গাজীপুরে ভোট শেষে গণনা

বড় ধরনের গোলযোগ ও সহিংসতা ছাড়াই গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2018, 10:36 AM
Updated : 26 June 2018, 03:39 PM

তবে জোর করে ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ভরার চেষ্টা ও অনিয়মের ঘটনায় নয়টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন।

এছাড়া আরও বিছু কেন্দ্রে গোলযোগ, অনিয়ম, এজেন্টদের বাধা ও নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

১১ লাখ ৩৭ হাজার ভোটারের এ সিটির ৪২৫টি ভোট কেন্দ্রে মঙ্গলবার সকাল ৮টায় একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এরপর কেন্দ্রে কেন্দ্রে শুরু হয় গণনা।

অবশ্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা কেন্দ্রের চৌহদ্দির মধ্যে পৌঁছেছেন, তাদের সবার ভোটই নেওয়া হবে বলে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। 

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলেছে, নির্বাচন ‘ভালো’ হয়েছে। কয়েকটি কেন্দ্র বন্ধ হলেও এ নির্বাচনকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না’।

অন্যদিকে বিএনপি শতাধিক কেন্দ্রে অনিয়ম, জাল ভোট দেওয়ার এবং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ এনে নির্বাচন বন্ধের দাবি জানিয়েছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিবউদ্দিন মণ্ডল সাংবাদিকদের বলেন, ৪২৫টি কেন্দ্রের মধ্যে নয়টির ভোটগ্রহণ তারা স্থগিত করেছেন।

কেন্দ্রগুলো হল- ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের গাজীপুরের ভোগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র-১ (৯৮ নম্বর কেন্দ্র), ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে পর্শিচম জয়দেবপুরের মদিনাতুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসা-১ (১৬৬ নম্বর কেন্দ্র), ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের কুনিয়া হাজী আব্দুল লতিফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি কেন্দ্র (২৪৩ ও ২৪৪ নম্বর কেন্দ্র), ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের বিন্দান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (২৭৪ নম্বর কেন্দ্র), ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের জাহান পাবলিক দত্তপাড়া কেন্দ্র (৩৪২ নম্বর কেন্দ্র), ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের খরতৈল মনসুর আলী আদর্শ বিদ্যালয়ের দুটি কেন্দ্রে (৩৭২, ৩৭৩ নম্বর কেন্দ্র), ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী পিয়ারআলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৩৮১ নম্বর কেন্দ্র)।

এসব কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ২৩ হাজার ৯৫৯ জন বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

বিকালে ঢাকায় নির্বাচন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, “কমিশনের নির্দেশনা ছিল- কোথাও বিন্দুমাত্র অনিয়ম পেলে বন্ধ। কমিশন বলেছিল- অনিয়ম বরদাশত করা হবে না। এজন্যে অনিয়ম বরদাশত করা হয়নি। ইসির সঙ্গে আলাপ করে প্রিজাইডিং অফিসাররা নয়টি কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে। বাকি ৪১৬টি কেন্দ্রে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং উৎসবের মাধ্যমে ভোট শেষ হয়েছে।”

বেলা ১২টা পর্যন্ত ভোট শেষে নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ইভিএমের ছয় কেন্দ্রে ২৮ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে।

আর অধিকাংশ কেন্দ্রে গড়ে ২৭ থেকে ২৯ শতাংশ ভোট পড়েছে জানিয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মাসুদুল হক বলেছিলেন, দিন শেষে ৫৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়বে বলে তিনি আশা করছেন।

তবে ভোটগ্রহণ শেষে ভোট পড়ার হার নিয়ে কোনো তথ্য নির্বাচন কমিশন দেয়নি।

গাজীপুরে পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, “শান্তিপূর্ণভাবে ভোট শেষ হয়েছে। এখন ভোট গণনা ও ফল ঘোষণার জন্যে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।”

বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে স্থাপিত রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ফলাফল ঘোষণার সব প্রস্তুতি শেষ করার কথা জানিয়েছন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।

এক নজরে গাজীপুর সিটি নির্বাচন

>> ওয়ার্ড: সাধারণ ওয়ার্ড ৫৭টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৯টি।

>> প্রতিদ্বন্দ্বী: মেয়র পদে ৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৫৬ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৮৪ জন।

>> কেন্দ্র ও ভোটকক্ষ: ৪২৫টি ভোট কেন্দ্র, তাতে ভোট কক্ষ ২৭৬১টি।

>> ভোটার: ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ জন; ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন নারী

