সড়ক পরিবহন আইনে ‘অনেক অসঙ্গতি’ দেখছেন ফখরুল

প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ায় ‘অনেক অসঙ্গতি’ আছে বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 August 2018, 04:22 PM
Updated : 7 August 2018, 04:35 PM

মঙ্গলবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে  ২০ দলীয় জোটের বৈঠকের পর এক সংবাদ ব্রিফিঙে বিএনপির মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

ফখরুল বলেন,  “এই আইনের মধ্যে অনেকগুলো  অসঙ্গতি আছে। এক নম্বর অসঙ্গতি হচ্ছে ট্রান্সপোর্টের মালিকদের সম্পর্কে খসড়া আইনে কোনো কিছু বলা নাই। দ্বিতীয় যদি কারো দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঘটে, সেখানে বলা হয়েছে, যদি হত্যার উদ্দেশ্যে, নিয়মনীতির বাইরে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনায় যদি কেউ মারা যায় তার সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছর ।”

“ছাত্রছাত্রীদের দাবি ছিল এটা মৃত্যুদণ্ড, সর্বোচ্চ শাস্তির যে দাবি ছিল সেটা এই খসড়া আইনে নাই।  এতদিন বলা হল যে, আমরা আইন আনছি, আইন করছি। এখন কিন্তু দেখা গেল যে, কোটার মতোই অবস্থা দাঁড়িয়ে গেল। আরেকটা প্রতারণা।”

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়।

প্রস্তাবিত আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় শাস্তি দুই বছর বাড়িয়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

সড়কে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ থেকে যে নয় দফা উঠেছিল, তার প্রথমটিই ছিল দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে দায়ী চালকের সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ডের বিধান করতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব সরকারের উদ্দেশে বলেন, “মন্ত্রিসভায় আইনের খসড়া অনুমোদন হয়েছে। এটা এখনো পাস হয়নি। আমরা আশা করব, এটা আইন হওয়ার আগে বিষয়টি আবার তারা বিবেচনায় নিয়ে দেখবেন এবং বিষয়গুলো শেষ করার চেষ্টা করবেন।’’

জোটের বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নিরাপদ সড়কের দাবি শিশু-কিশোরদের ওপর ক্ষমতাসীন দল ও পুলিশের হামলা, বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

রে জোটের সমন্বয়কারী নজরুল ইসলাম খান বলেন, “নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিশু-কিশোরদের ওপর পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের হামলা, আলোকচিত্রীদের ওপর নির্মম নির্যাতন, প্রবীণ আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানাচ্ছে ২০ দল। যোগাযোগ মাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও  মিডিয়ার ওপর নানা ধরনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা, জনগণের মত প্রকাশের ওপর হস্তক্ষেপ বিবেচনা করে এ থেকে সরকারকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’’

বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের নিন্দা জানিয়ে তা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে  জোটের বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ, জামায়াতে ইসলামী আবদুল হালিম, ইসলামী ঐক্যজোটের এম এ রকীব, আবদুল করীম, খেলাফত মজলিশের মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, জাগপার তাসমিয়া প্রধান, খন্দকার লুৎফর রহমান, এনডিপির খন্দকার গোলাম মূর্তজা, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এমদাদুল হক চৌধুরী, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, মুসলিম লীগের এএইচএম কামরুজ্জামান খান, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম, ডিএলের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহিউদ্দিন ইকরাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কুটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক

এর আগে বিকাল ৪টায় গুলশানের কার্যালয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কুটনীতিকদের দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ চলমান বিষয় নিয়ে ব্রিফ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ফ্রান্স ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতসহ যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, স্পেনসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য রিয়াজ রহমান, সাবিহউদ্দিন আহমেদসহ দলের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা সেখানে ছিলেন।

বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, এটি ছিল কূটনীতিকদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক।