সরকারের মুখোশ উন্মোচন হয়েছে, ভোটে এটাই লাভ: ফখরুল

বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন ‘সম্ভব না’- এটা জানাতেই সাম্প্রতিক সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে বিএনপি প্রার্থী দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 June 2018, 01:53 PM
Updated : 29 June 2018, 10:14 AM

গাজীপুরের নির্বাচনকে ‘জাল ভোটের উৎসব’ আখ্যায়িত করার পরও আসন্ন তিন সিটির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে বৃহস্পতিবার এক আলোচনা সভায় ফখরুলের এ মন্তব্য আসে।

তিনি বলেন, ‘‘এই দুইটা নির্বাচন (খুলনা ও গাজীপুর) হওয়াতে লাভটা কী হয়েছে? সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মুখোশ উন্মোচন হয়ে গেছে। তার প্রমাণ আজকে দেখেন- সকল জাতীয় দৈনিকগুলোতে কীভাবে গাজীপুরে নির্বাচনের খবর এসেছে।

“তার প্রমাণ…আজকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের দোতলায় একটি অনুষ্ঠানের যুক্তরাষ্ট্রর রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেছেন যে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। খুলনা ও গাজীপুরের মতো নির্বাচন কখনোই মেনে নেওয়া যাবে না।”

জাতীয় প্রেসক্লাবে কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিক্যাব আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন  নির্বাচনে   ‘অনিয়ম’ নিয়ে  উদ্বেগ প্রকাশ করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ২০১৪ সালের  ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করলেও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে মির্জা ফখরুল বলেন, “নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ফলে এটা হচ্ছে এচিভমেন্টস। দেশের মানুষ জানছে এ সরকারের অধীনে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।

“সুতরাং আন্দোলন আপনার আরও জোরদার হবে, যুক্তি আপনারা আরও জোরদার হবে এবং সেই সঙ্গে বহির্বিশ্বেরও সমর্থন পাবেন।”

আসন্ন রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য প্রার্থী চূড়ান্ত করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘সরকার ও নির্বাচন কমিশন যদি এ আচরণ কনটিনিউ করতে থাকে তাহলে সেই নির্বাচন আমরা থাকব কি না সিদ্ধান্ত নেব।”

বিএনপির বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান তুলে ধরে ফখরুল বলেন, এখন তাদের লক্ষ্য আন্দোলন সৃষ্টি এবং সেই আন্দোলনের বিষয়ে একটি জাতীয় ঐক্য তৈরি করা।

“আমরা ইতোমধ্যে জাতীয় ঐক্যের কাজ শুরু করেছি, জাতীয় ঐক্যের কাজ চলছে। আমরা আশা করি এটাতে সফল হওয়া যাবে।”

আর সেই ঐক্যের প্রক্রিয়া সফল হলে সরকার টিকতে পারবে না দাবি মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আপনাদেরকে আমরা এটুকু বলতে পারি, আজকে সবাই সচেতন হয়ে উঠেছেন যে, আজকে দেশে যে অবস্থা চলছে তা চলতে দেওয়া যায় না। আজকের এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে সকলেরই একটা ঐক্য দরকার।  

“আর এটাতে যদি সফল হওয়া যায়, ইনশাল্লাহ আওয়ামী লীগ তিন দিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না।”

এ লক্ষ্যে দলের নেতা-কর্মীদের সংগঠিত হয়ে ‘রাজপথে’ আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘‘জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হলে সেই ঐক্যই আমাদেরকে আন্দোলনের পথে নিয়ে যাবে। আর ঘরের ভেতরে নয়, সাহস করে নামুন। রাজপথে যু্বক-তরুণদের জমায়েত বাড়াতে হবে। নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হোন, সংগঠন শক্তিশালী করেন।”

‘গোটা দেশ শরণার্থী’

জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু মুক্তি পরিষদের উদ্যোগে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও যুব দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর মুক্তির দাবিতে এই সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এরা (সরকার) বাংলাদেশকে কোন দেশে পরিণত করেছে যে, আজকে হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতা-কর্মী জেলের মধ্যে কাটাচ্ছে। বিরোধী নেতা-কর্মীরা শান্তিতে  একটু বাসায় থাকতে পারে না। বেশিরভাগই শরণার্থী হয়ে পড়েছে, অন্য এলাকায় চলে যায়, অন্য এলাকায় থাকতে হয়।

কারাগারে বন্দি খালেদা জিয়াকে আন্দোলনের মাধ্যমেই মুক্ত করে আনা হবে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘‘আজকে জাতিসংঘের মহাসচিব আসছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখতে। গোটা বাংলাদেশের মানুষ তো আজ শরণার্থী, শুধু রোহিঙ্গারা নয়। জাতিসংঘ মহাসচিবসহ সকলেরই আজকে বাংলাদেশে আসা উচিৎ এটা দেখতে যে কী কারণে মানুষ আজকে নিজ দেশে শরণার্থীতে পরিণতি হয়েছে।”

সভায় উপস্থিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কমিটি গঠনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘এখন আমি দলের মধ্যে শুনি দুই দিন পর পর- কমিটি দিয়ে দিছে। আরে ভাই সম্মেলন ছাড়া কমিটি দেয় কীভাবে?

বিএনপি ও সব অঙ্গসংগঠন থেকে ‘কমিটি দেওয়া-নেওয়ার প্রথা উঠিয়ে ফেলতে হবে’ বলে মন্তব্য করেন মহাসচিব। 

তিনি বলেন, “কমিটি হবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে কমিটি, গণতান্ত্রিকভাবে কমিটি বা সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি যদি খারাপও হয়, তা যে কোনো পকেট কমিটির চাইতে অনেক ভালো হয়।”

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘এই সরকার  দলের সম্মেলন করতে দিচ্ছে না। ঠিক আছে, যদি সম্মেলন করতে না দেওয়া হয় আমরা অত্যন্ত কৌশলীভাবে আলোচনা করে কমিটি করতে পারি। দলের সর্বস্তরে এটা করতে হবে। যদি সব কমিটি করতে পারেন এই সরকার টিকে থাকতে পারবে না।”

সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি মোরতাজুল করীম বাদরুর সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নের পরিচালনায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, যুব দলের দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহিন আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।

আরও খবর