আ. লীগ অফিসে পরিকল্পিত হামলা: কাদের

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে একদল দুর্বৃত্ত আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 August 2018, 12:48 PM
Updated : 4 August 2018, 02:14 PM

শনিবার বিকালে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দুপুরে ওই কার্যালয়ে পরিকল্পিত হামলা হয়েছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “আওয়ামী লীগ পার্টি অফিসে হামলার ঘটনায় প্রশিক্ষিতরা জড়িত ছিল। যারা হামলা চালিয়েছে, তারা সাধারণ ছাত্রছাত্রী নয়, তারা রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত।”

দুপুরে আওয়ামী লীগের ওই কার্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ধরে নেওয়ার গুজব ছড়ানোর পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল।

এর মধ্যেই আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা হয় বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানান।

দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত সংঘাতের পর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা গিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দলকে আসে আওয়ামী লীগের ওই কার্যালয়ে। পুলিশও সেখানে ছিল।

আওয়ামী লীগের কার্যালয় ঘুরে  ওই শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের জানান, দুপুরে ‘কিছু লোক’ এসে তাদের বলেছিল যে আন্দোলনকারী কয়েকজনকে আওয়ামী লীগ অফিসে আটকে রাখা হয়েছে। কিন্তু তারা ঘুরে দেখে বুঝেছে, গুজবে বিভ্রান্ত হয়েছিল তারা।

কাদের বলেন, “কারা এই সংঘাতের উসকানি দিচ্ছে, সেটাই প্রশ্ন। আমাদের কাছে তথ্য আছে, নাশকতার পরিকল্পনা ছিল। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে এখন অপরাজনীতির’ মাধ্যমে সহিংসতায় রূপ নিয়েছে।”

দুপুরের ওই ঘটনার আগেই ওই কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর এক বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন ওবায়দুল কাদের।

তাতে তিনি বলেছিলেন, শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনে রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ ঘটেছে, তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “দেশের শুভ বোধের মানুষগুলোর যারা এই মুহূর্তে ছাত্রছাত্রীদের নয় দফা যৌক্তিক মনে করেছেন..সরকার সেগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

“কিন্তু আমাদের উদ্বেগটা হচ্ছে, যৌক্তিক ইনোসেন্ট আন্দোলনের মধ্যে যখন রাজনৈতিক অপশক্তির অনুপ্রবেশ ঘটে। এই আন্দোলনে এই পর্যন্ত আমরা বার বার খবর পাচ্ছি রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ ঘটছে।”

আন্দোলনে সরাসরি অংশ নেওয়া সুলতান সোলায়মান নামের ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের এক সহ-সভাপতির ছবি দেখিয়ে কাদের বলেন, “সন্ধ্যার পরে এই কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা যখন বেশি থাকে না, তখন এদের মধ্যে এই অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে যায়। তখন তাদেরকে বাস ভাংচুরের উসকানি দেওয়া হয়।

“রাজনৈতিক ঘৃণ্য মতলব নিয়ে আজকে এই আন্দোলনের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে যৌক্তিক আন্দোলনকে অযৌক্তিক ধারায় প্রবাহিত করার জন্য, তাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য এখন তারা স্কুল-কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্যে রাজনৈতিক বিষবাষ্প ঢুকিয়ে দেশে একটা বিশৃঙ্খলা করতে চাইছে।

“দেশকে অস্থিতিশীল করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়েছে। যারা অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনে রাজনৈতিক রং চড়াতে চায়, তাদের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার জন্য আমরা অনুরোধ করছি।”

সরকার অনুপ্রবেশকারীদের কেন আইনের আওতায় আনছে না- জানতে চাইলে মন্ত্রী কাদের বলেন, “ধৈর্যের সাথে সব কিছু অবজার্ভ করছি, তাদের ভূমিকা অবলোকন করছি। যারা আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করেছে তাদের ছবিও পুলিশ ও গোয়েন্দাগুলো সংগ্রহ করছে। তাদের গতিবিধি আমরা রাজনৈতিকভাবেও দূর থেকে দেখছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন কোনো দমনমূলক পদক্ষেপ এই ছোট ছোট বাচ্চাদের ওপর নেওয়া যাবে না।

“এ কারণে পুলিশ নানা অপমান-অপদস্ত এবং হয়রানির শিকার হয়েও ধৈর্যের প্রয়াস দেখাচ্ছে। রাজনৈতিক অপশক্তির মদদ যে আছে সেটা আমরা কাছ থেকে লক্ষ্য করছি। আমরা ধৈর্য ধরছি। আমাদের বিশ্বাস কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে যাবে। দুই-একদিনের মধ্যে পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।”

ছাত্রছাত্রীদের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “দেশের শুভ বুদ্ধির অনেকেই বলেছেন সরকার দাবি মেনে নিচ্ছে। এমাজ উদ্দীন সাহেব, আবুল মকসুদ, ইলিয়াস কাঞ্চন ছাত্রছাত্রীদের ক্যাম্পাসে চলে যেতে বলেছেন।

“আর দাবি অনুযায়ী শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের সামনে আন্ডারপাসের অর্থ বরাদ্দ হয়ে গেছে। সেনাবাহিনীকে বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে বলে দিয়েছেন। ডিজাইন কমপ্লিট হয়ে গেছে। দ্রুততার সঙ্গে আন্ডারপাসের কাজ কমপ্লিট করার জন্য টেন্ডার ছাড়াই সেনাবাহিনীকে কাজ করতে বলা হয়েছে। দ্রুত কাজ যেগুলো করতে হয় সেগুলো সেনাবাহিনীকে দিয়ে করানো হয় যাতে করে কোনো জটিলতা না থাকে।”

তিনি আরও বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের দাবিগুলো যৌক্তিক মনে করে আমরা আধুনিক ডাম্বল স্পিডব্রেকার করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। সারা দেশে স্কুল কলেজের সামনে ডাম্বল স্পিডব্রেকার করা হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফিটনেসবিহীন গাড়ির রোড পারমিট বাতিলসহ যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বিআরটিএকে বলা হয়েছে। জনবল সঙ্কটের কারণে কিছুটা দেরি হতে পারে।”

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে দেখছে জানিয়ে কাদের বলেন, “দাবি মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রেও সরকার কোনো ধরনের রাখঢাক করেনি।”

শান্তির স্বার্থে সন্তানদের ঘরে ফিরিয়ে নিতে অভিভাবকদের অনুরোধ করেন ওবায়দুল কাদের।