কুমিল্লার হত্যা মামলায় খালেদার জামিন স্থগিতই থাকছে

কুমিল্লায় পেট্রোল বোমায় বাস পুড়িয়ে মানুষ হত্যার মামলায় খালেদা জিয়াকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিতই থাকছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 July 2018, 04:34 AM
Updated : 2 July 2018, 05:08 AM

ওই জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেয়।

আদেশে বলা হয়, খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নে হাই কোর্ট যে রুল দিয়েছিল, চার সপ্তাহের মধ্যে তার নিষ্পত্তি করতে হবে। সে পর্যন্ত জামিনের ওপর চেম্বার আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে।

এর ফলে অন্য সব মামলাতেও যদি জামিন হয়, তারপরও আগামী এক মাসে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ থাকছে না।   

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাদণ্ডের রায়ের পর সাড়ে চার মাস ধরে বন্দি খালেদা জিয়া ইতোমধ্যে ওই মামলায় সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। কিন্তু কুমিল্লার নাশকতার দুটিসহ কয়েকটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোয় তার মুক্তি আটকে যায়।

সেই পথ খুলতে মামলাগুলোতে হাই কোর্টে জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। গত ২৮ মে হাই কোর্ট কুমিল্লার এ মামলায় জামিন মঞ্জুর করলে ঈদের আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির বিষয়ে আশাবাদী হয়ে ওঠেন দলটির নেতারা।

কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে চেম্বার আদালত ওই জামিন স্থগিত করে দেয়। পরে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চ ওই স্থগিতাদেশ বহাল রেখে ২৪ জুন লিভ টু আপিল শুনানির তারিখ দিলে ঈদের আগে খালেদার মুক্তি আটকে যায়।

এর ধারাবাহিকতায় অবকাশ ও ঈদের ছুটি শেষে গত ২৪ জুন সুপ্রিম কোর্ট খোলার পর লিভ টু আপিলের শুনানি শুরু হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং খালেদা জিয়ার পক্ষে এজে মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মাহবুব হোসেন, মওদুদ আহমেদ, জয়নুল আবেদীন ও মাহবুব উদ্দিন খোকন এ শুনানিতে অংশ নেন।

মাহবুবে আলম শুনানিতে বাস পুড়িয়ে মানুষ হত্যার ওই ঘটনার ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে বর্ণনা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে।

তিনি বলেন, “এতবড় নৃসংশ ঘটনায় করা মামলার প্রধান ব্যক্তি হওয়ার পরও যদি তাকে জামিন দেওয়া হয়, তবে এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তি ব্যক্তি ও তাদের পরিবারগুলোর কছে কী বার্তা যাবে? ফলে আমার আরজি হল, হাই কোর্টের দেওয়া জামিন বাতিল করা হোক।”

অন্যদিকে খন্দকার মাহবুব শুনানিতে বলেন, “খালেদা জিয়ার সম্মানহানী করতেই পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। বিরোধীদলের ওপর দোষ চাপিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে সরকারের এজেন্টরা পেট্রোল বোমা মেরে নাশকতা করেছে। তার দায়-দায়িত্ব বেগম খালেদা জিয়ার না।

খালেদা জিয়া ৭০ বছর বয়সী ‘অসুস্থ একজন নারী’ এবং তিনি ‘জীবন ঝুঁকিতে রয়েছেন’- এমন যুক্তি দেখিয়ে তার জামিন বহাল রাখার আবেদন করেন এই আইনজীবী।

দশম সংসদ নির্বাচনের বছরপূর্তিতে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করতে বাধা পেয়ে দলীয় কার্যালয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় থেকে সারাদেশে লাগাতার অবরোধ ডাকেন খালেদা জিয়া।

সেই অবরোধের সঙ্গে হরতাল চলে টানা ৯০ দিন। ওই কর্মসূচিতে বহু গাড়ি পোড়ানো হয়, অগ্নিসংযোগ হয় বিভিন্ন স্থাপনায়। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায় শতাধিক মানুষ।

তখন নাশকতার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অসংখ্য মামলা করে। তার মধ্যে বেশ কয়েকটিতে খালেদাকে হুকুমের আসামি করা হয়; কুমিল্লার এই মামলা তারই একটি।

২০১৫ এর ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুরে কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী আইকন পরিবহনের একটি বাসে পেট্রোল বোমা হামলা হলে দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় আটজনের।

চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান হাওলাদার পরদিন বিএনপি-জামায়াতের ৫৬ জনের নাম উল্লেখ করে, আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি দেখিয়ে মামলা করেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সেখানে হুকুমের আসামি করা হয়।

তদন্ত শেষে গতবছর আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে খালেদা জিয়াসহ মোট ৭৮ জনকে আসামি করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ফিরোজ আহমেদ।

বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে আসছেন, সরকারই ‘ষড়যন্ত্র’ করে খালেদা জিয়ার মুক্তি আটকে রেখেছেন। তবে তা প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিষয়টি পুরোপুরি আদালতের বিষয় এবং তার উপর সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।