মুহিতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ রওশন

ব্যাংক খাতে ‘বিশৃঙ্খলা’ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের ধারাবাহিক সমালোচনায় রুষ্ট অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন দলটির নেতা রওশন এরশাদ।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2018, 02:41 PM
Updated : 27 June 2018, 04:21 PM

তার মতে, দেশে মুহিতের মতো ‘গুণী’ লোকের অভাব।

তাই মুহিত অবসরে যেতে চাইলেও তাকে ছাড়তে চান না সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন।

অর্থমন্ত্রী মুহিত গত ৭ জুন সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট দেওয়ার পর থেকে তার সমালোচনায় সোচ্চার জাতীয় পার্টির নেতারা।

ঋণ অনিয়মে হাজার হাজার কোটি টাকা বেহাত হয়ে ধুঁকতে থাকা ব্যাংক খাতকে বাজেটে সুবিধা দেওয়ার সমালোচনা করছেন তারা। সংসদে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থ লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য মুহিতের কড়া সমালোচনা করেন জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন সদস্য।

তাদের সমালোচনাকে ‘উগ্র’ আখ্যা দিয়ে এ বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন মুহিত।

তিনি মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, “বিরোধী দল হিসেবে তাদের একটা ভূমিকা রাখা প্রয়োজন, এর সঙ্গে এটাও মনে রাখা উচিত যে বিরোধী দল হলেও আপনারা কোয়োলিশনের অংশ, এটা বক্তারা ভুলে যান।”

তার এই বক্তব্যের পরদিন বুধবার রওশন এরশাদ জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে মুহিতের গুণকীর্তন করলেন। রওশনের স্বামী সাবেক সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদ সরকারেরও অর্থমন্ত্রী ছিলেন।

রওশন বলেন, “অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এটা তার শেষ বাজেট। এটা উনি কেন বলেছেন? আপনাকে আমরা ছাড়ব না। আপনার মতো গুণী-জ্ঞানী ব্যক্তি আমরা পাব কোথায়?”

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত (ফাইল ছবি)

অর্থমন্ত্রী মুহিত এ সময় রওশনের সামনের আসনেই ছিলেন।

সাবেক আমলা মুহিত ১৯৮২-৮৩ সালে তৎকালীন সামরিক শাসক এরশাদের সরকারে অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

২০০১ সালে নিজের এলাকা সিলেট থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে হেরে যান মুহিত। এরপর ২০০৮ সালে সেখান থেকেই ভোটে জিতে আসেন সংসদে, নেন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পরও তাকে অর্থমন্ত্রী করেন শেখ হাসিনা।

বর্তমানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মুহিত এবার নিয়ে টানা দশম বাজেট দিলেন।  ৮৫ বছর বয়সী অর্থমন্ত্রী ইতোমধ্যে এই বাজেটকেই তার শেষ বাজেট বলেছেন।

এর আগেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আগামী নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা বলেছিলেন মুহিত। ছোট ভাই জাতিসংঘের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে আবুল মোমেনকে প্রার্থী হিসেবেও তিনি পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন কয়েকটি অনুষ্ঠানে।

বাজেট আলোচনায় জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান রওশন আরও বলেন, “এটা এই সংসদের শেষ বাজেট। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ নির্বাচন। মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাচ্ছি, দশবারের মত বাজেট উপস্থাপন করেছেন। যে দেশ ছিল তলাবিহীন ঝুড়ি সেই দেশের বাজেট প্রণয়ন করা সহজ নয়।”

রওশন তার বক্তব্যে পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্পে বারবার বরাদ্দ প্রাক্কলনের সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, “বড় প্রকল্পগুলোকে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পদ্মা সেতুতে রেলওয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হল। নদী শাসনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হল। এইগুলো বাদ দিয়ে কি প্রাক্কলন করা হয়?

“বারে বারে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। একসাথে সমন্বয় করে সবগুলো করা হয় না কেন? যখনই পরিকল্পনা নেওয়া হবে তখন একসাথে সবগুলো হিসাব করতে হবে।”

করজালের আওতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এক কোটির উপর লোক আয়কর দিতে পারে। তাদের উদ্বুদ্ধ করতে পারলে তারা আয়কর দেবে। কর হার না বাড়িয়ে, বিদেশি সাহায্য না নিয়েও বাজটের আকার দ্বিগুণ করা যায়। আয়কর যদি বাড়ানো যায়, ভ্যাটের আওতা বাড়ানো গেলে বড় বাজেট বাস্তবায়নে সক্ষম হবে।”

শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে রওশন বলেন, “আমাদের দেশের শিক্ষা খাত হচ্ছে সবচয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নানা আলোচনা আছে। বড় সমস্যা হচ্ছে- বরাদ্দের পরিমাণ খুবই অল্প।

“এই স্বল্প পরিমাণ বরাদ্দ সরকার কেন করছে? উৎপাদনশীল নয় এমন বহুখাতে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়। শিক্ষা খাতে আরও বেশি বরাদ্দ দেওয়া উচিত। শিক্ষায় অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে।

কোটা পদ্ধতির সংস্কার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, “কোটা নিয়ে অনেক সমস্যা ছিল। তারপর কী করবেন, বিবেচনা করে দেখতে হবে। কিভাবে সমাধান করবেন সবাই তা জানতে চান। মুক্তিযোদ্ধা কোটা কমানো যাবে না। যেমন করেই হোক কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে হবে।”