ভোটের আগে খালেদার মুক্তিতে জোরাল কর্মসূচি: ফখরুল

নির্বাচনের  আগে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জোরাল কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে চাচ্ছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 August 2018, 12:21 PM
Updated : 28 August 2018, 12:21 PM

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানালেও কী ধরনের কর্মসূচি আসছে, তা স্পষ্ট করেননি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের দণ্ড নিয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নির্দলীয় সরকারের দাবির সঙ্গে এখন দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তির শর্তও যোগ করেছে বিএনপি, সংলাপের আহ্বানও সরকারকে জানিয়ে আসছে তারা।

তবে বিএনপির কোনো দাবিতে গা করছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তারা বিএনপির আন্দোলনের সামর্থ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলে আসছে।

ফখরুল বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত আছে। প্রতিদিনই কর্মসূচি চলছে। আবারো কর্মসূচি আসছে এবং জোরাল কর্মসূচি আসছে।”

গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি চালিয়ে যেতে বলেছিলেন দলীয় নেতাদের। তারপর মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি, গণঅনশনের মতো কর্মসূচিই পালিত হচ্ছে; যদিও দলটির তৃণমূল নেতারা জোরোল কর্মসূচির প্রত্যাশা প্রকাশ করে আসছেন।

জোরাল কর্মসূচি কী হতে পারে এবং কখন থেকে- সাংবাদিকদের প্রশ্নে ফখরুল বলেন, “সময়মতো ঠিক সময়ে জোরাল কর্মসূচি দেখতে পাবেন। কেমন কর্মসূচি আসছে, ঠিক সময়ে দেখতে পারবেন।”

আগামী ডিসেম্বরে একাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে নির্বাচন কমিশনে। দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তা এখনও অনিশ্চিত।

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কর্মকৌশল কী হবে- প্রশ্ন করা হলে ফখরুল বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে বলছি, আমাদের নেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে। এটা হচেছ আমাদের প্রথম শর্ত।

“তারপর বলেছি যে, নির্বাচন করতে হলে পরিবেশ তৈরি করতে হবে। নির্বাচনকালীন একটা নিরপেক্ষ সরকার থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং সব দলকে সমান সুযোগ দিতে হবে। একই সঙ্গে নির্বাচনের সময়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।”

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, খালেদার মুক্তি পুরোপুরি আদালতের এখতিয়ার, এতে সরকারের কিছু করার নেই। আর সংবিধানে নির্দলীয় সরকার পদ্ধতি এখন নেই বলে তা আনার সুযোগও নেই। সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে ইসি সুপারিশ করলে সরকার তা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।

এই অবস্থায় বিএনপির কাছে নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ কোনটি- প্রশ্ন করা হলে ফখরুল বলেন, “চ্যালেঞ্জ তো আওয়ামী লীগের। তাদের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, দেশের মানুষ তাদেরকে ভোট দেবে না। এজন্য যত রকমের দুষ্টামী আছে সব রকমের দুষ্টামী শুরু করেছে। ইভিএম আনবে না কি? আমরা বলেছি, ইভিএম চলবে না। আমরা আরও শুনতে পাচ্ছি, পুলিশকে বলা হচ্ছে সমস্ত নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হবে।

“নির্বাচন যদি করতে চান সবাইকে মুক্ত করে নির্বাচন করেন।  চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তাদের তারা জনগণকে ঠেকাতে পারবে কি না? কিভাবে ঠেকাবে? সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা তারা করুক।”

সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আপনারা দেখেছেন, কয়েকটি ঘটনায় মধ্য দিয়ে তারা ফুঁসে উঠেছে।

“দেশের মানুষ এই অন্যায়-অত্যাচার মেনে নেবে না। বাংলাদেশের মানুষ ঘুরে দাঁড়াবেই এবং পরাজিত হবেই এই অপশক্তি।”

গণমাধ্যমের ভূমিকায় ক্ষোভ

২১ অগাস্টে গ্রেনেড হামলার মামলা নিয়ে বিএনপি নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে যে সংবাদ সম্মেলন করেছিল, তা গণমাধ্যম কম গুরুত্ব দিয়েছে দাবি করে এনিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “আমরা গতকাল এই বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং করেছি। দুর্ভাগ্যের কথা আজকে আমরা দেখছি, প্রিন্টিং মিডিয়াতে এটাকে বেশি দেওয়া হয় নাই। কেন দেওয়া হয় নাই? এত বড় একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যে বিষয়টা একটা গুরুত্বপূর্ণ মামলা, একটি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জড়িত আছে।

“যেখানে সকল তথ্য-উপাত্ত দিয়ে আমরা এটাকে উপস্থাপন করেছি। দুর্ভাগ্য আমাদের সেই বিষয়গুলোকে ২/১টা পত্রিকা ছাড়া কেনো পত্রিকাতে সেভাবে তুলে ধরা হয়নি।”

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলাটিতে বিচার ঘনিয়ে আসার মধ্যে বিএনপির শীর্ষনেতাদের দায়ী করে আওয়ামী লীগ নেতারা বক্তব্য দিচ্ছেন।

তার প্রতিক্রিয়ায় মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে নানা প্রশ্ন তুলে দলীয় নেতা তারেক রহমানকে নির্দোষ দাবি করে সোমবারা সংবাদ সম্মেলন করেছিল বিএনপি।

গণমাধ্যমে তাদের সংবাদটি ‘কম গুরুত্ব’ পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকার প্রভাব খাটিয়েছে বলেও মনে করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “কারণ আমরা জানি, পেছন থেকে আপনাদেরকে আটকিয়ে দেওয়া হয়েছে। পেছন থেকে বলা হয়েছে, এটাকে এভাবে দেওয়া যাবে না, গুরুত্ব দেওয়া যাবে না। বলা হয়েছে, এভাবে ছাপানো যাবে না। কারণ ফ্যাসিস্ট একদলীয় সরকার বসে আছে, তারা আপনাদেরকে বিরত করছে।”

২১ অগাস্ট মামলায় আব্দুল কাহার আকন্দের সম্পূরক তদন্ত নিয়ে ফের প্রশ্ন তোলেন ফখরুল; যে তদন্তে তারেক রহমানকে এই মামলায় আসামির তালিকায় যোগ করা হয়েছে।

মামলার আসামি  জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানকে নির্যাতন চালিয়ে তার কাছ থেকে তারেক রহমানকে জড়িয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন ফখরুল।

“পরবর্তীকালে ওই জবানবন্দি প্রত্যাহার করে নিয়েছিল ওই ব্যক্তি। তাকে তো আপনারা তার শেষ আইনগত অধিকার দেননি। তার আগেই অন্য একটা মামলায় ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দিয়েছেন।”

ফখরুল বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মামলায় দুই নাম্বার সাক্ষী, তিনি সাক্ষ্য দিতে যান নাই। কেন যান নাই? সাবজেলের মধ্যে তিনি যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন, তাতে একবারও তিনি তারেক রহমান সাহেব বা বেগম খালেদা জিয়ার কথা বলেন নাই। আজকে তিনিই (শেখ হাসিনা) আবার বলছেন, বেগম জিয়াও জড়িত আছে।”

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে এক যৌথসভার পর সংবাদ সম্মেলনে আসেন ফখরুল।

এতে তার সঙ্গে ছিলেন রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ ,আসাদুল করীম শাহিন, আবদুল আউয়াল খান, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, বেলাল আহমেদ প্রমুখ।