আপনি এখন কি ‘মাইনাস ওয়ান’-এ: তোফায়েলকে রিজভী

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে তোফায়েল আহমদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ‘ওয়ান-ইলেভেনের’ সময় তার ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে কটাক্ষ করেছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 June 2018, 10:11 AM
Updated : 18 June 2018, 10:32 AM

বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যকে উদ্দেশ করে বলেছেন, “আপনি ও আপনার সাথে যারা ছিলেন সেই মাইনাস টু তত্ত্বের যারা প্রচারক, আপনারা কি এখনও মাইনাস টুতে আছেন? নাকি মাইনাস ওয়ান এ আছেন? এটা একটু খোলাশা করে জনগণকে জানাবেন কি?”

২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর দুই নেত্রী কারাবন্দি থাকা অবস্থায় তাদের রাজনীতি থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, যা ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত।

জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহসচিব রুহুল কবির রিজভী (ফাইল ছবি)

তখন ‘সংস্কারপন্থি’ নেতা হিসেবে আওয়ামী লীগের কর্মীদের কাছে পরিচিতি পাওয়া তোফায়েল আহমদ ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকারে স্থান না পেলেও পরে মন্ত্রিসভায় এসে এখন বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।

তোফায়েল রোববার বলেছিলেন, চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিতে বিএনপির দাবির পেছনে তাকে ‘বিদেশে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে’।

সোমবার নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তাকে কটাক্ষ করার পাশাপাশি রিজভী বলেন, “কাল্পনিক বানানো গল্পের চ্যাম্পিয়ন আওয়ামী নেতারা। জনাব বাণিজ্যমন্ত্রী, আপনি ভুলে গেছেন কারাগার থেকে চিকিৎসার নামে বিদেশে যাওয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য আপনার নেত্রীর।

“আমরা বলতে চাই, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এমন নেত্রী, যাকে জোর করে তখন দেশ থেকে পাঠানো যায়নি তার অনড় ও অনমীয়তার কারণে।”

চার মাসের বেশি কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা নিয়ে সরকার ‘দুরভিসন্ধিমূলক নীলনকশা’ করছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী।

তিনি বলেন, “আওয়ামী সরকারের দেশনেত্রীর চিকিৎসা নিয়ে পানি ঘোলা করার উদ্দেশ্যই হচ্ছে তাকে বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে নিঃশেষ করে দেওয়া।”

সরকার চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউ কিংবা সিএমইচে নিতে চাইলেও তিনি বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোথাও চিকিৎসা নিতে রাজি নন।

সরকারের রাজি না হওয়ার বিষয়টি তুলে রিজভী বলেন, “এখানে একগুয়েমী দুরভিসন্ধিমূলক এবং সুদূরপ্রসারী নীল নকশা সরকারের আছে।

“আমরা বলে দিতে চাই, সরকারের কোনও নীল নকশার কাছে অতীতেও দেশনেত্রী মাথা নত করেননি, উনি মাথানত করার নেত্রী নন।”

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে ‘তালবাহানা’ হলে পরিণতি সরকারকে বহন করা হবে বলে হুশিয়ার করেন রিজভী।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া কারাগারে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন-  আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন রিজভী।

তিনি বলেন, “অগণতান্ত্রিক সরকারের মিথ্যাবাদী গোয়েবলসের ভূমিকা পালন করছেন ওবায়দুল কাদের সাহেব বা ওবায়দুল কাদের সাহেবরা অর্থ্যাৎ সরকারের মন্ত্রীরা।

”আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা যখন সাবজেলে ছিলেন, তখন কীভাবে তার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা হয়েছিল, এটার উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবেন কি?”

খালেদাকে যে কারাগারে রাখা হয়েছে, তার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিয়েও অভিযোগ তোলেন রিজভী।

তিনি বলেন, “পৃথিবীর কোনও দেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কি এরকম পোড়ো পোড়ো বিধ্বস্ত স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে রাখে? দেশনেত্রীকে চিকিৎসা না দেয়ার জন্যই ওবায়দুল কাদের সাহেবরা নানা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।”

নোয়াখালীতে ঈদের দিন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদকে ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখার ঘটনায়ও সেখানকার বর্তমান সংসদ সদস্য ওবায়দুল কাদেরকে দায়ী করেন রিজভী।

তিনি বলেন, “ওবায়দুল কাদের সাহেবরা অবৈধ ক্ষমতার অহংকারে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছেন। এরা বিরোধী দলের স্বাভাবিক জীবনযাপন, সামাজিক অনুষ্ঠান, ধর্মীয় উৎসবেও বর্বরোচিত হস্তক্ষেপ করছে। ”

সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদেরকে ইঙ্গিত করে রিজভী বলেন, সারাদেশে সড়ক-মহাসড়কের ‘খানাখন্দের’ কারণেই ঈদের ছুটিতে ঘরমুখী মানুষজন সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা  পরিষদের সদস্য তৈমুর আলম খন্দকার, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুল করীম শাহিন, তাইফুল ইসলাম টিপু, সেলিমুজ্জামান সেলিম উপস্থিত ছিলেন।

আরও খবর-