>> ইভিএম: ছয়টি কেন্দ্রে (১৫৪, ১৫৫, ১৭৪, ১৭৫, ১৯১ ও ১৯২) ভোট হয়েছে নতুন ইভিএমে।

এ সিটির মেয়র পদের প্রার্থী হিসেবে রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকারের বিপরীতে এবার ৩৯ বছর বয়সী জাহাঙ্গীর আলমকে বেছে নেয় আওয়ামী লীগ।

৭০ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা হাসান সরকার এরশাদের সামরিক শাসনামলে দুই দফায় সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন টঙ্গী পৌরসভা চেয়ারম্যান হিসাবে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাসান সরকার এক মেয়াদে গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও ছিলেন।

তার চেয়ে ৩১ বছর কম বয়সী ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম গত মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী হতে চেয়ে আলোচনায় আসেন।

গতবার বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী আবদুল মান্নানের কাছে হেরে যাওয়া আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানকে বাদ দিয়ে এবার তরুণ এই নেতাকে নির্বাচনী টিকেট দেয় ক্ষমতাসীন দল।

অন্য মেয়র প্রার্থীরা হলেন- মিনার প্রতীকে ইসলামী ঐক্য জোটের ফজলুর রহমান, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. নাসির উদ্দিন, মোমবাতি প্রতীকে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. জালাল উদ্দিন, কাস্তে প্রতীকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কাজী মো. রুহুল আমিন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদের প্রতীক টেবিল ঘড়ি।

মেয়র হতে চান ৭ জন

দল

প্রার্থী

প্রতীক

বিএনপি

মো. হাসান উদ্দিন সরকার

ধানের শীষ

আওয়ামী লীগ

মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম

নৌকা

সিপিবি

কাজী মো. রুহুল আমিন

কাস্তে

বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট

মো. জালাল উদ্দিন

মোমবাতি

ইসলামী ঐক্যজোট 

ফজলুর রহমান

মিনার

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

মো. নাসির উদ্দিন

হাত পাখা

স্বতন্ত্র

ফরিদ আহমদ

টেবিল ঘড়ি

মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে এ নির্বাচনে সাত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলেও আলোচনা চলছে সেই নৌকা আর ধানের শীষ ঘিরেই।

দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরের সংসদীয় আসন ও স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোতে আওয়ামী লীগের একচেটিয়া প্রাধান্যের কারণে ঢাকার লাগোয়া এ এলাকাকে নিজেদের ঘাঁটি বলেই মনে করত ক্ষমতাসীনরা। কিন্তু ২০১৩ সালের সিটি নিরাব্চনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় তাদের সেই কর্তৃত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়। 

এবারের নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান সরকার বলেছেন, তিনি জয়ের ব্যাপরে শতভাগ আশাবাদী। কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে তিনি মনে করছেন না।  

সকালে ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের বছিরউদ্দিন উদয়ন একাডেমী কেন্দ্রে ভোট দিয়ে তিনি সাংবাদিকদের সামনে অভিযোগ করেন, তার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে মেরে বের করে দেওয়া হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ইসির কাছে অভিযোগ করেও তিনি ফল পাচ্ছেন না।

“আমি শুধু বলব, আমি নির্বাচনে আছি থাকব। সর্বশেষ পর্যন্ত নির্বাচনের ফলাফল দেখে মন্তব্য করব আমি। শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব।”

ফলাফল মেনে নেবেন কি না- এই প্রশ্নে হাসান সরকার বলেন, “ফলাফল জনগণ যদি মেনে নেয় আমিও মেনে নেব।”

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে। জনগণের যে রায় সেটা আমার মেনে নেওয়া উচিৎ। গাজীপুরের উন্নয়নের স্বার্থে মানুষ নৌকাকে বিজয়ী করবে। জনগণের সেবক হিসেবে আমি তাদের রায় চাই।”

বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে তার ভাষ্য, “তারা ভোটের শুরু থেকে এ ধরনের অভিযোগ করে আসছে। এ ধরনের অভিযোগ করে তারা গাজীপুরের মানুষকে দোষারোপ করছে এবং নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা চেষ্টা করছে।”

বেলা ১টার দিকে জয়দেবপুরে গাজীপুর জেলা বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন বন্ধের দাবি জানান বিএনপি মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার।

তিনি বলেন, “শতাধিক কেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। অনেককে মারপিট করেছে সরকারি দলের লোকেরা। সেখানে সিল মারা ও জাল ভোট দেওয়া হয়েছে।

"এসব অনিয়মের কারণে আমি এই নির্বাচন বন্ধের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানাচ্ছি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিচ্ছি।"

