মেহেদীর উপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার দাবি

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট মেহেদী হাসানের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 June 2018, 09:45 PM
Updated : 20 June 2018, 09:45 PM

সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম বুধবার এক বিবৃতিতে এই হামলার তীব্র নিন্দা জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, “গ্রামে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবসায়ী চক্র গোলাম মোস্তফা ও আজমত আলীর প্রতারণার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করায় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক নেতা, ২০০১ সালে অগাস্টে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাধায়ক সরকারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক লেখক ব্লগার মেহেদী হাসানের উপর নৃশংস আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি।”

ঘাটাইলের আলু পাকুটিয়ায় ঝড়ে তিন দিন পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে এক নারীর মৃত্যুর প্রতিবাদ করায় গত সোমবার সকালে ওই গ্রামেই মেহেদীর ওপর হামলা হয়।তার বাঁ হাতের হাড় ভেঙে গেছে এবং মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করা হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেহেদী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি গোলাম মোস্তফা তার ছেলে এবং ভাই-ভাতিজাসহ অনুসারীদের নিয়ে তার ওপর হামলা চালায়।

“এক চাচা ও গ্রামের একটি ছেলের সঙ্গে আমি নদীর পাড়ে বসেছিলাম। হঠাৎ মোস্তফাসহ ১০-১২ জন এসে আমার উপর হামলা চালায়।”

এ ঘটনায় মেহেদীর বাবা নূরুল ইসলাম বাদী হয়ে ঘাটাইল থানায় মোস্তফাসহ সাতজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার আসামিরা হলেন- গোলাম মোস্তফা, তার চাচাত ভাই আজমত ওরফে পাঙ্গাস (৪২), মজনু মিয়া (৪৫), আব্দুল লতিফ (৪০), শফিকুল ইসলাম (৪২), ফরজ আলীর ছেলে আপেল (২৫) ও নজরুল (৩৬)।

আসামিদের কাউকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক নেতা মেহেদী হাসান থাকেন ঢাকার খিলক্ষেতে। ‘দেহঘড়ি’ নামের একটি স্বাস্থ্য বিষয়ক পত্রিকায় কাজের পাশাপাশি ফেইসবুক ও ব্লগে লেখালেখি করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে ২০০৭ সালের অগাস্টে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি।

গত মার্চে তাদের গ্রামে ফুলজান বেগম (৪৫) নামের দরিদ্র পরিবারের ওই নারী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাওয়ার পর এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে ফেইসবুক ও ব্লগে লেখায় তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।

বিষয়টি নিয়ে নাগরিক সাংবাদিকতার প্ল্যাটফর্ম ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে একটি লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর সংবাদ প্রতিবেদনও হয়েছিল।

সে সময় মেহেদী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “আলুপাকুটিয়া গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি মৃত কোরবান আলীর ছেলে মোস্তফা ও তার চাচাত ভাই মৃত রহমানের ছেলে আজমত ওরফে (পাঙ্গাস) এলাকয় বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলে প্রতি জনের কাছ থেকে ২,৭০০ (দুই হাজার সাতশ) টাকা করে এবং প্রতি সেচ পাম্পের মালিকের কাছ থেকে ৭,০০০ (সাত হাজার) টাকা করে আদায় করেন।

“এভাবে শতাধিক লোকের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা আদায় করেন তারা। পরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার সময় নিয়ম অনুযায়ী তার ও খুঁটি না দিয়ে নিম্নমানের তার ও বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করা হয়। এর ফলে অল্প বাতাসে তার ছিঁড়ে পড়েছিল, যাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ফুলজানের মৃত্যু ঘটে।”

এর প্রতিবাদ করায় তাকে ও তার পরিবারকে একাধিকবার হুমকি দেওয়া হয় জানিয়ে মেহেদী বলেন, বিষয়টি থানায় জানানো হয়েছিল। থানা থেকে মোস্তাফাদের ডেকে বলা হয়েছিল যাতে ঝামেলা না করা হয়।

“সে কারণে ঈদের দিন আমি বাড়ি যাই। এই সুযোগে তারা আমার উপর হামলা করেছে।”