গভর্নরের পদত্যাগ দাবি মওদুদের

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা সোনা অনিয়মের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে গভর্নর মো. ফজলে কবীরের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2018, 08:55 AM
Updated : 21 July 2018, 11:06 AM

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় বক্তব্যে এই দাবি করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক অনুসন্ধানের তথ্যের ভিত্তিতে সম্প্রতি দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, ৮০ শতাংশ বিশুদ্ধ সোনা হিসেবে দেওয়া সোনা দুই বছর পর পরীক্ষা করে তাতে ৪৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ সোনা পাওয়া গেছে। আর ২২ ক্যারেটের সোনা হয়ে গেছে ১৮ ক্যারেট।

এরপর গভর্নর ও এনবিআর চেয়ারম্যানকে নিয়ে বৈঠকের পর অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা সব সোনা ‘ঠিক আছে’।

তবে তিনি সেই সঙ্গে বলেন, যে অভিযোগ উঠেছে, তা অর্থমন্ত্রী দেশে ফিরলে ‘আইনানুগভাবে’ খতিয়ে দেখা হবে।

মওদুদ বলেন, “এই সোনা চুরির দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে পদত্যাগ করতে হবে। গভর্নরের উচিৎ হবে অবিলম্বে পদত্যাগ করা, তার নিজের সম্মান রক্ষা করার জন্য।

“উনি (গভর্নর) যদি ওই পদে থাকেন, সেখানে কোনো রকমের সুষ্ঠু তদন্ত সম্ভবপর নয়। যার কারণে তার সরে যাওয়া উচিৎ।”

এ বিষয়ে বাংলাদেশে ব্যাংকের বক্তব্য ‘গ্রহণযোগ্য’ নয় মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, “সরকারের তদন্ত সংস্থাগুলো, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে যে সোনা তামা হয়ে গেছে, সোনার পরিমান কমে গেছে।

“আর তারা (বাংলাদেশ ব্যাংক) বলছে, এটা অঙ্কে হের-ফের। এটা হতে পারে? এটা দেশের মানুষ কখনও গ্রহণ করবে না।”

২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ থেকে হ্যাকিংয়ে মাধ্যমে অর্থ খোয়া যাওয়ার পর তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমানের পদত্যাগের কথাও তুলে ধরেন মওদুদ।

তিনি বলেন, “এখন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক হয়ে গেছে সোনা চোর এবং টাকা চোরের। যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করে সমস্ত ব্যাংকগুলোকে, সেখানে তাদের ওখানে যদি ঘটনা ঘটে, তাহলে তো এখানে লুটতরাজ হবেই। সমস্ত ব্যাংকগুলোকে আজকে ফোকলা করে দেওয়া হয়েছে সরকারি দলের ব্যবসায়ী ও মদদপুষ্ট রাজনীতিবিদদের টাকা দিয়ে, ঋণ দিয়ে।”

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গ টেনে মওদুদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় অনেক মানুষ আসবে, তার জনপ্রিয়তা আজকে প্রমাণিত হবে।

“আমরা চাই যে, প্রধানমন্ত্রী, তার সরকার ও তার দলের এত জনপ্রিয়তা, তিনি (শেখ হাসিনা) একটা ঘোষণা দেবেন আজকে যে, আগামী নির্বাচন হবে একটি  নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। তাহলেই হবে এই বিরাট জনসভার স্বার্থকতা।”

সোহওরায়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকেও জনসভা করার অনুমতি দেওয়ার দাবি তোলেন মওদুদ।

তিনি বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দি থাকা অবস্থায় আমাদেরকেও জনসভা করতে দেন। আমরা প্রমাণ করব আজকে আপনাদের যে জনসভা হচ্ছে, তার চাইতে বেশি জনসমাগম হবে আমাদের সমাবেশে।

“আজকে প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাবেন। তাহলে আমরা কেন ধানের শীষে ভোট চাইতে পারব না, আমরা কেন জনসভা করতে পারব না।”

কোটা সংস্কারের বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, “সুপ্রিম কোর্টে এমন কোনো রায় নাই যে এই কোটা পদ্ধতি সংস্কার করা যাবে না। এধরনের কোনো রায় তারা দেখাতে পারবেন না।

“আমি আহ্বান জানাই আওয়ামী লীগের কোনো নেতা বা যে কোনো আইনজীবীকে, তারা এই রায়টা দেখাক। এই রায়ের অজুহাত দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী সরে এসেছেন। যে ওয়াদা দিয়েছিলেন, যে বক্তব্য তিনি সংসদে রেখেছিলেন, তিনি সেটা থেকে সরে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আমরা এটা প্রত্যাশা করি না। তাকে ভুল বোঝানো হয়েছে।”

‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক জোট’র অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘সংঘাতের রাজনীতির পথ সুশাসনের জন্য হুমকি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন মওদুদ।

সংগঠনের উপদেষ্টা সালমান ওমর রুবেলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহও বক্তব্য রাখেন।