বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান বার্নিকাটের

আওয়ামী লীগের সমালোচনার মুখে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বাংলাদেশের পাশাপাশি তার দেশের সরকার ও জনগণের প্রতিও অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2018, 07:09 PM
Updated : 3 July 2018, 07:26 PM

মঙ্গলবার দূতাবাসে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমাদের উভয় দেশের সংবিধানে এই ধারণা সন্নিবেশিত আছে যে, সকল মানুষ জন্মগতভাবে সমান। তাদের চিন্তা, উদ্ভাবন আর নিজেদের প্রকাশ করার সুযোগ ও স্বাধীনতা দেওয়া হলে অপার সম্ভাবনার সৃষ্টি হবে।

“এ বছরের শেষভাগে আমাদের উভয় দেশেই এসব মূল্যবোধের একটা পরীক্ষা হতে যাচ্ছে। উভয় দেশের নাগরিকেরাই ব্যালটবাক্সে নিজেদের মতের প্রতিফলন ঘটাবে, যা হবে স্বশাসনের সত্যিকারের বহিঃপ্রকাশ।”

বার্নিকাট বলেন, “যেহেতু বাংলাদেশে আমার মেয়াদ শেষ হতে চলেছে, আমি বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশের জনগণের কাছে একই আহ্বান জানাই যা আমার নিজের সরকার ও আমাদের দেশের মানুষের প্রতি জানিয়েছি সহিংসতাহীন, অবাধ, ‍সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা করার জন্য; যাতে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে।”

গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বার্নিকাটের মন্তব্যের জের ধরে তার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় একটি ফেইসবুক পোস্ট দেন।

তিনি লেখেন, “বাংলাদেশে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস অনেকটা বিএনপির মুখপাত্রে পরিণত হয়েছে।

“সম্প্রতি গাজীপুরে অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মন্তব্যগুলোই তারা পুনরাবৃত্তি করছে এবং অনিয়মের কথা বলছে অথচ নির্বাচনে বিএনপির সহিংসতা চালানোর চেষ্টা নিয়ে কিছুই বলছে না।”

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জয় দেশটির পররাষ্ট্র নীতির কথা মনে করিয়ে দিয়ে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সরকারের নীতি হচ্ছে অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানো।

“তাই বক্তব্যটি বাংলাদেশে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসেরই বলে ধরে নেওয়া যায়। বোঝাই যাচ্ছে দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ তাদের বিএনপির বন্ধুদের সাথে খুব বেশি সময় কাটাচ্ছেন আজকাল।”

সম্প্রতি ঢাকায় কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সঙ্গে এক আলোচনায় বার্নিকাট বলেন, নির্বাচনে অনিয়ম এবং বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতা ও পোলিং এজেন্টদের হয়রানির খবরে তার দেশ উদ্বিগ্ন।

এর প্রতিক্রিয়ায় দুই দেশের সম্পর্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এমন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে মার্কিন দূতের প্রতি আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

“উভয় দেশের জনগণের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এমন মন্তব্য থেকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, তাহলে বিদ্যমান বন্ধুত্বের সম্পর্ক ঠিক থাকবে,”বলেন তিনি।

শিগগিরই বাংলাদেশে মেয়াদ শেষ হতে চলা বার্নিকাট বলেন, “বাংলাদেশ ছাড়ার সময় আমি কষ্ট পাব। তবে আমি ইতোমধ্যে জেনেছি, আমি আবার আসব। যখন আবার আসব তখন এক অন্য দেশ দেখার আশা করি, আরও অগ্রসর ও উন্নত বাংলাদেশ।”

যুক্তরাষ্ট্রের ২৪২তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার সদস্য, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা এবং গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

মার্শা বার্নিকাট বলেন, “এ বছর বিশ্ব বাংলাদেশকে নাসা ও স্পেসএক্স-এর সহায়তায় বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ করতে দেখল। বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে দ্রুতগতির অভিযাত্রায় এটা এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। বাংলাদেশি জনগণের অদম্য সংকল্প আর সৃষ্টিশীলতার এক টি খাঁটি নজির এটি।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশি জনগণের প্রজ্ঞা ও প্রত্যয় দ্বারাই একটি স্বাধীন, ধর্ম নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্ম সম্ভব হয়েছিল। সাতচল্লিশ বছর পর সেই একই প্রজ্ঞা আর প্রত্যয় এখন মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপন সম্ভব করেছে।

“আমি বিশ্বাস করি, সেই একই প্রজ্ঞাও প্রতিটি ভবিষৎ প্রজন্মের জন্য সোনার বাংলার স্বপ্ন পূরণ করবে।”