ভারতীয় হাই কমিশনের ‘ভূমিকা’ নিয়ে রিজভীর প্রশ্ন

খালেদা জিয়ার ব্রিটিশ আইনি পরামর্শক লর্ড কার্লাইলের ‘ভারতীয় ভিসা আটকাতে’ ঢাকায় দেশটির হাই কমিশনের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 July 2018, 12:35 PM
Updated : 8 July 2018, 02:11 PM

আগামী ১৩ জুলাই নয়া দিল্লিতে ‘ফরেন করেসপন্ডেন্ট ক্লাবে’ খালেদার দণ্ড নিয়ে কার্লাইল সংবাদ সম্মেলন করবেন জানিয়ে তার আগে তাকে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেখে এই প্রশ্ন তোলেন তিনি।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “গতকাল একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় নয়া দিল্লির একটি উচ্চ পর্যায়ের সূত্র থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আইনি পরামর্শক লর্ড কার্লাইলকে ভারতে ঢোকার অনুমতি না দিতে জোরালো সুপারিশ পাঠিয়েছে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশন।

“তিনি যাতে সেখানে না আসতে পারেন সেজন্য ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনার জোরালো সুপারিশ পাঠাচ্ছেন, অদ্ভুত ব্যাপার!”

“যদি ঢাকাস্থ হাই কমিশনের জোরাল সুপারিশের কারণে লর্ড কার্লাইলের ভিসা দেওয়া না হয়, তাহলে এটা প্রমাণিত হবে যে, বেগম জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাদণ্ড দিতে এই হাইকমিশনের নেপথ্য ভূমিকা রয়েছে। তাদের (ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন) এরকম ভূমিকা দুঃখজনক এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আগ্রাসী হস্তক্ষেপ বলে আমরা মনে করি।”

বিএনপি নেতার অভিযোগের বিষয়ে ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের কোনো প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে বন্দি চেয়ারপারসনের জন্য ব্রিটিশ আইনজীবী কার্লাইলকে পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে বিএনপি।

কার্লাইলকে বাংলাদেশে আসতে সরকার বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ বিএনপির। এর মধ্যেই তার ভারতে যাওয়ার খবর এলেও সেখানেও তিনি যেতে পারছেন না বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

রিজভী বলেন, “বাংলাদেশ একটি ভোটারবিহীন সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ভারতীয় হাই কমিশনের কর্মকর্তাদের ভূমিকা ঔপনিবেশিক শাসকদের ন্যায়। ঢাকাস্থ হাই কমিশন যদি ঔপনিবেশিক শাসনের গভর্নর হাউজে পরিণত হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিপন্ন  ও সার্বভৌমত্ব এখন অতি দুর্বল।”

এই প্রসঙ্গে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসকে ‘বিএনপির মুখপাত্র’ আখ্যায়িত করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছে পাল্টা প্রশ্ন রাখেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহসচিব।

“জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছে আমাদের জিজ্ঞাসা- ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশন এখন বাংলাদেশে কোন দলের মুখপাত্র? এটা একটু আমরা জানতে চাই তার কাছ থেকে। কয়েকদিন আগে তিনি উদ্ভটভাবে বলে বসলেন এরকম কথা।”

এইচ টি ইমাম ‘চলতি হাওয়ার পন্থি’

ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমামকে উদ্ধৃত করে বিএনপিকে নিয়ে বক্তব্যের প্রতিক্রিয়াও জানান রিজভী।

এইচ টি ইমাম (ফাইল ছবি)

তিনি বলেন, “এইচ টি ইমাম বলেছেন, ‘বিএনপি ভারতের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে, বিএনপি হচ্ছে চীন ও পাকিস্তানপন্থি’। তার এই উদ্ভট বেহায়াপনায় বাংলাদেশিরা হতবাক ও স্তম্ভিত।”

“জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় থাকতে নতজানু হয়ে লেজ নাড়িয়ে ভারতীয় কৃপা আদায়ের জন্য এইচ টি ইমামসহ আওয়ামী মন্ত্রী ও নেতারা এমন ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করছেন,” বলেন রিজভী।

আওয়ামী লীগেরও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচ টি ইমামকে নিয়ে রিজভী বলেন, “এইচ টি ইমাম হচ্ছেন রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘চলতি হাওয়ার পন্থি’। আপনারা শেষের কবিতা উপন্যাস যদি পড়ে থাকেন সেখানে ওই কথাটি আছে ‘চলতি হাওয়ার পন্থি’।

“মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের রক্তাক্ত লাশ ডিঙিয়ে আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিলেন এই এইচ টি ইমাম। যখন যে হাওয়া বয়ে যায়, সেই হাওয়ার সাথেই গা ভাসিয়ে দেন এই এইচ টি ইমামরা। বর্তমান এই দুঃশাসকে টিকিয়ে রাখার মূল হোতাদের একজন হচ্ছে এই এইচ টি ইমাম।”

‘ভারত বিএনপিকে সুযোগ দেবে না’- এইচ টি ইমামকে উদ্ধৃত করে এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, “ভারত সুযোগ দেওয়ার কে? বাংলাদেশের মালিক বাংলাদেশের জনগণ। সুযোগও দেবে বাংলাদেশের জনগণ। ভারতের এখানে কী করার আছে?

“এটা আপনাদের (এইচ টি ইমাম) ব্যাপার হতে পারে। আপনার  বক্তব্যে বোঝা যায়, বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তনের চাবিকাঠি ভারত। আর সেজন্যই প্রভুদের কাছে দেন-দরবার শুরু করেছেন। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে প্রভুদের কাছে আকুতি-মিনতি করছেন।”

“কিন্তু দেশের জনগণ আর আপনাদের সেই সুযোগ দেবে না,” ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে বলেন এই বিএনপি নেতা।

সংবাদ সম্মেলনে রিজভীর সঙ্গে ছিলেন শাহজাদা মিয়া, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আবদুস সালাম আজাদ, বেলাল আহমেদ, সামসুজ্জামান সুরুজ, হুমায়ুন ইসলাম খান।