খালেদাকে ইউনাইটেডে নিন, খরচ আমরা দেব: বিএনপি

ইউনাইটেড হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সব ব্যয়ভার বহনের ঘোষণা দিয়ে তাকে বেসরকারি হাসপাতালটিতে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 June 2018, 09:44 AM
Updated : 12 June 2018, 09:45 AM

কারাবন্দি ব্যক্তির বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসায় জটিলতা নিয়ে কারা মহাপরিদর্শকের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয় দলটি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমরা দেশনেত্রীর উপযুক্ত চিকিৎসা চাই বলে আপনাদের মাধ্যমে সরকারকে জানাতে চাই যে, প্রয়োজনে চিকিৎসার সমুদয় ব্যয় আমাদের দল বহন করবে।

“আমরা দাবি করছি, কালবিলম্ব না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণের পরামর্শ অনুযায়ী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হোক।”

কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসনকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিতে বিএনপির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কারা মহাপরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেছিলেন, বন্দিকে বেসরকারি হাসপাতালে নিতে সরকারের অনুমোদন লাগবে। পাশাপাশি চিকিৎসার ব্যয় নিয়েও জটিলতা রয়েছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার সরকারের কাছে একটি আবেদন করা হয়। তবে সেই আবেদন পেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, বিএসএমএমইউতে না হলে সিএমএইচে নেওয়া যেতে পারে বিএনপি চেয়ারপারসনকে।

খালেদার চিকিৎসা সংক্রান্ত আবেদন নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিএনপির প্রতিনিধি দল যাওয়ার পর, কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিএমএইচে নেওয়ার প্রস্তাব আসার আগে নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন খন্দকার মোশাররফসহ বিএনপি নেতারা।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, “দেশনেত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে সচিবালয়ে গেছেন। তার চিকিৎসার সমুদয় খরচ পরিবারের পক্ষ থেকে বহন করবে বলে সেই আবেদন নিয়ে তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গেছেন। আর আমরা কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বলছি, আমাদের দলের চেয়ারপারসনের চিকিৎসার সকল খরচ দল বহন করবে।”

খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়ার আবেদন নিয়ে সচিবালয়ে তার পরিবারের পক্ষে বিএনপির প্রতিনিধি দল

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার অতীত নজির তুলে ধরে বলেন, “তথাকথিত ১/১১ সরকারের সময়েও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছিলো।

“অথচ তিন বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী, দেশের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ও সাবেক সেনাবাহিনীর প্রধানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারি অনুমোদন ও অর্থ সংস্থানের ব্যাপারে এতদিনের সিদ্ধান্ত না হওয়া রহস্যজনক ও নিন্দনীয়।”

তিনি বলেন, “এখনও অনেক বন্দি বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ১/১১ সরকারের সময়ে শুধু শেখ হাসিনা নন, আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল সাহেব বেসরকারি প্রাইভেট হাসপাতালে এবং আরও অন্যান্যদের স্কয়ার, এ্যাপেলো হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।”

সরকারের আচরণে দেশবাসী ক্ষুব্ধ হচ্ছে বলে দাবি করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

খালেদাকে ইউনাইটেডে নেওয়ার দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “দেশনেত্রী যে যে ধরনের অসুস্থতায় ভুগছেন এবং সম্প্রতি যে ঘটনা ঘটেছে। তার উপযুক্ত চিকিৎসা দিতে হলে এবং তার জন্য যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়, সেই আধুনিক যন্ত্রপাতি ইউনাইটেড হাসপাতালে আছে বলেই আমরা এই হাসপাতালে আমাদের নেত্রীকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়ার দাবি করছি।”

অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের বক্তব্যের সমালোচনা করেছে বিএনপি। 

খন্দকার মোশাররফ বলেন, “অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন যে ৯ জুন ডাক্তারগণ বেগম খালেদা জিয়ার অজ্ঞান হওয়ার কথা বলে নাকি আদালতের সহানুভূতি লাভের চেষ্টা করেছেন!

“তিনি অবশ্যই জানেন যে, ডাক্তারদের সাক্ষাতের দিন-ক্ষণ স্থির করে সরকার। তারা ৯ তারিখে সাক্ষাতের দিন স্থির করেছে বলেই ওই দিন ডাক্তারগণ প্রেস ব্রিফিং করেছেন। মামলার দিন-তারিখ সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষের জানার কথা, ডাক্তারদের নয়।”

“আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে মরিয়া এই দলবাজ অ্যাটর্নি জেনারেল একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অসুস্থতা নিয়েও অশোভন ও অযৌক্তিক মন্তব্য করায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই,” বলেন মোশাররফ।

স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গত এপ্রিলে বিএসএমএমইউতে খালেদা জিয়া (ফাইল ছবি)

দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে গত মার্চ মাস থেকে কারাগারে থাকা খালেদা জিয়া আপিল করে ওই মামলায় জামিন পেলেও আরও মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোয় মুক্তি পাচ্ছেন না তিনি। ওই সময় মামলায় তার জামিনের আবেদন আদালতে বিবেচনাধীন।

৭৩ বছর বয়সী খালেদা গত ৫ জুন কারাগারে ‘মাথা ঘুরে’ পড়ে যাওয়ার পর কারা কর্তৃপক্ষ ও সরকার তা চেপে গেল কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মোশাররফ।

তিনি বলেন, “সরকারের মন্ত্রীবর্গ, অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইজি প্রিজন্স প্রায় ১ সপ্তাহ পরে ১১ জুন তারিখে মুখ খুললেন কেন? কেন এতদিন ঘটনাটি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করা হল? কেন তার হঠাৎ  বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধানের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি?”

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলন থেকে মঙ্গলবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শত নাগরিক কমিটির মৌন অবস্থান কর্মসূচি পুলিশের পণ্ড করে দেওয়ার নিন্দা জানানো হয়।

উত্তরার বাসা থেকে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তুলে নেওয়ার নিন্দা জানান খন্দকার মোশাররফ।