জামায়াতকে নিয়ে ‘ষড়যন্ত্রে’ সরকার: মওদুদ

বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে সরকার ‘ষড়যন্ত্র করছে’ বলে অভিযোগ করেছেন মওদুদ আহমদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 July 2018, 01:05 PM
Updated : 20 July 2018, 01:05 PM

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীরও প্রার্থী দেওয়া নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার মধ্যে একথা বললেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ।

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে সরকার নানা ধরনের কৌশল করছেন, ষড়যন্ত্র করছেন যাতে করে আমাদের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়। বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিভিন্ন খবর দিয়ে আমাদের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

“আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, সেটা নিস্ফল হবে। আমাদের যে জোট- সেই জোট ছিল, সেই জোট আছে এবং সেই জোট থাকবে।”

সিলেট সিটি নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীকে সমর্থন দিয়েছে জামায়াত বাদে ২০ দলীয় জোটের অন্যান্য শরিকরা। সেখানে জামায়াতের মহানগর আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের প্রার্থী হওয়ায় বিষয়টি জোটের কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠকে আলোচিত হয়।

গত শনিবার জোটের বৈঠকে জামায়াতের এক কেন্দ্রীয় নেতাকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে ‘গণতন্ত্রহীনতা’ অনুধাবন করে জামায়াত ওই নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীকে জয়ী করতে কাজ করবে বলে তারা আশা করছেন।

জামায়াতের ওই নেতা বিষয়টি দলের সর্বোচ্চ ফোরামকে অবহিত করবেন বলে আশ্বাস দিলেও এক সপ্তাহেও এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা আসেনি।

বিষয়টি নিয়ে মওদুদ আহমদ বলেন, “সিলেটের একটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন-এটা এমন কোনো নির্বাচন না। তারা (জামায়াত) দলীয় একজন প্রার্থী দিয়েছেন। আমরা চেষ্টা করছি, তাদের সাথে সমঝোতায় আসতে।

“আমরা বলতে চাই, জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতি এক জিনিস আর স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতি আরেক জিনিস।”

সরকার হটাতে দেশের সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করে জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টির আশা প্রকাশ করেন মওদুদ আহমদ।

তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করেই আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি।

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন দমনে সরকারের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে মওদুদ বলেন, “আজকে কোটা আন্দোলনের চারজন রিমান্ডে আছে এবং ৮-১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও বেশিও হতে পারে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের  শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন, তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর এখন যে নির্যাতন চলছে তাতে একটা জিনিসই প্রমাণ করে যে, এই সরকার স্বৈরাচারি একটি সরকার।

“এই গণতন্ত্র হলো স্বৈরাচারি গণতন্ত্র, এই গণতন্ত্র হল এক ব্যক্তির গণতন্ত্র। এটাই তারা বার বার প্রমাণ করছে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভোল্টের সোনা নিয়ে মওদুদ আহমদ বলেন, “এটা স্বাভাবিক বাংলাদেশ ব্যাংক বলবে, এখানে কোনো চোর নাই, কোনো চুরি হয় নাই। এর আগে এই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে  প্রায় ৮০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হয়ে গেল। আগে হয়েছে টাকা চুরি, এখন হয়েছে সোনা চুরি।

“এত বড় চুরির পরও একজন সন্দেহভাজনকেও গ্রেপ্তার করা হয় নাই। কেন? নিশ্চয়ই তাহলে সরকারের মদদপুষ্ট মানুষরা এটার পেছনে রয়েছে। না হলে তো কোনো কারণ থাকতে পারে না।”

সাবেক এই আইনমন্ত্রীর মতে, দেশে এখন ‘দুই রকমের আইন’ চলে।

“এক রকমের আইন হচ্ছে সরকারের পক্ষের লোকের জন্য, আরেক রকমের আইনের প্রয়োগ হল বিরোধী দলের প্রয়োগের জন্য। আজকে দেশে যে আইনের শাসন নাই- এটাই প্রমাণ করে যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই ঘটনায় একজন মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয় নাই।”  

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য প্রাবাসী বন্ধুদের দেওয়া স্বাধীনতা পদকের ‘সোনায় খাদের’ ঘটনায়ও সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের উদ্যোগে ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি: গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং জনগণের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।

সংগঠনের উপদেষ্টা মেহেদী হাসান পলাশের সভাপতিত্বে এবং সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন, স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলনের কাজী মনিরুজ্জামান মনির, এম জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।