চিকিৎসার জন্য খালেদাকে লন্ডনে পাঠানোর আহ্বান বি চৌধুরীর

কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন পাঠাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিকল্পধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 June 2018, 05:44 PM
Updated : 10 June 2018, 07:46 PM

খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবরে উদ্বেগ জানিয়ে রোববার এক ইফতার মাহফিলে তিনি বলেন, “পত্রিকায় দেখলাম বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা বলেছেন, তিনি ৭ মিনিট অজ্ঞান ছিলেন। এই কথা সঠিক হয়ে থাকলে তার নিশ্চয়ই টিআইএ হয়েছিল।

“অর্থাৎ সাময়িকভাবে তার মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল কমে গিয়েছিল। এই ধরনের রোগীর ভবিষ্যতে ব্রেইন স্ট্রোক বা প্যারালাইসিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই পর্যায়ে সর্বোত্তম নিউরোলজিক্যাল সেন্টারে তার চিকিৎসা হওয়া উচিৎ। প্রয়োজন হলে সর্বোত্তম চিকিৎসার জন্য তাকে পৃথিবীর এই ধরনের রোগের জন্য শ্রেষ্ঠতম নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো উচিৎ।”

সে জায়গা থেকে বিএনপি নেত্রীর চিকিৎসার জন্য লন্ডনের দুটি খ্যাতনামা হাসপাতালের নাম বলেছেন চিকিৎসক বি চৌধুরী। লন্ডনের ইউসিএল ইনস্টিটিউট অব নিউরোলোজি অথবা হ্যামার স্মিথ হাসপাতালেই তার চিকিৎসা হওয়া উচিত বলে মনে করছেন মেডিসিনের এই অধ্যাপক।

বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের সমালোচনায় উচ্চকণ্ঠ বি চৌধুরী দ্রুত খালেদা জিয়ার সুষ্ঠু চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন। অন্য বিবেচনা বাদ দিয়ে শুধু রাজনৈতিক ও সামাজিক বিবেচনায় তার সঠিক চিকিৎসা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।”

খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানও সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০৮ সালে জামিনে মুক্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডন গিয়েছিলেন। তখন থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সেখানেই বসবাস করছেন তিনি।

খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর পদাধিকার বলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য বর্তমানে লন্ডনে আছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

চার মাসের বেশি কারাবন্দি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে এসে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা বলেছেন, গত ৫ জুন বিএনপি চেয়ারপারসনের ‘মাইল্ড স্ট্রোক’ হয়েছিল বলে তারা ধারণা করছেন।

স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গত এপ্রিলের প্রথম দিকে কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে আনা হয়েছিল খালেদা জিয়াকে

তার চিকিৎসক এফ এম সিদ্দিকী বলেন, “দুপুর বেলা হঠাৎ করে দাঁড়ানো অবস্থা থেকে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি এবং ৫/৭ মিনিট আনকনসাস ছিলেন। উনি মনেই করতে পারছেন না, কী ঘটেছিল? তাকে, তার এটেনডেন্ট যে মেয়ে ছিল, তারা অনেক কষ্ট করে বসিয়েছে।

“এখন আমরা চেক করে যেটা দেখেছি, এটাকে বলে টিআইএ (ট্রানজিয়েন্ট ইসকেমিক অ্যাটাক)। একটা মাইল্ড ফর্মে স্ট্রোকের মতো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।”  

সরকারের একাধিক মন্ত্রীও ওই দিন খালেদা জিয়ার কিছু সময়ের জন্য ‘অজ্ঞান’ হয়ে পড়ার কথা জানিয়েছেন। সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘স্ট্রোক’ নয়, রোজা রাখায় সুগার কমে তিনি সাময়িকভাবে জ্ঞান হারিয়েছিলেন বলে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে কারা কর্মকর্তারা তাকে জানিয়েছেন।

খালেদা জিয়ার কী হয়েছিল তা জানতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হবে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন।

আইনমন্ত্রী বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে সরকার ‘কনসার্নড’।

আর বিএসএমএমইউতে নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এখানে বড়-বড় চিকিৎসক ও গবেষকরা রয়েছেন। আর উনার ব্যক্তিগত চিকিৎসকেরা তো রয়েছেনই, সুতরাং এখানেই চিকিৎসা হবে।”

তবে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসা বিএনপি নেতারা তাদের নেত্রীকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার দাবি জানিয়ে আসছেন। খালেদার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরাও কারা কর্তৃপক্ষের কাছে সেই সুপারিশ করেছেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজার রায়ের পর গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের কারাগারে বন্দি আছেন খালেদা জিয়া।

রাজধানীর শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ জন দলের (বিজেডি) ইফতার মাহফিলে বক্তব্য দেন বি চৌধুরী।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে একাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এখন জনগণের মৌলিক দাবি। এর জন্য নির্বাচনের অন্তত ১০০ দিন আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে, যাতে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে। তার আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অথবা সব দলের সর্ব্সম্মতিক্রমে স্বীকৃত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”

১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বি চৌধুরী বলেন, “আমি যখন সংসদে উপনেতা ছিলাম সে সময় ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর এক রাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ করেছিলাম। তারপর মাত্র চার মাসের মধ্যে নতুন নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করেছিলাম।

“সুতরাং আপনারা (আওয়ামী লীগ) কেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা জাতীয় সরকার আগামী এক মাসের মধ্যে করতে পারবেন না? সত্যিকারের নির্বাচন করতে চাইলে এর কোনো বিকল্প নেই।”

আওয়ামী লীগ না চাইলেও দেশের মানুষ তাদের ‘ভোটের অধিকার’ আদায় করে ছাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সভায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “দলমত নির্বিশেষে এই অবৈধ সরকারকে হটিয়ে জনগণের শাসন কায়েম করার জন্য আমাদের সকলকে লড়াইয়ের জন্য মাঠে নামতে হবে।

“এজন্য আমি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই।”

বিজেডির সভাপতি এসএম শাজাহানের সভাপতিত্বে ইফতারে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।