আওয়ামী লীগই এখন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিপরীতে: সিপিবি

বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগও এখন তার আদর্শ অনুসরণ করছে না বলে দাবি করেছে তাদের এক সময়ের জোটসঙ্গী দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2018, 04:53 PM
Updated : 14 August 2018, 04:53 PM

বাম দলটির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, “বঙ্গবন্ধুকে ১৫ অগাস্ট প্রথমবার হত্যা করা হয়েছে। তার আদর্শ থেকে দেশকে বিচ্যুত করে এখন পর্যন্ত যারা রেখেছে তারা বঙ্গবন্ধুকে দ্বিতীয়বার হত্যা করল। ইতিহাসে এই কথাটা থাকবে।”

বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীত দিকে নিতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল মন্তব্য করে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেছেন, “বর্তমান আওয়ামী লীগও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে একশ আশি ডিগ্রিতে উল্টে গেছে।”

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার সিপিবি আয়োজিত আলোচনা সভায় দলটির শীর্ষ দুই নেতা এসব কথা বলেন।

স্বাধীনতা সংগ্রামে আওয়ামী লীগের পাশে থাকা কমিউনিস্ট পার্টি স্বাধীন বাংলাদেশেও বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিল। বঙ্গবন্ধুর গড়া বাকশালেও যোগ দিয়েছিল সিপিবি।

এরপর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৫ দলীয় জোটেও ছিল সিবিপি; কিন্তু ৯০ এর দশকের পর আওয়ামী লীগ তাদের ঘোষণাপত্র থেকে সমাজতন্ত্র বাদ দিলে তাদের সঙ্গ ছাড়ে বাম দলটি।

দলীয় কার্যালয় পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোচনা সভা করার কারণ ব্যাখ্যা করে সিপিবি সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে শুধু একজন ব্যক্তিকেই শেষ করা হল না, এর মধ্যে দিয়ে দেশকে একশ আশি ডিগ্রিতে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই জন্য আমরা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড দিবস পালন করি।”

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের তৎকালীন নেতাদের দোদুল্যমানতার কথা বলেন ডাকসুর ভিপি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সংস্পর্শ পাওয়া সেলিম।

তখন নিজে ছাত্রলীগের কয়েকজনকে নিয়ে মিছিল করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন জানিয়ে সিপিবি সভাপতি বলেন, “এর আগেই তিন বাহিনীর প্রধান শপথ নিলেন, এক ঘণ্টার মধ্যে একজন একজন করে মন্ত্রী শপথ নিলেন। পুরো কেবিনেট ভরে গেল আওয়ামী লীগে।

“আওয়ামী লীগের ভেতরে প্রশ্ন উঠল, বঙ্গবন্ধুকে তো আর ফেরত পাওয়া যাবে না, যাই হোক আল্লাহর রহমতে আওয়ামী লীগের সরকারই বহাল আছে! দায়িত্ব পাওয়াদের অনেকে তখন অন্যদের বলেছিল, তোমরা বেশি বাড়াবাড়ি করিও না, তাহলে এই দায়িত্ব থাকবে না।”

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তিকে দায়ী করে সেলিম বলেন, “বঙ্গবন্ধু যদি মুক্তিযুদ্ধের ধারা থেকে দেশকে উল্টো পথে নিয়ে যেতেন, তাহলে তাকে হত্যা করার প্রয়োজন ছিল না।

“এই কারণে প্রয়োজন হয় যে, তারা মনে করত এই লোকটা জীবিত থাকলে আবার ঘুরে-ফিরে যত ভুল-ত্রুটি করুক এই ধারা থাকবেই, এই ধারা থেকে বের করে আবার পাকিস্তানি ধারা আনতে পারবে না।”

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে পুরোপরি নিতে ৭২ এর সংবিধানে যাওয়ার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানান সিপিবি সভাপতি।

তিনি বলেন, “আমরা বঙ্গবন্ধুর প্রথম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করেছি। দ্বিতীয়বার তার আদর্শকে হত্যা করার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে আবারও যে হত্যা করা হল, তার বিরুদ্ধেও আমরা আগামীতে প্রতিবাদ চালিয়ে যাব, যা আছে কপালে।”

আলোচনা সভায় সিপিবির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লক্ষ্মী চক্রবর্তী, আব্দুল্লাহ আল ক্বাফী রতন, সহকারী সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল হক রুবেল বক্তব্য রাখেন।