আরও ৩ মামলায় জামিনের অপেক্ষা খালেদার

কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আরও অন্তত তিনটি মামলায় তাকে জামিন পেতে হবে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2018, 03:33 PM
Updated : 4 Sept 2018, 01:20 PM

এর মধ্যে শহীদের সংখ্যা নিয়ে ‘বির্তকিত’ মন্তব্য করার অভিযোগে ঢাকার একটি মানহানি মামলায় জামিন চেয়ে সোমবার হাই কোর্টে আবেদন করা হয়েছে।

কুমিল্লায় কভার্ড ভ্যানে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন সাত দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

আর কুমিল্লায় পেট্রোল বোমা হামলায় আট বাসযাত্রী নিহতের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন রুল শুনানির মধ্যেই প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তার আইনজীবীরা। 

এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজার রায়ের পর গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ওই মামলায় তিনি জামিন পেলেও অন্য মামলায় গ্রেপ্তার থাকায় তার মুক্তি হচ্ছে না।

খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী এ কে এম এহসানুর রহমান বলেন, এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ছাড়াও বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে আরও ৩৪টি মামলার তথ্য আছে তাদের কাছে। এর মধ্যে ৩১টিতে তিনি জামিন পেয়েছেন, বাকি আছে তিনটি।

“এসব মামলায় জামিন পেলেই তার কারামুক্তিতে আইনগত আর কোনো বাধা থাকবে না।”

নড়াইলের মামলায় জামিন

স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে ‘বির্তকিত’ মন্তব্য করার অভিযোগে নড়াইলের একটি মানহানি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সোমবার ছয় মাসের জামিন দিয়েছে হাই কোর্ট।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ ও বিচারপতি কাশেফা হোসেনের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

আদালতে খালেদার পক্ষে শুনানি করেন এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, কায়সার কামাল ও সগির হোসেন লিয়ন ও এ কে এম এহসানুর রহমান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এম এ কামরুল হাসান খান।

এহসানুর রহমান পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নড়াইলের জেলা ও দায়রা জজ আদালত গত ৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করলে গত বৃহস্পতিবার হাই কোর্টে জামিন আবেদন করা হয়। সে আবেদনেই আজ ছয় মাসের জামিন হল।”

নড়াইল জেলা পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও নড়াগাতি থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রায়হান ফারুকী ২০১৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর নড়াইলের আদালতে এ মামলা দায়ের করেন।

ওই বছর ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের এক আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন খালেদা জিয়া।

তিনি সেদিন বলেন, “আজকে বলা হয়, এতো লক্ষ লোক শহীদ হয়েছেন। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে যে আসলে কত লক্ষ লোক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। নানা বই-কিতাবে নানারকম তথ্য আছে।”

একাত্তরে আওয়ামী লীগ ‘স্বাধীনতা’ নয়, ‘ক্ষমতা’ চেয়েছিল দাবি করে ওই সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “তিনি (জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ চাননি।”

মামলার অভিযোগে বলা হয়, “মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা এবং জাতির জনকের গৌরবজনক ভূমিকা নিয়ে খালেদা জিয়া উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্য দিয়ে মানহানি করেছেন।”

ঢাকার মানহানি মামলায় জামিন আবেদন

শহীদের সংখ্যা নিয়ে ওই মন্তব্যের কারণে সে সময় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা হয়। এর মধ্যে ঢাকার আদালতে একটি মামলা করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী।

নিম্ন আদালতে জামিন না পেয়ে সোমবার এ মামলায় হাই কোর্টে জামিনের আবেদন করেছেন খালেদার আইনজীবীরা।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এম এ কামরুল হাসান খান সাংবাদিকদের বলেছেন, বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ ও বিচারপতি কাশেফা হোসেনের বেঞ্চে মঙ্গলবার এ আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।

