গাজীপুরের ভোটে বিএনপির জনবিচ্ছিন্নতা প্রমাণিত হয়েছে: কাদের

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি প্রকারান্তে সেখানকার জনগণের প্রতি চরম অসম্মান করেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2018, 10:10 AM
Updated : 27 June 2018, 10:18 AM

বিএনপি যে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে, তা গাজীপুরের ভোটে প্রমাণিত হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

বুধবার সকালে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অবসরপ্রাপ্ত মেজর মিজানুর রহমান মিজান গ্রেপ্তার হওয়ার প্রসঙ্গও টানেন কাদের।

ভোটের আগের দিন এক ব্যক্তির সঙ্গে মিজানের কথিত টেলি কথোপকথনের দুটি অডিও ক্লিপ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার পর সোমবার মধ্যরাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গুলশানের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “বিএনপি নৌকার ব্যাজ লাগিয়ে ভোট সন্ত্রাস করেছে, যা তাদের একজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে শিমুলিয়ার স্থানীয় নেতার ফোনালাপে বেরিয়ে এসেছে। তা থেকে প্রমাণিত বিএনপি বরাবরের মত পরিকল্পিতভাবে অরাজকতা, সন্ত্রাস, বিশৃঙ্খলা করার, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র করেছে এবং তাদের ষড়যন্ত্র জাতির সামনে উঠে এসেছে।

“বিএনপি কর্মীদের নৌকার ব্যাজ লাগানোর নির্দেশনা দিয়েছে সেটাও দেশবাসীর কাছে দিবালোকের মত পরিষ্কার। নাশকতার অপরাজনীতি ধরা পরার পরও কি বিএনপি নেতাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে না?”

তিনি বলেন, “বিএনপির নেতারা বুঝতে পারেনি ভীতি সঞ্চার করে জনগণের মতামত পরিবর্তন করা যায় না। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপি নেতৃবৃন্দের বোঝা উচিৎ লুটেরাদের দল, দুর্নীতিবাজদের দল ক্রমাগত জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। খুলনার পর এখন গাজীপুরের ফলাফল এর প্রমাণ।”

গাজীপুরে ভোট ডাকাতির মহোৎসব হয়েছে বলে বিএনপির করা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে কাদের বলেন, “তাদের নালিশ গাজীপুরের মানুষ গ্রহণ করেনি। এখন গাজীপুর নিয়ে একটা আন্দোলন করুক না, দেখুক জনগণ সাড়া দেয় কিনা? দেবে না। বাংলাদেশের মানুষ গাজীপুরের নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও প্রমাণ করেছে নেতিবাচক রাজনীতির দিন শেষ, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির দিন শেষ, বোমাবাজি-লুটপাটের রাজনীতির দিন শেষ।

“গাজীপুরে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে। সেখানে ভোট ডাকাতির উৎসব হয়ে বলে তারা (বিএনপি) প্রকারান্তরে গাজীপুরের জনগণের অধিকার, গণতান্ত্রিক রীতিনীতির প্রতি চরম অসম্মান করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।”

মঙ্গলবার গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ৪২৫ কেন্দ্রের মধ্যে ৪১৬টিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ৪ লাখ ১০ ভোট পেয়েছেন। বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার পেয়েছেন এক লাখ ৯৭ হাজার ৬১১ ভোট।

‘ক্লিন ইমেজের’ প্রার্থীর দেওয়ায় আওয়ামী লীগ অর্ধেক এগিয়ে ছিল দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে বিএনপির প্রার্থীকে মিলিয়ে দেখুন। জাহাঙ্গীর আলম ক্লিন ইমেজের, আর বিএনপির প্রার্থীর অবস্থা আপনারা জানেন।”

বিএনপি হারের পর শিষ্টাচার বহির্ভূত বক্তব্য দিচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, “গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হওয়ার পরও এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য বিএনপি নেতারা শিষ্টাচার বহির্ভূত ভিত্তিহীন কুৎসিৎ মিথ্যাচারে লিপ্ত রয়েছে।”

বিএনপিকে নির্বাচনে অনিয়মের প্রমাণ দেওয়ার চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কাদের বলেন, “বিএনপি নেতারা কখনও নয়াপল্টন কার্যালয়ে কখনও নির্বাচন কমিশন অফিসে বসে ক্রমাগত মিথ্যাচার করেছে। তারা সকালে বলে ২১টি কেন্দ্র থেকে তাদের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে, বিএনপি অফিস থেকে বলে একশটি কেন্দ্র থেকে আবার সন্ধ্যা গড়াতে গড়াতে এই সংখ্যা দুইশ আবার গভীর রাতে বলে চারশ কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়েছে। তাহলে বলুন কোনটা বিশ্বাস করবেন।

“অনিয়ম যেটা সেটাকে আমরাও অনিয়ম হিসেবে মেনে নিয়েছি। আজকে কাউন্সিলর প্রার্থীদের দ্বন্দ্বের কারণে নয়টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত রাখা হয়েছে। এই নয়টি কেন্দ্র ছাড়া কোথায় কোথায় অনিয়ম হয়েছে এটা বিএনপিকে বলতে হবে। অন্ধকারে ঢিল ছুড়লে হবে না।”

বিএনপি নেতাদের নেতিবাচক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এনামুল হক শামীম, দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন উপস্থিত ছিলেন।