‘ইসলাম রক্ষায়’ এরশাদকে ইমাম মানলো খেলাফত মজলিস

বাংলাদেশে ইসলামী মূল্যবোধ রক্ষায় সাবেক সামরিক শাসক এইচএম এরশাদের ‘ইমামতি’ মেনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছে নারী নেতৃত্ববিরোধী ইসলামী দল খেলাফতে মজলিস।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 August 2018, 02:41 PM
Updated : 11 August 2018, 02:41 PM

রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে শনিবার একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দুই দলের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর সংবাদ সম্মেলন থেকে আনুষ্ঠানিক এ ঘোষণা আসে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ ও খেলাফতে মজলিসের আমির আল্লামা হাবিবুর রহমান এসময় সেখানে ছিলেন।

খেলাফত মজলিসের সিনিয়র মহাসচিব ইসমাঈল নূরপুরী বলেন, “দেশে ইসলামী মূল্যবোধ রক্ষায় এরশাদই একমাত্র সৈনিক। ইসলাম রক্ষার ইমামতি আমরা কোনো নারীকে দিতে পারি না। তাই ইসলাম রক্ষার এ আন্দোলনে আমরা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ইমামতি দিচ্ছি।”

আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার ‘নারী নেতৃত্বের’ বর্তমান জোট সরকারে রয়েছে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। দলটি একইসঙ্গে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায়ও রয়েছে। শুধু তাই নয় এরশাদকে বিশেষ দূতও নিয়োগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।   

ইসলামের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তৈরি এই সমঝোতা চুক্তিতে কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন না করা; হজরত মোহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী-এটা সংবিধানে যুক্ত করা; কওমি মাদরাসার সনদের সরকারি স্বীকৃতি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন; ইসলাম, নবী, রাসুল ও সাহাবিদের নামে কটূক্তিকারীদের শাস্তির বিধানসম্বলিত আইন করা; সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনর্বহাল করা এবং সব ধর্মের মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

চুক্তির পর সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ বলেন, “পৃথিবীজুড়ে ইসলাম আজ ধ্বংসের মুখে। পৃথিবীর নানা প্রান্তে মুসলমানরা আজ একে অন্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত। অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্ব মধ্যপ্রাচ্য থেকে সম্পদ আহরণ করে নিজেরা ধনী হচ্ছে। এসবের প্রতিবাদ করার কেউ নেই।”

পশ্চিমা বিশ্বের ‘ইসলামবিরোধী’ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে সম্প্রতি গঠিত নতুন রাজনৈতিক জোট ‘সম্মিলিত জাতীয় জোট’ নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাবেন বলেও ঘোষণা দেন এরশাদ।

খেলাফতে মজলিসের সঙ্গে নির্বাচনী ঐক্য প্রতিষ্ঠার পর দলটি সম্মিলিত জাতীয় জোটে অন্তর্ভুক্ত হবে বলেও তিনি জানান।

২০১৭ সালের মে মাসে এরশাদ ‘ইসলামী মূল্যবোধের’ নতুন জোট সম্মিলিত জাতীয় জোট (ইউনাইটেড ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স) গঠনের ঘোষণা দেন। তাতে যোগ দেয় জাতীয় ইসলামী মহাজোট, বাংলাদেশ জাতীয় জোট, ইসলামিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় জোট। খেলাফত মজলিসকে নিয়ে জোটভুক্ত দলের সংখ্যা দাঁড়াবে পাঁচে।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার কদিন আগে এক সভায় ঘোষণা দিয়েছিলেন, জাতীয় পার্টি এখন ৩০০ আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দিতে প্রস্তুতি শুরু করেছে।

জোটের নতুন শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল ও খেলাফতের লাঙ্গল প্রতীক, কোন প্রতীকে কে নির্বাচন করবে সেটা পরে দেখা যাবে। আমরা এখনও সে সিদ্ধান্তে পৌঁছাইনি।”

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটে জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত শেষ পর্যন্ত থাকবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সেটা ভবিষ্যতে দেখা যাবে।”

জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, খেলাফতেদ মজলিসের সিনিয়র মহাসচিব ঈসমাইল নূরপুরীসহ বিএনএ, ইসলামী মহাজোটের নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।