সোমবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভীর এমন মন্তব্য আসে।
তিনি বলেন, “তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে চলছে নৌকা মার্কার পক্ষে নির্বাচনী অনাচার ও ক্ষমতাসীনদের অবৈধ দাপট। সেখানে গ্রেপ্তার, গ্রেপ্তারের হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শনের প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে প্রচণ্ড মহড়া চলছে। পাশাপাশি পুলিশও বসে নেই। খুলনা ও গাজীপুরের মত আওয়ামী প্রার্থীর পক্ষে পুরোদমে নেমে পড়েছে।”
এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করলেও সেগুলো আমলে নেওয়া হচ্ছে না দাবি করে রিজভী বলেন, “তাদের (ইসি) কাছে অভিযোগ জানানো মানে অরণ্যে রোদন।”
আসছে ৩০ জুলাই রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সামনে রেখে প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। এ তিন সিটিতে এবার মেয়র পদে ভোট হচ্ছে দলীয় প্রতীকে।
গত ১৫ মে খুলনা এবং ২৬ জুন গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীদের হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।
ওই দুই নির্বাচনে ব্যাপক ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে বিএনপি বলে আসছে, আগামীতেও ক্ষমতাসীনরা ‘একই কায়দায়’ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার চেষ্টা করবে বলে তারা আশঙ্কা করছে।
রিজভী বলেন, “রাজশাহী সিটি নির্বাচনে চলছে শাসক দলের পক্ষে আওয়ামী নেতাদের নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের হিড়িক। জেলা প্রশাসক নৌকা মার্কার অনুকূলে চরম পক্ষপাতমূলক আচরণ করছেন। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ধানের শীষের অফিস ভাংচুর, অফিসের তালা ঝুলিয়ে দেওয়া, নেতা-কর্মীদের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আওয়ামী ক্যাডাররা এক আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
“বরিশাল ও সিলেটে চলছে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে হুমকি-ধামকি। বরিশালে মন্ত্রী পদ মর্যাদায় দায়িত্বে থাকার পরও আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ তার ছেলেকে (সাদেক আবদুল্লাহ) বিজয়ী করার জন্য নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করছেন; তিনি কোনো আচরণবিধিই মানছেন না।”
এই বিএনপি নেতার ভাষায়, তিন সিটির কোথও সুষ্ঠু নির্বাচনের ‘পরিবেশ নেই’। নিরাপদে ভোট দেওয়া যাবে কি না- তা নিয়েই ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা আছে।”
তিন সিটির ভোট নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, খুলনা ও গাজীপুরের মত তিন সিটিতেও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি এখনই কারচুপির সুস্পষ্ট আভাস দিলেন।”
রিজভী অভিযোগ করেন, খুলনা ও গাজীপুরের নির্বাচনে ‘নতুন ডাইমেনশনে’ ভোট কারচুপি করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের ‘জিতিয়ে দেওয়া’ হয়েছে। এ কারণে অন্যান্য রাজনৈতিক দল, স্বতন্ত্র প্রার্থী, নির্বাচন পর্যবেক্ষক আর বিশ্লেষকরা ওই ওভাটের “নতুন অভিধা দিয়েছেন খুলনা-গাজীপুর মার্কা নির্বাচন।”
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কোটা সংস্কার আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলারও সমালোচনা করেন বিএনপি নেতা রিজভী।
তিনি বলেন, “ছাত্রলীগ বিবেকহীন মনুষ্যত্বহীন উন্মাদনায় ক্যাম্পাসে এক আগ্রাসী শক্তিতে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী সরকারের ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা ছাত্রীদের ওপরও হামলা চালাচ্ছে, তাদের শুধু লাঞ্ছিত করছে না, ধর্ষণের হুমকিও দিচ্ছে। আমরা এহেন হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।”
অবিলম্বে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং মুক্তির দাবিও এ সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন রিজভী।
অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, শওকত মাহমুদ, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করীম শাহিন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।