চার মাস ধরে কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে দেখতে শনিবার বিকালে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে যান তার ব্যক্তিগত চার চিকিৎসক।
দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় পর বেরিয়ে মেডিসিনের অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী তাদের পর্যবেক্ষণ সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা তার ‘মাইল্ড স্ট্রোকের’ কথা বললেও এ বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এফ এম সিদ্দিকী বলেন, “গত ৫ জুন দুপুর বেলা হঠাৎ করে দাঁড়ানো অবস্থা থেকে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি এবং ৫/৭ মিনিট আনকনসাস ছিলেন। উনি মনেই করতে পারছেন না, কী ঘটেছিল? তাকে, তার এটেনডেন্ট যে মেয়ে ছিল, তারা অনেক কষ্ট করে বসিয়েছে।
“এখন আমরা চেক করে যেটা দেখেছি, এটাকে বলে টিআইএ (ট্রানজিয়েন্ট ইসকেমিক অ্যাটাক)। একটা মাইল্ড ফর্মে স্ট্রোকের মতো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।”
এই বিষয়টি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়াকে কারাগারের বাইরে বিশেষায়িত একটি হাসপাতালে ভর্তি করতে সুপারিশ করেছেন তার ব্যক্তিগত এই চিকিৎসকরা।
অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকীর সঙ্গে ছিলেন নিউরো মেডিসিনের অধ্যাপক সৈয়দ ওয়াহিদুর রহমান, চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এবং কার্ডিওলজিস্ট ডা. মোহাম্মদ মামুন।
খালেদা জিয়াকে কেমন দেখেছেন- জানতে চাইলে ডা. এম এফ সিদ্দিকী বলেন, তার কথায় কিছুটা জড়তা থাকলেও ভাব বিনিময় করতে পারছেন।
“উনি এখন মাঝে মাঝে ব্যালেন্স রাখতে পারেন না। উনি হাঁটলে একবার এদিকে, আরেকবার ওদিকে মনে হচ্ছে যে উনি পড়ে যান। পড়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।”
খালেদা জিয়ার চিকিৎসকদের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিনকে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।
পরে জ্যেষ্ঠ জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবিরকে কয়েকবার ফোন করলে তিনি সাড়া না দেওয়ায় এসএমএস পাঠানো হয়।
ফিরতি এসএমএসে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ বিষয়ে কথা বলতে পারবেন না।
“দুঃখিত।”
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য পাঁচ দফা আবেদন জানানোর পর এই প্রথম অনুমতি পেলেন।
শুক্রবার রাতে তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, “নিকট আত্মীয়রা দেশনেত্রীর সাথে সাক্ষাৎ শেষে তার (খালেদা জিয়া) সম্পর্কে যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা হৃদয় বিদারক।
“তারা বলেছেন, গত ৫ জুন দেশনেত্রী দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন, তিন সপ্তাহ যাবত তিনি ভীষণ জ্বরে ভুগছেন, যা কোনো ক্রমেই থামছে না।”
অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী বলেন, “যেটা সবচেয়ে বিপজ্জনক, সেটা হচ্ছে- টিআইএ যদি কারও হয়, তাহলে সেটা ইন্ডিকেট করে যে সামনে তার একটা বড় ধরনের স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।”
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা নিয়ে চার পৃষ্ঠার একটি সুপারিশমালা কারা কর্তৃপক্ষকে দিয়েছেন বলে জানান অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী।
“আমরা ম্যাডামের ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা সব কিছু পরীক্ষা করে আমরা আমাদের সমস্ত মতামত ও সমস্ত অবজারভেশন পূর্ণাঙ্গভাবে ওখানে লিখে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়ে এসেছি। আমরা চার পৃষ্ঠার একটা মেডিকেল রিপোর্ট দিয়েছি, যেখানে সম্পূর্ণভাবে উল্লেখ করা আছে, কী ঘটেছে, কী হচ্ছে এবং সামনে তার কী টিট্রমেন্ট করা উচিৎ।”
মেডিসিনের এই অধ্যাপক বলেন, “আমরা মনে করি, তার কতগুলো বিশেষ ধরনের পরীক্ষা করা দরকার। সেজন্য আমরা বলেছি, এসব সুবিধা রয়েছে ইউনাইটেড হাসপাতালে। উনাকে যদি খুব দ্রুত ভর্তি করানোর জন্য আমরা একটা সাজেশন দিয়ে এসেছি।”
বিএনপি আগে থেকেই ইউনাইটেড হাসপাতালে খালেদাকে ভর্তির দাবি জানিয়ে আসছে। নেত্রীর সুচিকিৎসার দাবিতে রোববার জেলা-মহানগরে ও ঢাকায় থানায় থানায় প্রতিবাদ কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে দলটি।
চার মাস ধরে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন ‘গুরুতর’ অসুস্থ হলেও সরকার তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করছে না বলে তার দলের নেতাদের অভিযোগ।
গত মার্চের শেষে খালেদা অসুস্থ হয়ে পড়লে বিএনপির উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে তার চিকিৎসায় একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে সরকার।
চার সদস্যের ওই বোর্ডের সদস্যরা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর অসুস্থতা ‘গুরুতর নয়’।
মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নানা পরীক্ষা করা হয়। এক্সরে করানোর জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনকে গত এপ্রিলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালেও নেওয়া হয়েছিল।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চিকিৎসকদের পরামর্শে খালেদা জিয়াকে প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসাই দেওয়া হচ্ছে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজার রায়ের পর থেকে খালেদা জিয়া ওই কারাগারে বন্দি।