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন,“গাজীপুর থেকে যেসব খবর থেকে আমাদের কাছে আসছে, তাতে এ পর্যন্ত শতাধিক কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট প্রদান এবং ব্যালট পেপারে সিল মারার মহোৎসব চলছে।”

অন্যদিকে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বিএনপির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সকাল থেকে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে। আমরা সকল সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে, উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।”

বিএনপির সমালোচনায় তিনি বলেন,“এই নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আসলে তাদের মতলবটা কি? তাদের মতলব হলো গণতন্ত্রের রথযাত্রাকে ব্যাহত করে অগণতান্ত্রিক শক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো এবং অগণতান্ত্রিক শক্তির কাছে দেশকে আবার বিকিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। তাদের ষড়যন্ত্র নতুন নয়। তাদের ষড়যন্ত্র পুরনো।”

মোগরখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পুরুষ কেন্দ্রে মেয়র পদে সিল মারা ব্যালট সরবরাহ করার অভিযোগ এসেছে

মাঠের চিত্র

৩৩৮ নম্বর স্ট্র্যাটফোর্ড আইডিয়াল স্কুলের নারী ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই ভোট কেন্দ্রে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৬০০টি ভোট কাস্ট হয়েছে। সকালে এই কেন্দ্রে লম্বা লাইন ছিল, দুপুরে লাইন ছোট থাকলেও বিকালের দিকে ভোটারদের উপস্থিতি আরও বাড়তে পারে। আমার কেন্দ্রে মোট ভোটার দুই হাজার ৪০২ জন।"

৩৫০ নাম্বার জাগরণী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা শ্যামল কান্তি সরকার বলেন, "শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন, কোনো ধরনের অনিয়ম সেখানে হয়নি। একজন সাংবাদিক হিসেবে প্রয়োজনে আপনি বুথে বুথে ঘুরে নিজে চোখে দেখে খোঁজ নিতে পারেন।"

দুই হাজার ৪০৭ জন ভোটারের এ কেন্দ্রে বেলা ১টা পর্যন্ত এক হাজার ১০০ জন ভোট দিয়েছেন বলে তিনি জানান।

একই কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা ৮০ বছরের বৃদ্ধ দেলোয়ার হোসেন বলেন, "আমি হাঁটতে পারি না, ছেলের বউকে সঙ্গে নিয়ে রিকশা করে কেন্দ্রে এসেছি, আমার পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিয়েছি। মনে হয় মরার আগে এটাই আমার শেষ ভোট।"

এরশাদ নগরের আঞ্জুমান এতিমখানা ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মোকাদ্দেস আলী বলেন, "সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পারছে। আমার কেন্দ্রে কোনো ধরনের অনিয়ম বা চাপ নেই, ভোটাররাও কোনো অভিযোগ জানায়নি।"

স্থগিত হওয়া খরতৈল মনসুর আলী আদর্শ বিদ্যালয়-১ কেন্দ্রের (৩৭২ নম্বর কেন্দ্র) প্রিজাইডিং অফিসার মো. আমজাদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কেন্দ্রে কিছু লোক জোর করে প্রবেশ করায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়।”

৯৮ নম্বর কেন্দ্র গাজীপুরের ভোগড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়-১ (মূল ভবন) এর প্রিজাইডিং অফিসার ইবনে সালেহ মো. ফরহাদ বলেন, “কিছু লোকজন অতর্কিতে এসে ব্যালটে সিল মারা শুরু করে। তাই আমরা ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছি।” 

এদিকে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম জয়দেবপুর মদিনাতুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসা কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী এবং বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

ওই মাদ্রাসায় কেন্দ্র বেলা ১১টার দিকে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে কোনো পোলিং এজেন্ট পাওয়া যায়নি।

বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হান্নান মিয়া হান্নুর পোলিং এজেন্ট রাকিবুল হাসান প্রান্ত অভিযোগ করেন, নৌকার প্রার্থীর লোকজন তাদের বের করে দিয়েছে।

“সকালে ধানের শীষের এজেন্টরা ছিল। পরে সকাল সোয়া ৯টার দিকে নৌকার লোকজন এসে বলে তোমাদের থাকার দরকার নেই। চলে যাও। পরে আমরা চলে আসি।”

রাকিবুল হাসান প্রান্ত ১৬৯ নম্বর কেন্দ্রের চার নম্বর বুথের দায়িত্বে ছিলেন। ওই কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দেননি।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ গাজীপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত মল্লিক বাবুকে কেন্দ্রের ভেতর ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। এ সময় স্থানীয় নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে সেলফিও তোলেন।

এই মাদ্রাসার একটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার এটিএম মহিবুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে দাবি করেন, “সব প্রার্থীরই পোলিং এজেন্ট আছে।”

