আবহাওয়া ‘সুবিধার মনে হচ্ছে না’ হাসান সরকারের

আনুষ্ঠানিক প্রচারের শেষ দিনে এসে ভোটের পরিবেশ নিয়ে আবারও শঙ্কার কথা বলেছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার।

মাসুম বিল্লাহ গাজীপুর থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2018, 08:58 AM
Updated : 24 June 2018, 11:05 AM

রোববার সকালে টঙ্গী এলাকার দলের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “শেষ মুহূর্তের আবহাওয়া সুবিধার মনে হচ্ছে না।”

এর ব্যাখ্যায় ধানের শীষের প্রার্থী বলেন, “অত্যন্ত বিশ্বস্ত বিশেষ মাধ্যমে আমি অবহিত হয়েছি, খুলনা রেঞ্জের পুলিশদেরকে এই গাজীপুরে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য আনা হয়েছে… খুলনায় যে কায়দায় যে কৌশলে নির্বাচন করা হয়েছে, সেভাবে এখানে সম্পন্ন করার জন্য।

“সুষ্ঠুভাবে ভোট হয়েছে বোঝানোর জন্য পুলিশের মাধ্যমে বিএনপির এজেন্টদের মধ্যে লোক ঢোকাবে। ভোট গণনা শেষ হয়ে গেলে পরে বের হয়ে যাবে।”

ব্যালটে সিল মেরে মহিলাদের মাধ্যমে ‘পাঠানোর পরিকল্পনাও’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন হাসান সরকার।

তিনি বলেন, “পুলিশের গাড়িতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘুরতেছে, পত্রিকায় ছবি ছাপা হয়েছে।”

এ সময় দুটি জাতীয় দৈনিকের ছবি দেখিয়ে হাসান সরকার বলেন, “আমাদের লোকদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, কাউকে নরসিংদী পাঠানো হচ্ছে, কাউকে ঢাকা, কাউকে নারায়ণগঞ্জ পাঠানো হচ্ছে। কারো এখনো পর্যন্ত হদিসই পাই নাই।

তারপরও নির্বাচনে আছেন এবং থাকবেন বলে জানান গাজীপুরের মেয়র পদে বিএনপির এই প্রার্থী।

গাজীপুরে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ এই নির্বাচনে তিনি ‘শেষ মুক্তিযোদ্ধা’ হতে পারেন মন্তব্য করে ৭০ বছর বয়সী হাসান সরকার বলেন, “দেশে ও সমাজে বেঁচে থাকা যায় দুইভাবে। একটি হল সুনামের সাথে, আরেকটি ঘৃণার সাথে।

“আমি দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কর্মী। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আমি আহ্বান জানাই, আমরা যেন গর্বিত হয়ে রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে বেঁচে থাকতে চাই।”

ধানের শীষের ৫০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপির প্রার্থী সাংবাদিকদের বলেন, “মু্ক্তিযোদ্ধা হিসাবে আপনাদের বলব, সত্যটা তুলে ধরুন। আমার বিপক্ষে হলে সেটাও তুলে ধরুন। এজেন্টদের প্রতিদিন হুমকি দেওয়া হচ্ছে, তাদের বাড়িতে বাড়িতে যাচ্ছে, তাহলে শঙ্কা থাকবে না?”

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমি চাই, নির্বাচন করার জন্য যে নিয়মকানুন রয়েছে এই সরকারেরই করা। সেগুলো মেনে চলুক নির্বাচন কমিশন।”

আর ভোটারদের প্রতি তার আহ্বান- “আপনারা ভোট কেন্দ্রে আসবেন, ভোট দেবেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য যখন যাই, তখন জানতাম না বেঁচে থাকব কি-না। জীবনের শেষ সময়ের নির্বাচনে আমি সুযোগ চাই।”

হাসান সরকার নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “দেশনেত্রী জেলে আছে। দেশনেত্রীকে মুক্ত করা এবং সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করবেন। যত ঝড়-বৃষ্টি-বাধা আসুক না কেন, আপনারা ভোটকেন্দ্রে আসুন। মহৎ উদ্দেশ্য সাধন করতে হলে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। গাজীপুরবাসী ও বিএনপির নেতাকর্মীরা সেই ত্যাগ করবে।”

আগামী মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন সাতজন। তবে স্বাভাবিকভাবেই সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম আর বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকারকে নিয়ে।

হাসান সরকার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমাদের এজেন্টদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এজেন্টদের তালিকা চাওয়া হচ্ছে পুলিশ, ডিবি থেকে। আমরা বলেছি, আপনারা পারলে আপনাদের কৌশলে বের করে নেন। আমরা তালিকা দেব কেন?

“নির্বাচনতো বহুদিন ধরে করি। দাদার নির্বাচনটা করতে পারি নাই। বাপের নির্বাচন করেছি, জেঠার নির্বাচন করেছি, ভাইয়ের নির্বাচন করেছি, আমার নির্বাচন করেছি। সহকর্মীদের নির্বাচন করেছি। বাংলাদেশে নির্বাচনে যে কয়জন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় বেঁচে রয়েছে, তাদের একজন আমি।”

গত ১৫ মে খুলনা সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক প্রায় ৬৬ হাজার ভোটে বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন।

বিএনপির অভিযোগ, ওই নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের জয়ের পেছনে ছিল ‘নীরব ভোট ডাকাতি’, যা নিশ্চিত করতে পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করেছে ক্ষমতাসীনরা।  

সরকার এখন গাজীপুরেও ‘খুলনা স্টাইলে’ ভোট করতে চাইছে বলে গত কয়েক দিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।