নতুন ভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়

বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের নতুন ১০ তলা ভবন চালু হল দলের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2018, 07:15 AM
Updated : 23 June 2018, 07:51 AM

দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার সকালে দলীয় পতাকা ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার মাধ্যমে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে নতুন এই ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

এর আগে সূর্যোদয়ের ক্ষণে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সারা দেশের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কর্মসূচি শুরু হয়।

সকাল ৯টায় ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা। এরপর আওয়ামী লীগ সভেনত্রী হিসাবে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেন।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলেক্ষ সকাল ১০টায় তিনি বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের নতুন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান। সেখানে তিনি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। আর দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এ সময় জাতীয় সংগীত ও দলীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। বেলুন ও পয়রা উড়িয়ে উদ্বোধন হয় আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ের নতুন ভবনের।

আওয়ামী লীগ নেতারা পরে সেখানে দাঁড়িয়ে মোনাজাতে অংশ নেন।  ভবনের সামনে একটি বকুল গাছের চারা রোপণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নব নির্মিত ১০ তলা এই ভবন আগামী শনিবার দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে উদ্বোধন করবেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে নতুন কার্যালয়ের বিভিন্ন তলা ঘুরে দেখে তিনি নবম তলায় সভানেত্রীর জন্য নির্ধারিত কক্ষে গিয়ে বসেন।

নিজস্ব অর্থায়নে দশ কোটি টাকা ব্যয়ে আট কাঠা জমির ওপর নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এই ভবনটিই এখন থেকে আওয়ামী লীগের স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

দলের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, নতুন ভবন উদ্বোধনের পর আওয়ামী লীগের সব সাংগঠনিক কার্যক্রম এ কার্যালয় থেকেই চলবে।

আর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে দলের নির্বাচনী কার্যক্রম ও সিআরআইসহ দলের অন্যান্য সংস্থার গবেষণামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।

ভবনটির প্রথম থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোর ৪ হাজার ১০০ বর্গফুট। চতুর্থ তলা থেকে উপরের সবগুলো ফ্লোর ৩ হাজার ১০০ বর্গফুটের।

ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নব নির্মিত ভবনের নিচতলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় সাজানো হয়েছে দলের অফিস, ডিজিটাল লাইব্রেরি ও মিডিয়া রুম। ষষ্ঠ তলায় সম্মেলন কক্ষ; সপ্তম তলা বরাদ্দ দলের কোষাধ্যক্ষের জন্য।

অষ্টম তলায় সাধারণ সম্পাদকের অফিস। নবম তলায় বসবেন দলের সভানেত্রী। তার নিরাপত্তা নিশ্চিতে এই ফ্লোরটি ‘বুলেটপ্রুফ’ করা হয়েছে। দশম তলায় রয়েছে ক্যাফেটেরিয়া।

ভবন ঘুরে দেখা যায়, দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জন্য রয়েছে সুপরিসর কক্ষ। সভাপতির কক্ষের সঙ্গে রয়েছে বিশ্রামাগার ও নামাজের জায়গা।

দ্বিতীয় তলায় মাঝখানে কনফারেন্স রুম আর দুই পাশে বেশ কিছু কক্ষ রয়েছে। কনফারেন্স রুমে ৩৫০ জনের বসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

তৃতীয় তলায়ও ২৪০ জনের বসার ব্যবস্থা থাকছে। এই ফ্লোরের সামনের অংশে আছে ‘ওপেন স্কাই টেরেস’। আর ভবনের চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাড়াও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতীমসহ সমমনা অন্যান্য সংগঠনের কার্যালয় রয়েছে।

এছাড়া ভবনে রয়েছে ভিআইপি লাউঞ্জ, সাংবাদিক লাউঞ্জ, ডরমিটরি ও ক্যান্টিন। আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত এই পুরো ভবনটি থাকবে ওয়াইফাইয়ের আওতায়।

বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নবনির্মিত ১০ তলা ভবনের নামফলক। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

কার্যালয়ের সামনে স্টিলের বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’। পাশেই দলীয় প্রতীক নৌকা।

সবার উপরে রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল। এরপর দুটি ম্যুরালে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দৃশ্য।

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে ভবনের সামনে একটি স্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানান।

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আওয়ামী লীগের ৬৯ বছরের ইতিহাসে এটাই প্রথম স্থায়ী অফিস এবং এটাই দেশের সকল রাজনৈতিক দলের ইতিহাসে সর্বাধুনিক পার্টি অফিস।

“লক্ষ্য ছিল দুই বছরের মধ্যে কাজ শেষ করা। সেই হিসাবে আগামী সেপ্টেম্বরে ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার চার মাস আগেই শেষ হয়েছে।”

বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি সরকারি জমি লিজ নিয়ে করা হয়েছিল। সেখানেই গড়ে তোলা হয়েছে নতুন এই ভবন।

ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নবনির্মিত ১০ তলা এই ভবন আগামী শনিবার দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে উদ্বোধন করবেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

ওই জমি ৯৯ বছরের জন্য সরকারের কাছ থেকে লিজ নেওয়ার পর ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ভবন নির্মাণের কাজে হাত দেওয়া হয়। নির্মাণ কাজ চলে পূর্তমন্ত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে।

বিল্ডিং কোড মেনে সামনের দিকে রাস্তা থেকে ১০ ফুট এবং পেছনের দিকে ১৭ ফুট জায়গা ছেড়ে মোট জমির ৬৫ শতাংশ ব্যবহার করে ভবনটি তৈরি করা হয়েছে বলে মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “নির্বাচনের আগে দলের নেতাকর্মীদের জন্য নতুন কার্যালয় একটি উপহার।”

প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগের অফিস স্থানান্তরের ঘটনা ঘটেছে অন্তত আটবার। পুরান ঢাকার কে এম দাশ লেনের রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আত্মপ্রকাশ করে আওয়ামী লীগ। শুরুর দিকে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বাসায় বসে দল পরিচালনার নীতি-কর্মসূচি গ্রহণ করা হত, কোনো অফিস ছিল না।

১৯৫৩ সালে কানকুন বাড়ি লেইনে অস্থায়ী একটি অফিস ব্যবহার করা হত। ১৯৫৬ সালে পুরান ঢাকার ৫৬, সিমসন রোডের ঠিকানায় যায় আওয়ামী লীগের অফিস।

১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৯১, নবাবপুর রোডে দলীয় অফিস নেন। এর কিছু দিন পর অস্থায়ীভাবে সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলের গলিতে বসা শুরু করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। পরে পুরানা পল্টনে দুটি স্থানে দীর্ঘদিন দলের অফিস ছিল।

১৯৮১ সালের দিকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা হয় ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। এবার সেখানেই স্থায়ী ভবন পেল আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়।