কয়েকটি বুথে পোলিং এজেন্ট না দেখার বিষয়ে জানালে তিনি বলেন, “তারা এখন কোথায় গেছে বলতে পারব না।”

৫ নম্বর বুথে ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট বাবু তার পোলিং এজেন্ট কার্ড রেখেই কেন্দ্র ত্যাগ করেন। অন্য পোলিং এজেন্টরা বলতে পারেননি তিনি কোথায় গেছেন।

বিএনপির সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হান্নান মিয়া হান্নু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাকেসহ পোলিং এজেন্টদের পুলিশ ধাওয়া দিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের বহিরাগতরা এখানে অবস্থান করছে।”

অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে ওই কেন্দ্রের সামনে দায়িত্বরত পুলিশের মোবাইল টিমের ইনচার্জ মেহেদী হাসান বলেন, “তারা ভোটার ছিল না। বহিরাগত বাচ্চাকাচ্চা ছিল, এজন্য আমরা ধাওয়া দিয়েছি।”

বাগবাড়ি হাক্কানিয়া সালেহীয়া আলীম মাদ্রাসা কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. সালা উদ্দিন জানান, দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে তার কেন্দ্রে বেলা পৌনে ১১ টা থেকে ৪৫ মিনিট ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখা হয়।

“কাউন্সিলর দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে গেলে কেন্দ্রে ভোট বন্ধ রাখতে হয়। এক প্রার্থীর লোকজন কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা চালায়। আমরা তার আগেই পুলিশের সহায়তায় তাদের রুখে দিই। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সাড়ে ১১টায় ভোটগ্রহণ আবার শুরু হয়েছে।”

এদিকে মোগরখাল জামেয়া আরাবিয়া নূরিয়া আলহাজ মকবুল আহমেদ মাদ্রাসা (কেন্দ্র নম্বর ১১৪) কেন্দ্রে নারী ভোটারদের শুধু সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীর ব্যালট সরবরাহ করা হয় বলে অভিযোগ করেন কয়েকজন ভোটার।

 

বেলা ১১ টার পর এ কেন্দ্রের ৬ নম্বর ভোট কক্ষে ভোট দিয়ে মিসেস শীলা হিসেবে পরিচয়দানকারী এক ভোটার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাকে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার সালমা আক্তার শুধু নারী কাউন্সিলরের ব্যালট দিয়েছেন; মেয়র ও সাধারণ কাউন্সিলরের ব্যালট দেননি। একটি ভোট দিয়ে আমি বের হয়ে এসেছি।”

একই রকম অভিযোগ করেন শাহনাজ আকতার নামের আরেক ভোটার। এই মাদ্রাসার দুটি কেন্দ্রে ব্যালট পেপারের দাবিতে ভোটাররা মিছিলও শুরু করে।

জানতে চাইলে প্রিজাইডিং অফিসার মো. জহিরুল ইসলাম বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “একটু সমস্যা হয়েছিল। কোনো সমস্যার কারণে হয়ত এমনটা হয়েছে। হয়ত বুঝতে পারেনি। আবার শুরু করছি; এখন সবাই সব ব্যালট পাবে।”

মোগরখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (কেন্দ্র নম্বর ১১২) পুরুষ কেন্দ্রে মেয়র পদে সিল মারা ব্যালট সরবরাহ করার অভিযোগ পাওয়া যায়।

একজন ভোটার বলেন, তাকে নৌকা প্রতীকে সিল মারা ব্যালট দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কাউন্সিলরের জন্য আলাদা ব্যালট সরবরাহ করা হয়েছে।

এ কেন্দ্রের একটি বুথে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও প্রার্থীর এজেন্ট মিলে এ কাজ করেছে অভিযোগ করেন ওই ভোটার।

লাইনে অপেক্ষমাণ ভোটার ইমান আলী ও মজিদ সরকার জানান, বেলা ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে ব্যালট সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। ফলে তাদের প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

জানতে চাইলে প্রিজাইডিং অফিসার ড. হাসিনুল কবীর কামালী বলেন, “আমাদের ব্যালট রয়েছে। পোলিং অফিসাররা দেয় না বা ব্যালট নাই- এমন কথা ঠিক না। ১০০ করে ব্যালট ইস্যু করা হয়; হয়ত বিলম্বের কারণে অভিযোগ করছে। বিকাল ৪টা পর্যন্ত  সবাইকে ব্যালট দেওয়া হবে; ভোটও দিতে পারবে।”

তবে সিল মারা ব্যালটের বিষয়ে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

গাজীপুরের ভোটের খবর