ভল্টের সোনা কারসাজি সরকারি লুটের আলামত: মোশাররফ

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে তিন বছর আগে জমা রাখা সোনার ওজন কমে যাওয়া নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের প্রতিক্রিয়ায় ঘটনাটিকে  ‘সরকারি লুটপাটের আলামত’  বলে নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 July 2018, 12:07 PM
Updated : 17 July 2018, 12:07 PM

দুপুরে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘‘আজকে একটি বহুল প্রচারিত পত্রিকায় খবর আছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ভুতুড়ে কাণ্ড। ৯৬৩ কেজি সোনা ভল্টে জমা ছিল। ছিল সোনার চাকতি, হয়ে গেছে মিশ্র ধাতু। ২২ ক্যারেট সোনা হয়ে গেছে ১৮ ক্যারেট সোনা।

“বাংলাদেশ ব্যাংকে এর আগে রির্জাভ চুরি হলো, আবার ব্যাংকের ভল্টে এই ধরনের ঘটনা- এটা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। এগুলো কিসের আলামত? এগুলো হচ্ছে স্বৈরাচারী সরকারের আলামত। তারা দেশটাকে লুটেপুটে খাওয়ার জন্যে যেখানে যা করা দরকার তা আজকে করছে।”

২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ব্যাংক কী ব্যবস্থা নিচ্ছে তা আমরা দেখার জন্য অপেক্ষা করছি।

“আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির হওয়ার পরে যেভাবে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, এই ভল্টের কারসাজির পর আবার যদি এরকমের ধামাচাপা দেওয়া হয় তাহলে জনগণের কাছে একদিন তাদের সকলকে জবাবদিহি হতে হবে।”

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অনুসন্ধান প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে যে, শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের পরিদর্শন কার্যক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা রাখা ৯৬৩ কেজি সোনা যাচাই করার পর গুরুতর এ অনিয়ম ধরা পড়ে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ২৩ অগাস্ট ব্যাংকের ভল্টে তিন কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের সোনার চাকতি ও আংটি জমা রাখা হয়েছিল। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে পরিদর্শন কার্যক্রমে সেই সোনা হয়ে যায় মিশ্র বা সংকর ধাতু। এর ফলে এতে সরকারের ১ কোটি ১১ লাখ ৮৭ হাজার ৮৬ টাকা ৫০ পয়সা ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

অন্যদিকে জমা রাখা ২২ ক্যারেট সোনাকে ১৮ ক্যারেট দেখিয়ে সরকারের ১ কোটি ৯০ লাখ ৮৫ হাজার ৩৪৬ টাকা ৬৭ পয়সা ক্ষতির সুযোগ তৈরি হয়েছে।

‘বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা এবং সরকারের নীল নকশা’ শিরোনামে আলোচনা সভায় মোশাররফ বলেন, ‘‘গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া, বিএনপিকে ছাড়া, জনগণকে ছাড়া নির্বাচন করার জন্য এই সরকার নীল নকশা আঁটছে।

“এ থেকে দেশকে মুক্ত করতে হলে এই স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটাতে হবে। আমরা জানি কোনো স্বৈরাচার ইচ্ছা করে সরে যায়নি, পৃথিবীতে ইতিহাস নাই।”

‘জনগণের সরকার হলেই বর্তমান সংকট থেকে জাতি মুক্তি পাবে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘আমরা বলতে চাই,  জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে আমরা দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আগামী দিনে এমন আন্দোলন সৃষ্টি করা হবে যার মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতন হবে এবং একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার অধীনে সংসদ ভেঙে দিয়ে একটি নির্বাচন হবে।

“নির্বাচনের আগে দেশনেত্রীকে মুক্ত করে তাকে নিয়েই আমরা একাদশ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। ইনশাল্লাহ জনগণ তাদের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে…।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের উদ্যোগে সংগঠনের উপদেষ্টা মেহেদি হাসান পলাশের সভাপতিত্বে ও সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমানের পরিচালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা সোয়াইব আহমেদ, বিএনপির আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, জাসাসের শাহরিয়া ইসলাম শায়লা ও নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরামের জাহাঙ্গীর আলম।