড়িঘড়ি ইভিএম কেনার প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে- এমন অভিযোগের বিষয়ে বৃহস্পতিবার সিইসি কে এম নূরুল হুদার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন সাংবাদিকরা।

উত্তরে তিনি বলেন, “আমাদের হাতে তো টাকা নেই। এ টাকার ব্যবহার আমরা করি না।  এ টাকা আমাদের হাতে নেই। ইভিএমের ব্যাপারে যে টাকা পয়সা হবে; সেটা নির্বাচন কমিশনের কাছে ন্যস্ত হবে না; সরকারের কাছে থাকবে।”

ইভিএম পদ্ধতিতে বিভিন্ন ত্রুটি রয়েছে মন্তব্য করে মওদুদ বলেন, “এ পদ্ধতির ওপরে মানুষের আস্থা কোনো দেশেই নাই। জার্মানিতে বন্ধ করে দিয়েছে জার্মান সুপ্রিম কোট। ইতালিতে নাই; তারা চেষ্টা করেছিল, কিন্তু প্রত্যাখান করেছে। আয়ারল্যান্ডের মানুষ প্রত্যাখান করেছে। এমনকি ভারতে ৭৩ শতাংশ মানুষ এই ইভিএম চালুর বিরুদ্ধে মতামত দিয়েছে। দুই-একটা প্রদেশে তারা চেষ্টা করেছিল, সেটা সফল হয় নাই।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনই জাতীয় সংকট সমাধানের একমাত্র পথ’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপিপন্থি সংগঠন বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম।

সংগঠনের উপদেষ্টা মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে ও সাইদুর রহমানের পরিচালনায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, সহ প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, জাসাস সহসভাপতি শাহরিন ইসলাম শায়লা, শেরেবাংলানগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।

‘ভোটচুরির যাদুর বাক্স’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনকে দেখছেন ‘ভোটচুরির যাদুর বাক্স’ হিসেবে।

শুক্রবার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ইভিএম ব্যবহারের ‘একতরফা’ সিদ্ধান্ত আগামী নির্বাচন ‘জালিয়াতি করারই চূড়ান্ত মাস্টার প্ল্যান’।

“সত্যিকারের গণতন্ত্রে সরকার পরিচালনায় জনগণের যে ম্যান্ডেট প্রয়োজন হয়, তাতে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাস করেন না। অনুগত প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে তিনি ইভিএম নামক যাদুর বাক্স আমদানি করে আগামী সংসদ নির্বাচনে ধাপ্পাবাজির ভোটের বন্দোবস্ত করছেন।”

ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে রিজভী বলেন, “এবার জনগণ সরকারের সকল মাস্টার প্ল্যান ডাস্টবিনে ফেলে দেবে। ভোট নিয়ে অনাচারের পুনরাবৃত্তি জনগণ রুখে দেবে। এবারে জনগণের শিলা-কঠিন ঐক্যে সরকারের সকল পরিকল্পনা ধূলিস্যাৎ হয়ে যাবে।”

অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মীর সরফত আলী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।