২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি ঢাকার হাকিম আদালতে দায়ের করা এ মামলায় এ বি সিদ্দিকী অভিযোগ করেন, “যেহেতু ওই বক্তব্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে কটাক্ষ করা হয়েছে, স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। তাই এ ধরনের বক্তব্যে বিএনপির চেয়ারপরসন খালেদা জিয়া দণ্ডবিধির ৫০০ ধারা অনুযায়ী অপরাধ করেছেন।”

বিচারিক আদালত গত ৭ অগাস্ট খালেদা জিয়ার আবেদন নামঞ্জুর করে আদেশে বলেছিল, “আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পেন্ডিং আছে। তিনি এখনও এ মামলায় গ্রেপ্তার হননি। এ অবস্থায় আসামিপক্ষের জামিন শুনানির আবেদনটি রক্ষণীয় নয় বিধায় নামঞ্জুর করা হল।”

কুমিল্লার আবেদন নিষ্পত্তি করতে ৭ দিন সময়

কুমিল্লায় কভার্ড ভ্যানে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলায় নিম্ন আদালতে আটকে থাকা খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন সাত দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

এ মামলায় হাই কোর্ট এর আগে খালেদা জিয়াকে জামিন দিলেও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে আপিল বিভাগ ওই জামিন আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্টেকে।

তার নিষ্পত্তি করে সোমবার বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাই কোর্ট বেঞ্চ নিম্ন আদালতকে জামিন আবেদন নিষ্পত্তি করতে বলায় আগের জামিন আর থাকল না বলে আইনজীবীরা জানান।

২০১৫ সালে বিএনপি জোটের টানা অবরোধ হরতালের মধ্যে ২৫ জানুয়ারি চৌদ্দগ্রামে একটি কভার্ড ভ্যানে অগ্নিসংযোগ ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। পরে চৌদ্দগ্রাম থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

পুলিশ ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ওই মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করে। তাতে খালেদা জিয়াসহ ৩২ জনকে আসামি করা হয়।

কুমিল্লার হাকিম আদালত এ মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন নাকচ করে দিলে জজ আদালতে গিয়েছিলেন তার আইনজীবীরা। কিন্তু বিচারক শুনানির জন্য আড়াই মাস পরের তারিখ দিলে খালেদার আইনজীবীরা হাই কোর্টে আসেন।

ওই আবেদন শুনে হাই কোর্ট গত ২৮ মে খালেদার জামিন মঞ্জুর করলে রাষ্ট্রপক্ষ চেম্বার আদালতে যায়। চেম্বার আদালত জামিন স্থগিত করে বিষয়টি পাঠিয়ে দেয় আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে।

রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিলের নিষ্পত্তি করে আপিল বিভাগ ২৬ জুন জামিনের ওপর চেম্বার আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশ তুলে নেয়। কিন্তু আদেশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে হাই কোর্টে খালেদা জিয়ার আবেদনের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বলে।

সে নির্দেশনা অনুযায়ী হাই কোর্ট সোমবার গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি নিষ্পত্তি করে কুমিল্লার আদালতে সাত দিনের মধ্যে জামিন আবেদনের ফয়সালা করতে বলে।

মামলার খতিয়ান

আইনজীবী এ কে এম এহসানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নিম্ন আদালতে রায় আসা এতিমখানা দুর্নীতি মামলা বাদে ৩৪টি মামলা রয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে।

এর মধ্যে নাইকো, গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের।

বাকি ৩০টি মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যা, ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি, ভুয়া জন্মদিন পালনের মত অভিযোগ রয়েছে।

২০১৪ সালের পর বিভিন্ন সময়ে পুলিশ, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও আইনজীবীরা এসব মামলা করেন।

এর মধ্যে ২৫টি মামলা হয়েছে ঢাকায়। এছাড়া কুমিল্লায় তিনটি এবং পঞ্চগড় ও নড়াইলে একটি করে মামলা রয়েছে।

এহসান বলেন, এই ৩৪ মামলার মধ্যে ১৯টি রয়েছে অভিযোগ গঠন বা সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে। ১২টি মামলা এখনও তদন্তাধীন। তিনটি মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।