জামায়াতের ‘অনুধাবনের’ আশায় বিএনপি

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জামায়াতে ইসলামীরও প্রার্থী থাকায় এ বিষয়ে জোট শরিক দলটির ‘বোধোদয়’ আশা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 July 2018, 04:59 PM
Updated : 14 July 2018, 05:46 PM

তার প্রত্যাশা, দেশে ‘গণতন্ত্রের মৃত্যুর’ বিষয়টি উপলব্ধি করে জামায়াতে ইসলামী নিজেদের প্রার্থীকে বাদ দিয়ে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে।

আগামী ৩০ জুলাই সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সামনে রেখে প্রচার কার্যক্রম সমন্বয়ে শনিবার ২০ দলীয় জোটের নেতাদের বৈঠকের একথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ২০ দলের শরিক দলের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। জামায়াতে ইসলামীই বলুন অথবা সাম্যবাদী দলই বলুন, আমরা সব দল এক। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল তার নিজস্ব সিদ্ধান্তে নির্বাচনে প্রার্থী দেয়।

“আমার প্রস্তাব থাকবে, আজকে দেশের যে গণতান্ত্রিক মৃত্যু, গণতন্ত্রের যে মৃত্যু হয়েছে সেই পরিস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামী তা অনুধাবন করবেন এবং অন্যান্য শরিক দল যারা আছেন তাদের সঙ্গে একমত হয়ে তারা ধানের শীষের প্রার্থী আরিফুর রহমানকে জয়যুক্ত করবেন।”

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ধানের শীর্ষের প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী ছাড়াও জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মহানগর আমীর এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।

কিছু দিন আগেও জোটের বৈঠকে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা সিলেটে একক মেয়র প্রার্থীর প্রত্যাশা জানালেও এখনও সন্তোষজনক সাড়া পাননি।

এই বিষয়টি জাতীয় নির্বাচনেও প্রভাব ফেলবে কি না সে প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, “এটার প্রশ্নই উঠে না।”

২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট ভোটে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছিল। এরপর ২০০৮ সালেও জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেয় তারা। ২০১৪ সালে বিএনপির নেতৃত্বেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন ও তা প্রতিহতের আন্দোলনে ছিল জামায়াত।

এখন জোটের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে একটি সিটি করপোরেশনে দলটির প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ কৌতূহলের সৃষ্টি করেছে।

শনিবারের এই বৈঠকেও বিষয়টি আলোচিত হয়েছিল বলে জানান জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতা নজরুল ইসলাম খান।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “জামায়াতে ইসলামীর যিনি বৈঠকে ছিলেন তাকে সবাই বলেছেন, আপনারা গণতন্ত্রের স্বার্থে বিষয়টি দেখবেন। উনার (মিটিংয়ে অংশ নেওয়া নেতা) সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা নাই। উনি বলেছেন, বিষয়টি সর্বোচ্চ ফোরামকে অবহিত করবেন।

“আমরা আশা করব, জামায়াতে ইসলামীর সিদ্ধান্ত গণতন্ত্র, ঐক্য ও জোটের প্রার্থীর বিজয়ের পক্ষে হবে। আমরা আশা করি, সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিকালে ২০ দলীয় জোটের এই বৈঠকে সিলেটসহ তিন সিটি করপোরেশনে জোটের একক প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার কর্মকৌশল নিয়ে আলোচনা হয়।

আগামী রোববার থেকে সমন্বিতভাবে প্রচার কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন জোট নেতারা। বরিশালে বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ, রাজশাহীতে এনডিপির খন্দকার গোলাম মূর্তজা এবং সিলেটে ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা এম এ রকীবের নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটি কাজ করবে।

বৈঠকে চান্দিনায় এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমেদের গাড়িতে হামলার নিন্দা ও দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার দাবি এবং জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দারের স্ত্রীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।

নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও ২০ দলীয় জোটের শরিক বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর মোবারক হোসেন, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করীম, খেলাফতে মজলিশের শেখ গোলাম আজগর, এনডিপির খন্দকার গোলাম মূর্তজা, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, হামদুল্লাহ আল মেহেদি, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, ডিএলের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।