কারাগারে খালেদার ঘরে ইঁদুর মেরেছে বিড়াল: ফখরুল

পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়াকে বন্দি রাখা নিয়ে সরকারের সমালোচনা করে আসা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ওই কারাগারে ইঁদুর, তেলাপোকা, ছারপোকার পাশাপাশি বিষধর বিছাও রয়েছে যাতে তাদের নেত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

সুমন মাহমুদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 June 2018, 05:58 PM
Updated : 17 June 2018, 06:14 PM

তিনি বলছেন, পরিত্যক্ত এই কারাগারে খালেদা জিয়াকে রাখাটা ‘সভ্য আচরণের মধ্যে পড়ে না’। রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে তার সঙ্গে ‘রাজনৈতিক আচরণ’ করা উচিত।

জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় সাজা হওয়ার পর থেকে চার মাসের বেশি পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের ওই কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া। সোয়া দুইশ বছরের পুরনো এই কারাগারের সব বন্দিকে দুই বছর আগে কেরানীগঞ্জের নতুন কারাগারে সরিয়ে নেওয়া হয়। সেখানে এখন একমাত্র বন্দি হিসেবে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণার পর কারাগারে জেল সুপারের কক্ষটিকে সংস্কারের পর ‘স্পেশাল জেল’ ঘোষণা করে সেখানেই প্রথম দিন রাখা হয় খালেদাকে। পরে দোতলার একটি কক্ষে স্থানান্তর করা হয় তাকে, যা আগে কারাগারে ‘ডে কেয়ার সেন্টার’ হিসেবে ব্যবহার হত।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা ঘোষণার পর বকশীবাজারের বিশেষ আদালত থেকে কারাগারের উদ্দেশে বের হন খালেদা জিয়া। ছবি: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে এসে বিএনপি নেতারা বলেছিলেন, কারাগারের স্যাঁতসেঁতে, নোংরা পরিবেশে ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তিনি।

এরমধ্যে ৫ জুন খালেদা জিয়া কিছুক্ষণের জন্য অচেতন হয়ে পড়লে তাদের উদ্বেগ আরও বাড়ে। দ্রুত ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির দাবি করে চিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন তারা।

রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে ওই দাবি পুনর্ব্যক্ত করে কারাগারের পরিবেশ নিয়ে কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “ঢাকার সেন্ট্রাল জেল সত্যিকার অর্থে সবচেয়ে খারাপ। এখানে এতো বড় বড় ইঁদুর দৌড়ায়, এতগুলো বেড়াল ওখানে যারা ইঁদুর ধরে। আপনারা শুনলে হতবাক হবেন যে, ম্যাডামের ঘরের মধ্যে ওই বেড়াল বড় ইঁদুর ধরেছে।

“তারপরে ম্যাডাম অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মানসিক দিক দিয়ে। উনি তো এসব দেখতে অভ্যস্ত নন। তেলাপোকা, ছারপোকা- এটা কমন ব্যাপার। আরও আছে বড় বড় বিছা।”

স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গত ৭ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে নেওয়া হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে

সরকারের প্রতি খালেদা জিয়ার বিষয়ে ‘রাজনৈতিক আচরণ করার’ আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আপনারা দেশনেত্রীর সঙ্গে এই আচরণ কেন করছেন? এটা তো সভ্য আচরণ নয়। এটা অসভ্য বর্বরদের আচরণ। উনি একজন রাজনৈতিক বন্দি, তার সঙ্গে রাজনৈতিক আচরণ করবেন।”

এ সময় ছয় বছর আগে নিজের কারাবাসের অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “আমি প্রথমবার যখন গেলাম ২০১২ সালে। আমার মনে আছে, এখানে দাদা (গয়েশ্বর চন্দ্র রায়) আছে। যে রুমে আমি ও দাদা ছিলাম, তার পাশের রুমে ছিলেন আন্দালিব পার্থ (বিজেপির চেয়ারম্যান) ও শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি।

“হঠাৎ রাত্রিবেলা চীৎকার করে উঠেছে পার্থ: ‘চাচা আমি তো আর বাঁচব না। কেন কী হয়েছে? এত বড় বিছা! ও যে সারারাত চৌকির উপর বসল, আর নামে না। এটা বাস্তবতার কথা বলছি। আপনারা দেখবেন পুরনো ইউরোপের ছবিতে যে চিত্র দেখা যায়, এখানে সেই অবস্থা।”

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল

মির্জা ফখরুল এ সময় ঈদের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, “বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সব সময় বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত দেখছেন। উনি প্রথম থেকেই সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য একে একে নির্বাচনের প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছেন, বিচার বিভাগের প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছেন, একে একে প্রশাসনের প্রাতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছেন।

“এসব করে দিয়ে উনার গণতন্ত্র হচ্ছে- উনি একা এবং তার পার্টি। এছাড়া আর কেউ নেই। সেটাই হচ্ছে তার গণতন্ত্র।”

এই গণতন্ত্র কখনোই ‘টিকে থাকতে পারে না, টিকবে না’ বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।