প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য হাস্যকর, অর্বাচীনের মতো: ফখরুল

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য ‘হাস্যকর ও অর্বাচীনের’ মতো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2018, 11:10 AM
Updated : 17 August 2018, 11:48 AM

শুক্রবার এক সংহতি সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, “আমাদের স্বনির্বাচিত, স্বঘোষিত ও অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী সব জায়গায় বিএনপির ভূত দেখতে পান, তিনি সব জায়গায় জিয়া পরিবারের ভূত দেখতে পান। না হলে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের সেই বিয়োগান্ত ঘটনায় তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে কিভাবে যুক্ত করেন?  তিনি কিভাবে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেবকে তার সঙ্গে যুক্ত করেন?”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার আগে তার ধানমণ্ডির বাড়িতে জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী খালেদা জিয়ার যাওয়া-আসা ছিল জানিয়ে এর কারণ নিয়ে সম্প্রতি প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় ‘সরাসরি জড়িত’ থাকার কারণেই জিয়াকে পরে রাষ্ট্রপতি করা হয়েছিল বলে তার বিশ্বাস।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল বলেন, “আমরা বলতে চাই যে, আপনি রাজনীতিবিদ। আপনি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আছেন। আপনার মুখ দিয়ে এই ধরনের অর্বাচীন কথাবার্তা কখনই শোভা পায় না। এটা আপনার স্বভাব। আপনার এই স্বভাবের মধ্য দিয়ে এই ধরনের একেবারে হাস্যকর ও  অর্বাচীন কথাবার্তা বলেন। আমরা তার এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি, প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

এক এগারোর পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “উনি মারাত্মক কথা বলেছেন। এরপরেও আপনারা সরকারে আছেন? এখনো পদত্যাগ করছেন না । সরকার আপনাদের, আর আপনারা এক এগারোর পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “একটা কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না এক এগারোর বেনিফিসিয়ারি হচ্ছে আওয়ামী  লীগ। তারা এতো বেনিফিসিয়ারি যে, ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই তাদের নেত্রী বিদেশে যাওয়ার আগে বলেছিলেন, ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিন সরকারের সকল কর্মকাণ্ডকে বৈধ করে দেবেন। দিয়েছেনও, সংসদে আইন পাস করেছেন। তাহলে এক এগারোর পদধ্বনি শুনতে পারছেন কেন? তাহলে আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন।”

জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বিএনপি সমর্থিত ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক 

ইউনিয়নের উদ্যোগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এই সংহতি সমাবেশ হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, “দেশে এক অস্বস্তিকর পরিবেশ বিরাজ করছে। সবসময় দমবন্ধ করা একটা পরিবেশ। আপনি চিন্তা করতে পারেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের রাতের বেলা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এরপর রিমান্ডে নিচ্ছে। অপরাধটা কী? তারা সমর্থন দিয়েছিল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে। উস্কানি দিয়েছে নাকী। 

“আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিসঙ্গত আন্দোলনকে আমরা প্রথম দিনই সমর্থন দিয়েছি এবং এই সমর্থন অব্যাহত রেখেছি। আজকেও কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকে আমরা অবশ্যই সমর্থন করব। জনগণকে আহ্বান করব শুধু নিরাপদ সড়ক নয়, নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য আপনারা এগিয়ে আসুন, আপনারা জেগে উঠুন এবং আবার দেশকে স্বাধীন করুন।”

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রীর একজন ভক্ত। ভক্ত বলেই প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি আপনি অনুগ্রহ করে গতকাল যে বক্তৃতাটা দিয়েছেন সেটা একটু পড়ে দেখেন। আরেকবার নিজে শুনে দেখেন, বক্তৃতাটা রিপ্লে করেন।

“দেখবেন দুই জিনিস আপনার সঙ্গে সঙ্গে মনে হবে- একটা আপনি যে নিয়মিত ওষুধ খান শারীরিক সুস্থতার জন্য সেই ওষুধটা খাননি অথবা আপনার যারা পরামর্শদাতা একটা ভারতীয় গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ ও আরেকটা দেশে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ ও চারিদিকে ঘিরে রাখা সদস্যরা, তাদের কথায় আপনি ভুল পথে আছেন।”

জাফরুল্লাহ বলেন, “আপনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, খালেদা জিয়া জড়িত। আপনি তখনকার দিনে তাকে চিনতেন কিনা আমি জানি না, আমি চিনতাম। উনাকে আমি ৭২ সন থেকে চিনতাম। নির্মোহ গৃহবধূ। ৭৫ সনে উনি (খালেদা জিয়া) কী করতেন? কেউ গেলে উনার বাড়িতে- লজ্জায় নম্র বিনীতভাবে বলতেন ভাই আরেকটা বিস্কুট দেই।”

‘‘ এই মহিলা শেখ মুজিব হত্যার সাথে জড়িত- এটা আপনি কী বলছেন? এই জাতীয় কথা বলে আপনি হাস্যকর হচ্ছেন।”

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “মানুষ পরিবর্তন চায়। তারা বলে আজ আওয়ামী লীগ চলে যাক, পরিবর্তনে কে আসবে। যারা আসবে তারা এর চাইতে ভালো হবে তো। তাদেরকে এখন দেখে আমরা আশা করতে পারি এই দেশ ও সমাজ বদলাব।”

বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে সমাবেশে সংগঠনের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার, আব্দুস শহিদ, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ইলিয়াস খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।