গাজীপুরবাসীকে অপমান করেছে বিএনপি: নানক

ভোটের সকালেই গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি গাজীপুরবাসীকে অপমানিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2018, 10:17 AM
Updated : 26 June 2018, 02:39 PM

মঙ্গলবার দুপুরে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে গাজীপুর নির্বাচন নিয়ে দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সকাল থেকে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে। আমরা সকল সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে, উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

“কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য বিএনপি তাদের পল্টনের অফিসে মিথ্যার বাক্স খুলে বসেছে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি নির্বাচন বর্তমান সরকারের সময়েই হয়েছে এবং বিএনপি জয়লাভ করেছে।”

জাহাঙ্গীর কবির নানক (ফাইল ছবি)

নানক প্রশ্ন রেখে বলেন, “সেই নির্বাচন যদি সঠিক হয়ে থাকে, সেদিন নির্বাচন কমিশন যদি সঠিক হয়ে থাকে তাহলে আজকে কেন সাত সকালে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে? আসলে গাজীপুরবাসীকে অপমানিত করা হচ্ছে, নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে।”

নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বিএনপি অগণতান্ত্রিক শক্তিকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।

“এই নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আসলে তাদের মতলবটা কি? তাদের মতলব হলো গণতন্ত্রের রথযাত্রাকে ব্যাহত করে অগণতান্ত্রিক শক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো এবং অগণতান্ত্রিক শক্তির কাছে দেশকে আবার বিকিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। তাদের ষড়যন্ত্র নতুন নয়। তাদের ষড়যন্ত্র পুরনো।”

মঙ্গলবার ভোট চলার মধ্যে বেলা সাড়ে ১১টায় নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গাজীপুরে শতাধিক কেন্দ্রে জাল ভোটের ‘মহোৎসবৎ চলছে বলে অভিযোগ করেন।  

পুলিশের সহায়তায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা কয়েকটি কেন্দ্র থেকে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।

এসব বিষয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার না পাওয়ার কথা জানান রিজভী।

বিএনপির এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে নানক বলেন, “তারা বুঝতে চান না, এর সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।”

বিএনপি প্রার্থীর দুর্বলতা দেখে কেন্দ্রে এজেন্ট যায়নি দাবি করে তিনি বলেন, “সকালে তারা প্রশ্ন তুলেছে অনেক কেন্দ্রে তাদের এজেন্ট নেই। এটা সত্য সবাই জানে, অনেক কেন্দ্রে তাদের এজেন্ট উপস্থিত হয়নি, কেন হয়নি দলীয় সূত্রে আমাদের কাছে খবর আছে।

“এর কারণ হচ্ছে তাদের প্রার্থীর দুর্বলতা, দ্বিতীয়ত তাদের দলীয় অভ্যন্তরীন কোন্দল। কোন্দল এতই বেশি যে তারা অনেক জায়গায় এজেন্ট দিতে ব্যর্থ হয়ে এখন উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্ট চালাচ্ছে।”

গাজীপুরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে আশা প্রকাশ করে নানক বলেন, “গাজীপুরের মানুষ ২০১৩ সালে বিএনপিকে ভোট দিয়ে কোনো উন্নয়ন না হওয়ার কারণে, বঞ্চিত হওয়ার কারণে, বিএনপি চরম দুর্নীতি পরায়ণ হওয়ার কারণে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে এই নির্বাচনে। গাজীপুরবাসীর ভোটের দ্বারা আমাদের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে।”

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এ কে এম এনামুল হক শামীম, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।

ব্যর্থতা ঢাকতে বিএনপির অভিযোগ: আ.লীগ

রাজনৈতিক ব্যর্থতা ঢাকতে এবং হতাশা থেকে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে বিএনপি গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ করছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিন মঙ্গলবার দুপুরে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদার সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।

বিএনপি প্রতিনিধিদল সিইসির সঙ্গে বৈঠক করার পরই আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

নওফেল বলেন, “বিএনপি কখনও বলছে ২১টি, কখনও বলছে ১০০টি কেন্দ্র থেকে তাদের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাদেরকে বের করে দেওয়া হয়েছে তার কোনো তালিকা তারা দিতে পারেনি।

“তারা রাজনৈতিক ব্যর্থতা ঢাকবার জন্য হতাশা থেকে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নানা অভিযোগ করছে।”

বিএনপির কেন্দ্রীয় দুই নেতার বিরুদ্ধে গাজীপুরে অরাজকতা সৃষ্টির বিষয়ে গণমাধ্যমে আসা খবরের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আজকে যতটুকু বিশৃঙ্খলা হয়েছে আমরা মনে করি এটা সেই পরিকল্পনার অংশ।”

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, “৪২৫টি কেন্দ্রের মধ্য মাত্র ৫টি কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে। এতে সার্বিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ বলা যায় না।”

দেশের বাইরে থেকে তাদের (বিএনপি) কোনো কোনো নেতা নির্বাচন ঘিরে কলকাঠি নাড়ছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

“আমরা যে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখেছি তাতে শেষ পর্যন্ত ফলাফল আমাদের প্রার্থীর পক্ষে আসবে।”

সিইসির সঙ্গে বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে ছিলেন কেন্দ্রীয় সদস্য রিয়াজুল কবীর কাউছার, শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুর নাহার চাপা ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর সবুর।

বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত ছিলেন।