আ. লীগের নতুন কার্যালয় খুলছে শনিবার

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে নতুন ১০তলা ভবনে চালু হচ্ছে দেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের কার্যালয়।

কাজী মোবারক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 June 2018, 03:44 PM
Updated : 22 June 2018, 04:00 PM

দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন এই ভবনই হবে আওয়ামী লীগের স্থায়ী ঠিকানা। দলের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন শনিবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন ভবনের উদ্বোধন করবেন।

দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, নতুন ভবন উদ্বোধনের পর আওয়ামী লীগের সব সাংগঠনিক কার্যক্রম চলবে ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউর এ কার্যালয় থেকে। আর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে দলের নির্বাচনী কার্যক্রম ও সিআরআইসহ দলের অন্যান্য সংস্থার গবেষণামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শুক্রবার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, “দেশের সর্বাধুনিক এই পার্টি অফিসে ডিজিটাল লাইব্রেরি, ভিআইপি লাউঞ্জ, সাংবাদিক লাউঞ্জ, ডরমিটরি ও ক্যান্টিন থাকছে।

“ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অফিস থাকবে এই ভবনে। শনিবার সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন ভবনের উদ্বোধন করবেন।”

শুক্রবার দুপুরে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের নতুন দশতলা ভবনের কাজ শেষ। শনিবার উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। পুলিশসহ নিরাপত্তারক্ষীদের কড়াকড়ি ভবনজুড়ে। ঢুকেই হাতের বাম পাশে অভ্যর্থনা ডেস্ক। সিঁড়ির পাশাপাশি দুটি লিফট।

বেইজমেন্ট ও প্রথম তলায় গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও দলীয় প্রধানের গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি সেখানে প্রবেশ করবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। সামনের সড়কে ছেড়ে দেওয়া নিজস্ব জায়গায় পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।

ভবনটির প্রথম থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোর ৪ হাজার ১০০ বর্গফুট। চতুর্থ তলা থেকে উপরের সবগুলো ফ্লোর ৩ হাজার ১০০ বর্গফুটের।

ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নব নির্মিত ১০ তলা এই ভবন আগামী শনিবার দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে উদ্বোধন করবেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

নিচতলায় উল্লিখিত বিবরণ অনুযায়ী, চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় সাধারণ অফিস, ডিজিটাল লাইব্রেরি ও মিডিয়া রুম। ষষ্ঠ তলায় সম্মেলন কক্ষ। সপ্তম তলা দলের কোষাধ্যক্ষের জন্য। অষ্টম তলায় সাধারণ সম্পাদকের অফিস। নবম তলায় বসবেন দলের সভানেত্রী। তার নিরাপত্তা নিশ্চিতে এই ফ্লোর থাকছে বুলেটপ্রুফ।

আর দশম তলায় থাকবে ক্যাফেটেরিয়া।

এই ফ্লোরগুলোতেই দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের জন্য কক্ষ রাখা হয়েছে।

ওই ভবনে কর্তব্যরতরা জানান, দ্বিতীয় তলায় মাঝখানে কনফারেন্স রুম আর দুই পাশে বেশ কিছু কক্ষ রয়েছে। কনফারেন্স রুমে ৩৫০ জনের বসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

তৃতীয় তলায়ও ২৪০ জনের বসার ব্যবস্থা থাকবে। এই ফ্লোরের সামনের অংশটা ‘ওপেন স্কাই টেরেস’। এখানে কৃত্রিম বাগানের ফাঁকে ফাঁকে চেয়ার-টেবিল দিয়ে বসার ব্যবস্থা থাকছে। পাশাপাশি থাকবে চা-কফি খাওয়ার আয়োজন।

এছাড়া ভবনের চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাড়াও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতীমসহ সমমনা অন্যান্য সংগঠনের কার্যালয় থাকবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আওয়ামী লীগের ৬৯ বছরের ইতিহাসে এটাই প্রথম স্থায়ী অফিস এবং এটাই দেশের সকল রাজনৈতিক দলের ইতিহাসে সর্বাধুনিক পার্টি অফিস।

“শনিবার আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে নতুন কার্যালয়ের চাবি তুলে দেবেন। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন শেষে সভাপতিমণ্ডলী, যুগ্ম সম্পাদকসহ অন্য নেতা ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জায়গা নির্ধারণ করে দেবেন।”

তিনি জানান, দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জন্য রাখা হয়েছে সুপরিসর কক্ষ। সভাপতির কক্ষের সঙ্গে রয়েছে বিশ্রামাঘার ও নামাজের জায়গা।

বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি সরকারি জমি লিজ নিয়ে করা হয়েছিল। সেখানেই গড়ে তোলা হয়েছে নতুন এই ভবন।

ওই জমি ৯৯ বছরের জন্য সরকারের কাছ থেকে লিজ নেওয়ার পর ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ভবন নির্মাণের কাজে হাত দেওয়া হয় বলে জানান নানক।

“লক্ষ্য ছিল দুই বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার। সেই হিসাবে আগামী সেপ্টেম্বরে ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার চার মাস আগেই শেষ হল,” বলেন তিনি।

কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই ভবন নির্মাণ করেনি। পূর্তমন্ত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে ভবনটি নির্মিত হয়।

বিল্ডিং কোড মেনে সামনের দিকে রাস্তা থেকে ১০ ফুট এবং পেছনের দিকে ১৭ ফুট জায়গা ছেড়ে মোট জমির ৬৫ শতাংশ ব্যবহার করে ভবনটি তৈরি করা হয়েছে বলে মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “নির্বাচনের আগে দলের নেতাকর্মীদের জন্য নতুন কার্যালয় একটি উপহার।”

ভবনটি নির্মাণে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও ব্যয় বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা।

ভবনের সামনে ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে স্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন।

দলের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে আওয়ামী লীগের নতুন ভবন উদ্বোধন দলের নেতাকর্মীদের বাড়তি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। দীর্ঘদিন পরে নিজস্ব কার্যালয়ে যাচ্ছি। এই অফিস ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আমাদের পার্টির কার্যক্রম আরও বেগবান হবে।”

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগের অফিস স্থানান্তরের ঘটনা ঘটেছে আট থেকে নয়বার। পুরান ঢাকার কে এম দাশ লেনের রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আত্মপ্রকাশ করে আওয়ামী লীগ। প্রতিষ্ঠার পর পালাক্রমে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বাসায় বসে দল পরিচালনার নীতি-কর্মসূচি গ্রহণ করা হত, কোনো অফিস ছিল না।

১৯৫৩ সাল থেকে ৯, কানকুন বাড়ি লেনে অস্থায়ী একটি অফিস ব্যবহার করা হত। ১৯৫৬ সালে পুরান ঢাকার ৫৬, সিমসন রোডে আওয়ামী লীগের অফিস হয়।

১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করার পর তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৯১, নবাবপুর রোডে দলের অফিস নেন। এর কিছু দিন পর অস্থায়ীভাবে সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলের গলিতে কিছু দিন বসেন নেতারা। পরে পুরানা পল্টনে দুটি স্থানে দীর্ঘদিন দলের অফিস ছিল।

১৯৮১ সালের দিকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা হয়।